বয়স ১৫৯, কিন্তু আজও তার উপস্থিতি বড্ড প্রিয়, এমনকি এই বয়সেও তার বিদেশ যাত্রা কমেনি এতটুকু। এমনই একজনের কথা বলব আজ।
বলছি বাংলাদেশের মেহেরপুরের ঐতিহ্যবাহী সাবিত্রী মিষ্টির কথা। কিন্তু হঠাৎ এমন নাম কেন? আর তার শুরুর ইতিহাসই বা কি ছিল! সব বলব।
অবিভক্ত ভারতের নদিয়া জেলার পাঁচ মহকুমার মধ্যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যিক নগরী ছিল মেহেরপুর। ১৮৬১ সালে এই মেহেরপুরের বাসুদেব সাহা দুধের চাছি ও চিনি সহযোগে প্রথম এমন এক মিষ্টি তৈরি করেন যার নাম রাখেন সাবিত্রী। সাবিত্রী নামের কারণ এর নির্ভেজাল উপকরণ। খাঁটি বা নির্ভেজাল অর্থে সতী-সাবিত্রী শব্দ ব্যবহার তো অজানা নয়। এ কারণে এ মিষ্টির নামকরণ করেন সাবিত্রী।
যাইহোক, এই মেহেরপুরের জমিদার সুরেন বোসের বাড়ির সামনে বাসুদেব নির্মিত টালির বাড়ির একাংশে ছিল সাবিত্রীর আঁতুড়ঘর। বাসুদেব, প্রথম জমিদার মশাইকে সেই মিষ্টি পরিবেশন করলে অত্যন্ত প্রীত হয়ে তিনি অতিথিদের সাবিত্রী দিয়েই আপ্যায়ন শুরু করেন। ব্যস, অতুলনীয় স্বাদের গুনে অল্প সময়ের মধ্যেই পুরো নদিয়া জেলায় স্বমহিমায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই মিষ্টি। সেই শুরু।
যদিও আজ সেখানে সেই টালির চাল আর নেই, হয়ে গেছে দোতলা বাড়ি আর তার নীচে ‘বাসুদেব গ্র্যান্ডসন্স’ নামে বাসুদেবের দুই নাতি বিকাশ কুমার সাহা ও অনন্ত কুমার সাহা আজও মানুষের রসনার সেবা করে যাচ্ছেন। সময়ের হিসাবে তা পেরিয়ে গেছে প্রায় ১৫৯ বছর।
এই মিষ্টির বিশেষত্ব হল, এতে অন্য মিষ্টির মতো রস নেই। নির্ভেজাল দুধের চাছি ও চিনি এই মিষ্টি তৈরির উপকরণ। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খাঁটি দুধ ভাল করে জাল দিয়ে গুটি ছানা করা হয়। পরে কয়েক ধাপে তৈরি হয় সাবিত্রী। দিনে মাত্র ১০ থেকে ২০ কেজি মিষ্টি তৈরি সম্ভব হয়। আর প্রতি কেজি সাবিত্রী বিক্রি হয় ৩০০ টাকা করে। মজার ব্যাপার হল, এগুলো যত পুরনো হয়, তত এর স্বাদ বাড়ে। ফ্রিজে না রেখে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করেও খাওয়া যায়।
এই মিষ্টি তৈরি হয় বংশপরম্পরায়, বাসুদেবের বংশধর ছাড়া বাইরের কাউকে এই কাজে আজও নিয়োগ করা হয় না। এঁরা নিজেরাই মালিক, নিজেরাই কারিগর। এমনকি মিষ্টি তৈরির কৌশল কেউ জানতে চাইলে তাঁরা বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেন। বেলা ৩টের পর আর কোনো মিষ্টি অবশিষ্ট থাকে না দোকানে। ঢাকা থেকে বাসে করে মেহেরপুর বাজারে এলেই সাক্ষাৎ মিলবে এই অনাড়ম্বর দোকানের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সাবিত্রীর সাথে, যার ব্যাপ্তি এখন শুধু দেশে নয়, ছড়িয়েছে ইউরোপ, আমেরিকা, সৌদি-আরব, মালয়েশিয়া সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বয়স বাড়লেও সাবিত্রী আজও কিন্তু ফিট ও হিট।