লাল গ্রহে ‘পারসিভারেন্স’-এর মাটি ছোঁয়ার ভিডিয়োটি যদি আপনি দেখে থাকেন তাহলে নাসা সেন্টারের একটি কণ্ঠ অবশ্যই আপনার কানে লেগে থাকবে। এক মহিলা কণ্ঠ। মঙ্গলের মাটি ছোঁয়ার মুহুর্তগুলির বিবরণ দিয়ে চলছিলেন তিনি। এক এক সেকেন্ড যেন এক এক মাইলস্টোন!
‘পারসিভারেন্স’ মাটি ছুঁতেই উচ্ছ্বাস ক্যালিফোর্নিয়ায় নাসার মিশন কন্ট্রোল সেন্টারে। সেই মহিলা কণ্ঠের অধিকারিনীও খুশির জোয়ারে। বললেন, ‘ রেডি টু বিগিন সিকিং দ্য সাইনস অফ পাস্ট লাইফ’
তাঁর উচ্ছ্বাস মাপা গন্ডির রেখায় সংযত থাকলেও তাঁকে নিয়ে উচ্ছ্বাসিত গোটা বিশ্ব। নেটিজেনরা তাঁর নাম দিয়েছে, ‘লেডি উইথ দ্য বিন্দি’!
আসল নাম ডঃ স্বাতী মোহন। ভারতীয় মহাকাশ বিজ্ঞানী।
১৮ ফেব্রুয়ারীর সেই ভিডিয়োটি ভাইরাল হয়। কপালে ছোট্ট কালো টিপ পরা ইন্দো-আমেরিকান অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারকে নিয়ে এখনও উচ্ছ্বাসিত মহাকাশপ্রেমীরা।
দক্ষিণ কর্ণাটকের বাসিন্দা। বয়স যখন মাত্র ১ তখন বাবা-মার সঙ্গে পাড়ি দিয়েছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ছোটবেলা কেটেছে উত্তর ভার্জিনিয়া-ওয়াশিংটন ডিসি মেট্রো এলাকায়।
মেকানিক্যাল ও অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর অব সায়েন্স (বিএস) করেন। তারপর অ্যারোনটিক্স ও অ্যাস্ট্রোনটিক্সে মাস্টার্স অব সায়েন্স করেন ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) থেকে। পরে সেখান থেকেই পিএইচডি।
৩৮ বছরের স্বাতী কেরিয়ার শুরু করতে চেয়েছিলেন একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে। বাবা চিকিৎসক বলেই নিজেও সেই পেশায় আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন বদলে যায় ১৬ বছর বয়সে। জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেদেয় ‘স্টার ট্রেক’ সিরিজের একটি ‘এপিসোড’।
মহাকাশ আর নক্ষত্রলোকের নেশায় পেয়ে বসে সদ্য কৈশোরে পা দেওয়া মেয়েটিকে। প্রবল আগ্রহ, কিন্তু তিনি জানতেন না সেই আগ্রহকে কেরিয়ারে পরিনত করার পথটা ঠিক কোথায়?
পথ শেষ পর্যন্ত খুঁজে পেয়েছিলেন। দিশা দেখিয়েছিলেন তাঁরই স্কুলের এক শিক্ষক। ইঞ্জিনিয়ারিং-এর পর তাঁর জগৎ মহাকাশ।
মঙ্গলে পাঠানো রোভারের গাইডেন্স, নেভিগেশন ও কন্ট্রোলস অপারেশন্স অর্থাৎ জিএনঅ্যান্ডসি এর প্রধান ড. স্বাতী মোহন।
নাসার ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী স্বাতী ২০১৩ থেকে এই প্রজেক্টে যুক্ত হয়েছেন।
২০২০-র মঙ্গল অভিযানে মিশন কন্ট্রোল, শিডিউলিং, নীতি নির্ধারণের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। সঙ্গে টিমকে প্রশিক্ষণও দিচ্ছিলেন। ২০৩ দিন ধরে ৪৭২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ‘পারসিভারেন্স’ ছুঁয়েছিল মঙ্গলের মাটি।
শনিতে পাঠানো নাসার মহাকাশযান ‘ক্যাসিনি’ এবং চাঁদে পাঠানো যান ‘গ্রেল’-এর অভিযানেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন স্বাতী। নিরাপদে পারসিভারেন্স’কে লাল গ্রহের জেজোরো ক্রেটারে নামানোর ভার ছিল তাঁর ।
ডঃ স্বাতীর সাফল্যে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে তাঁর নিজের দেশ। তাঁর টুইটার হ্যান্ডেলে অভিনন্দনের বন্যা। সেখানেই কেউ কেউ লিখে গিয়েছেন, ভারতীয় মেয়েদের চোখে নতুন স্বপ্ন এঁকে দিয়েছেন তিনি। মহাকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দুর্লভ হলেও আর অসম্ভব নয়। কল্পনা চাওলা, সুনিতা উইলিয়ামের পর বিজ্ঞান ও মহাকাশ গবেষণায় মেয়েদের নতুন অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন এই ‘লেডি উইথ দ্য বিন্দি’।