বাঙালীর খাদ্য সংস্কৃতি যে কতটা সমৃদ্ধ তা বলাই বাহুল্য। তার উপর ভিসা আর পাসপোর্ট ছাড়াই যেখানে নানা খাদ্যের সম্ভারে ইচ্ছে করলেই রসনা তৃপ্ত করা সম্ভব সেখানে ওপার বাংলার হেঁশেলের সম্ভারের সন্ধান পাওয়া এমন কি অসাধ্য? তার উপর তা যদি হয় শীতকাল স্পেশাল পিঠে, তাহলে তো পঞ্চেন্দ্রিয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ ইন্দ্রিয় খানিক বেশী সরব হয়ে উঠবে তাতে আর সন্দেহ থাকে না। আজ এমনই এক বিশেষ পিঠের কথা বলব, যা সিলেট অঞ্চলের ঐতিহ্য।
বলছি চোঙ্গা পিঠের কথা। চোঙ্গা অর্থাৎ বাঁশের চোঙ্গা এই পিঠের মূল উপাদান। কিন্তু বাঁশ? তবে শুধু বাঁশ নয় আছে আরো কিছু। ভাল গোবিন্দভোগ চাল বেশ কিছুক্ষণ ভিজিয়ে, স্বাদ অনুযায়ী অর্থাৎ মিষ্টি পিঠে খেতে চাইলে দুধ, চিনি, নারিকেল, কনডেন্স মিল্ক, চালের গুড়ো, কাজু বাদাম, পেস্তা বাটা আর ঝাল হলে লঙ্কাবাটা, নানাবিধ মাছ সর্ষে বাটা সহযোগে বানানো মিশ্রণ কলাপাতায় লম্বা করে অর্থাৎ বাঁশের চোঙ্গার আকারে মুড়িয়ে দেওয়া হয়।
এরপর কলাপাতায় মোড়ানো মিশ্রণ বাঁশের চোঙ্গের ভিতর ভরে মুখটা কলাপাতা দিয়ে শক্ত করে বন্ধ করে চোঙ্গাগুলো আগুন দিয়ে ভাল ভাবে পোড়ালেই তৈরী চোঙ্গা পিঠে। শুধু ওই চোঙ্গা থেকে বার করে প্লেটে যাওয়ার অপেক্ষা।
সিলেটে এই পিঠে খাবার এক বিশেষ রীতি আছে। এখানে হাল্কা মশলা দিয়ে মাছভাজাকে স্থানীয় ভাষায় বলে ‘মাছ বিরান’। এই মাছ বিরান দিয়ে চোঙ্গা পিঠে খাওয়া ছিল এক কালে সিলেটের ঐতিহ্য। কিন্তু স্বাদের তারতম্য, সময়ের স্বল্পতা এবং সর্বোপরি এক্সপেরিমেন্ট করতেই একটু স্বাদে পরিবর্তন আসছে, তবে পদ্ধতি কিন্তু একই আছে। পদ্ধতি তো জানা গেল, চাইলে আপনিও এই স্বাদের অংশীদার হতেই পারেন। শীতের আমেজে নেহাত মন্দ লাগবে না।