মিষ্টি তো খেয়েছেন অনেক আবার নামও শুনেছেন ঢের। কিন্তু আজ বলব কুণ্ডলিকার কথা যার জন্ম কিন্তু বিদেশে। এদেশের সদস্য না হলেও দৈনন্দিন জীবনে রসনার পরিতৃপ্তিতে এর জুড়ি মেলা ভার। ভাবছেন তো সে কে! বলব তার কথা।
কুণ্ডলিকা শুনে অচেনা লাগলেও জিলিপি তো অচেনা নয়। আজকের বহুল পরিচিত এই জিলিপি কুণ্ডলিকা নামেই পরিচিত ছিল। নাম বৃত্তান্তে যাওয়ার আগে বলি ছুটির দিনের বিশেষ আকর্ষণ গরম রসে স্নাত এই জিলিপির জন্ম কিন্তু সুদূর মিশরে। অন্তত ত্রয়োদশ শতাব্দীর মহম্মদ-বিন-হাসান-আল-বাগদাদীর সর্বাধিক পুরনো লিখিত তথ্যপূর্ণ রান্নার বই এমনটাই জানান দেয়।
মিশরবাসীরা রমজানের সময় এই রসসিক্ত জেলেবিয়া (জিলিপি) গরীব-মিসকিনদের বিতরণ করতো। মধ্যযুগে তুর্কিদের হাত ধরে ভারতে আসে এই খাবারটি, তবে নাম হয় জালেবি। পঞ্চদশ শতকের ভারতে জিলিপিকে বলা হত ‘কুন্ডলিকা’। সংস্কৃত গ্রন্থ গুন্যগুনবধিনীতে জিলিপি প্রস্তুত করার জন্য যে উপাদানের তালিকা পাওয়া যায় তার সাথে আধুনিক জিলিপি যথেষ্ট মিল রয়েছে। সুতরাং জিলিপির বয়স নিয়ে বিস্ময় থাকলেও প্রশ্ন থাকতেই পারেনা।
যাইহোক, বিদেশী হলেও ভারতের মেলবন্ধনের ধারা মেনেই জিলিপির প্যাঁচালো রসে মোহগ্রস্ত হয়ে ওঠে আপামর ভারতবাসী (অবিভক্ত)। তারপর ভারত ভাগের পর বাংলাদেশ, পাকিস্তানে তার প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে। তবে সাউথআফ্রিকা, ফ্রান্স,মিশর, সুদান, এমনকি রাশিয়াতেও এর জনপ্রিয়তা প্রবল। আজও রসনার পরিতৃপ্তি নিবারক সহজলভ্য এই কুণ্ডলিকার প্যাঁচে বঙ্গবাসী মজলেও তার ঐতিহাসিক মূল্য নেহাত কম নয়।