আজ এমন এক মিষ্টির কথা বলবো যা এককথায় জগন্নাথ দেবের মন্দিরে ঢোকার ছাড়পত্র অর্থাৎ এই মিষ্টি লক্ষ্মী দেবীকে না দিলে স্বয়ং জগন্নাথদেবও শ্রী মন্দির অর্থাৎ পুরীর মন্দিরে প্রবেশাধিকার পান না। আরো তাৎপর্যপূর্ণ হল এক বিশেষ দিনেই মা লক্ষ্মীকে উৎসর্গ করা হয় এই মিষ্টি, বলব সেই কথাই।
জগন্নাথদেব গুন্ডিচা থেকে যেদিন শ্রীমন্দিরে ফিরে আসেন সেটি বহুডা যাত্রা বা উল্টো রথ নামেই পরিচিত। রথ যাত্রার সময় জগন্নাথ ৮দিনের জন্য গুন্ডিচা মন্দিরে (মাসির বাড়ি) যান সাথে থাকেন বলদেব ও সুভদ্রা। কিন্তু লক্ষ্মীদেবীকে না নিয়ে যাওয়ায় তিনি অভিমান করেন। তাই গুন্ডিচা থেকে ফিরে এলে বলদেব ও সুভদ্রা মা মন্দিরে প্রবেশ করলে মন্দিরের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় নিয়মানুসারেই।
বলা হয় মা লক্ষ্মী সেটি বন্ধ করেন এবং যতক্ষণ না জগন্নাথদেব তার মানভঞ্জন করেন ততক্ষন রথ থেকে তাঁকে নামানো হয় না। এই মান অভিমান পর্বটি হলো নীলাদ্রি বীজে আর এই মানভঞ্জনের জন্য স্বয়ং জগন্নাথদেব যে মিষ্টি দেন লক্ষ্মীদেবীকে সেটি নীলাদ্রি বীজে রসগোল্লা। বছরে মাত্র একটি দিন এই মিষ্টি তৈরী হয় পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে। সেটি লক্ষ্মীদেবীকে উৎসর্গ করার পর মন্দিরের দরজা খুলে জগন্নাথ স্বামী ভিতরে মূল বেদিতে আবার অধিষ্ঠিত হন। এককথায় জগন্নাথ দেবের মন্দিরে ঢোকার ছাড়পত্র এই মিষ্টি। প্রসঙ্গত বলা ভালো যে, ২০১৫ সাল থেকে এই নীলাদ্রি বীজের দিনটিকে 'রসগোল্লা দিবস' হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু সাধারণ রসগোল্লার সাথে এই রসগোল্লার পার্থক্য আছে। একটু লালচে ধরণের হয় রসগোল্লা আর বাকি রহস্য রইলো রেসিপির মধ্যে।
উপকরণ: ১লিটার দুধ, ২ টো এলাচ, ২ টেবিল চামচ টক দই, ১ টেবিল চামচ সুজি, ১ কাপ চিনি। এই রসগোল্লায় কোনো ময়দা ব্যবহার হয় না।
প্রণালী:গ্যাস ওভেনে হাই ফ্লেমে দুধ ফুটে গেলে গ্যাস অফ করে ২ টেবিল চামচ দইয়ের সাথে ২ টেবিল চামচ জল মিশিয়ে আসতে আসতে দুধে মিশিয়ে ছানা কাটতে হবে (পুরীর শ্রী মন্দিরেও এই ভাবেই ছানা কাটা হয়, এতে কোনো লেবুর গন্ধ থাকে না)। এবার একটা পাত্রে ছাঁকনি দিয়ে তার উপর সুতির কাপড় দিয়ে জল ছেঁকে নিয়ে খানিক্ষন কাপড় সমেত ওই ছানা ঝুলিয়ে রাখলেই জল ঝরে যাবে। হাত দিয়ে আলাদা করে চেপে জল বার করতে গেলে ছানা শক্ত হয়ে যাবে। তাই প্রয়োজন নেই।
এবার ওই ছানা মিনিট পাঁচেক ভালো করে মিহি করে মেখে তারপর সুজি দিয়ে আবারো মিহি করে মেখে ছানার বল বানাতে হবে, তবে সেটার গায়ে যেন কোনো ক্র্যাক না হয়। এবার হাই ফ্লেমে ১ কাপ চিনি দিয়ে একটু লালচে হলেই ৪কাপ জল দিয়ে ফোটাতে হবে। রস পাতলা হলেই ছানার বলগুলো দিয়ে ৩০মিনিট ফোটাতে হবে।
যদি রস ঘন হয়ে যায় তাহলে একটু গরম জল রসে দিয়ে পাতলা করতে হবে। এবার হল কিনা দেখতে একটা পাত্রে জল নিয়ে একটা রসগোল্লা ফেলে তা যদি ভাসতে থাকে তাহলে আরো ফোটানোর প্রয়োজন, আর ডুবে গেলে গ্যাস থেকে নামিয়ে ৪-৫ ঘন্টার রসে ভেজালেই তৈরী লালচে নীলাদ্রি বীজে রসগোল্লা, চাইলে আপনিও বানিয়ে তুলসী পাতা দিয়ে ভোগ নিবেদন করতে পারেন। ওই একদিন ছাড়া এই রসগোল্লার দেখা মিলবে না। তাই আপনাকে তার সাক্ষাৎ পেতে হলে বানাতেই হবে, মা লক্ষ্মীর প্রিয় মিষ্টি বলে কথা, তাই স্বাদ হবে জম্পেশ।