আজ আলাপ হবে এমন এক পিঠের সাথে যে কিনা নতুন বৌ এর রান্নার দক্ষতা যাচাইয়ের মাপকাঠি। কথিত আছে, এই পিঠে বানাতে সক্ষম হলেই রান্নাঘরের দায়িত্ব তার, এমন ধারণা পোষণ করা হয় আজও। নিঃসন্দেহে ইনিও পিঠে পরিবারের প্রবীণ সদস্য। ঢাকার বিক্রমপুরের পিঠের সাম্রাজ্যের ঐতিহ্য সে। তবে দেখে বিলিতি কেক ভাববেন না, দেখতে খানিক তেমন হলেও খেতে এক্কেবারে আলাদা। কে সে? কেমন খেতে? তার কথাই বলব আজ।
বলছি বিবিখানা পিঠের কথা। যদিও ‘নবাবী পিঠে’ নামেও তার পরিচিতি আছে। কিন্তু কি এমন আছে এই বিবিখানায়? সেই কথাই বলি।
কাঠ কয়লার উনুনে বানানো এই পিঠের এক বিশেষত্ব স্মোকি ফ্লেভার আর সেটাই বাড়তি স্বাদ আনে। যদিও এখন উনুন পাওয়াটা বেশ কষ্টকর, গ্রামের দিকে এখনও খুঁজলে পাওয়া যাবে, তবে এখন মাইক্রোওভেন ও গ্যাস ওভেনেই তৈরী হয় এই নবাবী পিঠে বিবিখানা। এবার বলি কী কী লাগে আর তার প্রণালী।
লাগবে ২টি ডিম, দেড় কাপ চালের গুঁড়ো, আধা কাপ ময়দা, এক চা চামচ বেকিং পাউডার, এক চিমটে নুন, সাড়ে তিন টেবিল চামচ চিনি, চার টেবিল চামচ ঘি, আধা কাপ নলেন গুড় বা খেজুর গুড়, আধা কাপ গুঁড়ো দুধ + এক কাপ ঘন দুধ, এক কাপ নারকেল কোরা। এই পিঠে চালের গুঁড়ো দিয়েই বানানোর কথা, কিন্তু যাতে ২-৩ দিন নরম থাকে তাই ময়দা খুব প্রয়োজন।
প্রণালী: প্রথমে একটা পাত্রে ডিম, চিনি, খেজুর গুড়, নুন, ঘি, নারকেল আর দুধ দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। এবার আস্তে আস্তে ময়দা ও চালের গুঁড়ো, বেকিং সোডা দিয়ে সেই মিশ্রণ ঘন করে তৈরী করে আর একটা ঢাকনা দেওয়া বাটিতে ঘি গ্রিস করে তার মধ্যেই পিঠের মিশ্রণ ঢেলে দিয়ে পাত্রের মুখ বন্ধ করে দিতে হবে।
এবার ননস্টিক একটু বড় কড়াই (ঢাকনা দেওয়া যায় এমন ) বা প্রেসার কুকারে (হুইসেল আর গ্যাস্কেট ছাড়া) একটা কাপড় দিয়ে তার উপর স্ট্যান্ড বসিয়ে এর উপর ওই পিঠের মিশ্রনের বাটি বসিয়ে বেশ খানিকটা জল দিয়ে কড়াই বা প্রেসার কুকারের মুখে ঢাকা দিতে হবে (প্রয়োজনে জল কমে গেলে আবার জল দিতে হবে)।
এবার ধিমে আঁচে ৫০ মিনিট পর একটা টুথপিক দিয়ে দেখতে হবে ভিতর কাঁচা আছে কিনা, না থাকলে তৈরী। তবে এই সময়ের বিষয়টি পাত্রের সাইজের উপর নির্ভর করবে। আর যদি মাইক্রো ওভেনে করতে হয় তাহলে মেশিন প্রি-হিট করে ১৬০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডে ৫৫ মিনিটে ধরে করলে তৈরী এই পিঠে। যদিও ছোট ছোট মোল্ডে এই মিশ্রণ ঢেলে কাপ কেকের সেপ দিতেই পারেন, আর ঠান্ডা হলে নারকেল কোরা দিয়ে টপিং করে দিলেই রেডি।
এবার নরম এই পিঠে মুখে দিলেই মিলবে এক অদ্ভুত অবর্ণনীয় স্বাদ। বাংলাদেশে জামাই বরণ, বধূ বরণের এক গুরুত্বপূর্ণ মিষ্টি এই পিঠে, শীতকাল ছাড়াও পাটালি স্টকে থাকলে সারা বছরই বানানো যায় এই পিঠে। তবে শীতকালে বাংলাদেশের হেঁশেল জমাতে বিবিখানার জুড়ি মেলা ভার। সেই স্বাদ প্রত্যক্ষ করতে হলে সময় করে বানাতে হবে এই নবাবী বিবিখানা পিঠে। আপাতত বিবিখানির বিবিয়ানা অনলাইনের হাতের বাইরে, তাই স্বাদের সাথে সাক্ষাৎ করতে হলে একটু কষ্ট না করলে চলে!