মুক্তচিন্তা -আত্মবিশ্বাসে বোনা 'সোয়েটার'

এই প্রজন্ম এখন 'রেডিমেড'-এ নিজেদেরকে অভ্যস্ত করে ফেলেছে। 'ঘরের তৈরী', 'হাতে বানানো' আবেগকে 'ব্যাকডেটেড' বলে দাগিয়ে দেওয়াতেই এখন তারা বেশি সচ্ছল। সময়ের স্রোত ঠিক যেদিকে বইছে সেদিকেই এগোচ্ছে এই প্রজন্ম, যেমনটা হয়। ঠিক এরকমই একটা সময়ে 'সোয়েটার'-এর মতো 'ব্যাকডেটেড' একটা বিষয়বস্তুকে নিয়ে আস্ত সিনেমা বুনে ফেলেছেন পরিচালক শিলাদিত্য মৌলিক।

ছবির গল্প টুকু-কে নিয়ে। টুকু অনেকটা সোয়েটারের মতই, একটু পিছিয়ে পড়া, একটু ঝিমিয়ে পড়া, আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভুগতে থাকা একটা মেয়ে, যে ধরেই নিয়েছে তার জীবনে করার মতো কিছুই নেই, কোনও কাজই তাকে দিয়ে হবে না। তাকে এসব ভাবতে শিখিয়েছে বর্তমান সময় এবং পারিপার্শ্বিক পরিবেশ। বর্তমান সময় তাকে বুঝিয়েছে সকলেই তার থেকে এগিয়ে গিয়েছে, তাই সে একা এবং তাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। পারিপার্শ্বিক পরিবেশ তাকে শিখিয়েছে কীভাবে বর্তমান সময়ের সঙ্গে জোর করে পা মিলিয়ে চলতে হয়। কিন্তু টুকু সময় আর পরিবেশ কারও কথাই মনে রাখতে পারেনা, তাই সব পরীক্ষাতেই সে ডাহা ফেল করে যায় আর নিজের মধ্যে নিজেকে গুটিয়ে নিতে থাকে। ছোট্টবেলা থেকে এভাবেই হেয় হতে হতে বড় হয়েছে টুকু। টুকুর বোন একেবারে তার উল্টো, সবকিছুতেই সিদ্ধহস্ত সে। দুই মেয়ের মধ্যে বাবা-মায়ের চিন্তার শেষ নেই বড় মেয়ে টুকু'কে নিয়ে। আর পাঁচটা সাধারন বাবা-মায়ের মতই মেয়েকে পাত্রস্থ করতে চায় টুকুর বাবা-মা, কিন্তু পিছিয়ে পড়া-অতি সাধারণ টুকু'কে সবাই 'রিজেক্ট' করে দেয়। 'রিজেক্ট' হওয়া টুকুর সবটুকু মানিয়ে নিয়েও শুধুমাত্র 'খোলামেলা' নয় বলে তাকে বছর বছর সহ্য করে তার প্রেমিকও। এহেন পরিস্থিতিতে এমন একটা বাড়ি থেকে টুকু'র সম্বন্ধ আসে, যাদের চাহিদা অদ্ভুত, পাত্রের মায়ের একটাই দাবী- পাত্রীকে 'সোয়েটার' বোনায় পারদর্শী হতে হবে। সবসময় 'কিছু না পারার কথা' শুনতে শুনতে হাঁপিয়ে ওঠা টুকু ঠিক করে সে উল বোনা শিখবে। সেইমত টুকুকে তার বাবা উল বোনা শেখাতে নিয়ে যায় তার পিসির বাড়ি। টুকুর পিসি 'উইভিং'-এ প্রশিক্ষণ দেন, যার শেখানোর ধরনটাই ভিন্ন। কিন্তু সবকিছুতে পিছিয়ে পড়া টুকু এই পরীক্ষায় কী পাশ করতে পারবে?  ঠিক এখান থেকেই গল্প বাঁক নেয় অন্যদিকে এবং বদলে যায় টুকু'র জীবন। 

ছবির প্রথমার্ধ একটু ঢিলেঢালা হলেও, দ্বিতীয় ধাপে হাল ধরে ছবির গল্প। টুকুর সোয়েটার বোনা শেখার জায়গাটাই ছবির টার্নিং পয়েন্ট, ভালো লাগার জায়গা। ভালো লাগে পুরনো কিছুকে নতুনের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়ার অভিনব সাহস-ভাবনাকে। গল্পের বুনোটে ফাঁকফোকর থাকলেও ছবির সবকটি গানই কিন্তু নিঁখুতভাবে জিতে নিয়েছে দর্শক হৃদয়। লগ্নজিতার 'প্রেমে পড়া বারণ' এবং অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের 'উল বোনার পাঁচালি' বিশেষভাবে মনে থেকে যাওয়ার গান।

টুকুর চরিত্রে ইশা সাহা যথাযথ। টুকুর কন্যাদায়গ্রস্ত বাবার ভূমিকায় খরাজ মুখোপাধ্যায় যথারীতি ভাল। টুকুর বোন চরিত্রে অনুরাধা মুখোপাধ্যায়ও বেশ সাবলীল। পাত্রের মায়ের চরিত্রে জুন মালিয়া এবং পিসি শ্রীলেখা মিত্র প্রশংসার দাবি রাখেন। ছবিতে রয়েছেন সিধু, গানের সঙ্গে সঙ্গে তিনি অভিনয়েও স্বচ্ছন্দ তা অল্পমূহুর্তেই বুঝিয়েছেন। পরিশেষে বলাই যায় শিলাদিত্যের নির্দেশনায় পিএসএস এন্টারমেন্ট ও প্রমোদ ফিল্মস-এর প্রযোজনায় টলিউডের 'উওমেন এমপাওয়ারমেন্ট' কেন্দ্রিক 'সোয়েটার' মুক্তচিন্তা আর আত্মবিশ্বাস বুনে দিতে পেরেছে দর্শক-হৃদয়ে। ২৯ মার্চ মুক্তি পেয়েছে ছবিটি। 

 

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...