মনোহরায় লুকিয়ে লাড্ডু

দুর্গাপুর থেকে ২৩ কিমি এবং মল্লভূম অর্থাৎ বাঁকুড়া থেকে ২১ কিমি দূরে শালি নদীর তীরে অবস্থিত একটি ছোট্ট জনপদ বেলিয়াতোড়। কথিত আছে যে বালিতট বা বেলেতট থেকে বেলেতোড় বা বেলিয়াতোড় কথাটির জন্ম। আজ সন্ধান দেব মল্লভূমের এক অতি প্রবীণ সন্দেশের। বয়স তার ২০০ বছরের খানিক বেশি।

Mecha-Sandesh1

সে কে? জানাব। ইনি হলেন বিখ্যাত মেচ্যা বা মেচা সন্দেশ। এই মেচা ছানার রাজ্যে রীতিমতো এক ব্যতিক্রম। কারণ এখানে ছানা নয় ব্যবহার হয় ছাতু বা বেসন। সে প্রসঙ্গে আসছি পরে। তবে আগে বলি এই মিষ্টির জন্মের ইতিহাস। জনশ্রুতি আছে, বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজারা ছিলেন মিষ্টি বিলাসী।

Mecha-Sandesh2

সপ্তদশ শতাব্দীর আশেপাশে বাংলার ওই অঞ্চলে দুধের ঘাটতি দেখা দেয়। কিন্তু মল্ল রাজাদের পক্ষে মিষ্টি খাবার ছাড়া থাকা ছিল অসম্ভব। উপায় না দেখে রন্ধন শিল্পী গুঁড়ো ছোলা, ময়দা, গুড় দিয়ে প্রস্তুত করেন এই ম্যাচা বা মেচা সন্দেশ। তবে আকর্ষণীয় করতে তাকে চিনির রসের মোড়োক দেন। অনেকটা মনোহরা মনে হতে পারে। কিন্তু এটির ভিতরে অনুপান এক্কেবারে আলাদা, তাই স্বাদ ভিন্ন।

Mecha-Sandesh3

অপর একটি মতানুসারে ম্যাচার স্রষ্টা জনৈক মিষ্টান্ন প্রস্তুতকারক গিরিশচন্দ্র মোদক। বর্ষায় বাবা ধর্মদাসের মেলা বসত। সেই মেলায় গুড়ের লাড্ডু বিক্রি করতেন গিরিশচন্দ্র মোদক। কিন্তু আর্দ্র আবহাওয়ায় গুড়ের পাক নষ্ট হয়ে যেত। সেই সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে গিরিশচন্দ্র নতুন একটি মিষ্টি উদ্ভাবন করেন, যা হল ম্যাচা।

Mecha-Sandesh4

ম্যাচা সন্দেশ তৈরির প্রক্রিয়াটিও অনন্য। প্রথমে ছোলা গুঁড়ো করে বেসন তৈরি হয় এবং লবণ যোগ না করে তেলে ভেজে এর থেকে তৈরি হয় গাঠিয়া। এই বেসন গাঠিয়াগুলি পরে গুঁড়ো করে ক্ষীরের পাক দিয়ে মিশ্রণকে ঠান্ডা করে দেশি ঘি এবং এলাচ যোগ করে লাড্ডুর আকার দেওয়া হয়।

এরপরে এগুলি চিনির রসে ডুবিয়ে ঠান্ডা করে শাল পাতায় দেওয়া হয়। আজও প্রতিটি সন্দেশের দাম ৭ টাকা। দেখতে মনোহরার মতো হলেও মুখে দিলেই মিলবে একটু অন্য স্বাদ, বলা যায় লাড্ডুর এক ভিন্ন রূপ। তবে মল্লভূমের বিশেষ ঐতিহ্য আজও নিজের সাবেকি সত্ত্বা বজায় রেখে চলেছে। সময় পাল্টেছে, কিন্তু বিক্রির হার কমেনি। মনোহরা ভেবে ভুল করলেও খুব একটা ঠকবেন না, স্বাদ নেহাত মন্দ নয়।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...