অনেক প্রতিবাদ-মিছিল, টালবাহানার পর অবশেষে শীর্ষ আদালতের নির্দেশে প্রেক্ষাগৃহে ফিরতে চলেছে অনীক দত্ত পরিচালিত 'ভবিষ্যতের ভূত'। সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে শুধুমাত্র জট কেটেছে এমনটা নয়, শুক্রবার শীর্ষ আদালত নির্দেশ দিয়েছে অবিলম্বে ছবির প্রদর্শন শুরু করতে হবে। ছবির প্রদর্শন নিয়ে যাতে আর কোনও ঝামেলা না হয় সেদিকে নজর রাখার জন্য মুখ্য ও স্বরাষ্ট্রসচিব এবং ডিজিপি-কে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারী শহরে মুক্তি পেয়েছিল 'ভবিষ্যতের ভূত'। কিন্তু মুক্তি পাওয়ার পরদিনই প্রায় সব 'সিঙ্গল স্ক্রিন' হল এবং মাল্টিপ্লেক্সে বন্ধ করে দেওয়া হয় ছবির প্রদর্শনী। সমস্ত হল-কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয় কোনও এক অজ্ঞাত ‘হায়ার অথরিটি' অর্থাৎ 'ওপর মহল'-এর নির্দেশেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে কে বা কারা এই 'ওপর মহল' তা আজ অবধি জানা যায়নি। অনেকের মতে, হালফিলের রাজনৈতিক এবং সামাজিক প্রেক্ষাপটের অনেক কিছুই নিজের এই ছবিতে তুলে ধরেছেন অনীক। অনীক বোঝাতে চেয়েছেন, রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরোধিতা করলে হতে হবে কোণঠাসা। আর সেই 'অকারণে'ই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এই ছবি।
সেন্সর বোর্ড-এর ছাড়পত্র থাকা সত্ত্বেও ‘ভবিষ্যতের ভূত’ হলে ফেরানোর দাবিতে সম্প্রতি আয়োজন করা হয় বিশাল পথসভার। সেই মহামিছিলে অংশ নেন সাংস্কৃতিক জগতের স্বনামধন্য ব্যক্তিত্বরা। একটা ছবি এ ভাবে শহরে নিষিদ্ধ করে দেওয়ার প্রতিবাদে খোলা চিঠি লেখেন বর্ষীয়ান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, কবি শঙ্খ ঘোষ।
প্রসঙ্গত, এইভাবে ছবির প্রদর্শন বন্ধ হওয়ার পরে ‘ভবিষ্যতের ভূত’-এর প্রযোজনা সংস্থা প্রথমে লিখিত অভিযোগ জানায় 'Eastern India Motion Pictures Association' (EIMPA)-এর কাছে। প্রযোজক কল্যাণময় চট্টোপাধ্যায় জানান, ৪৪টি হলে ‘ভবিষ্যতের ভূত’ দেখানোর ছাড়পত্র পেয়েছিল ছবির প্রযোজনা সংস্থা Indibility Creative Private Limited (ICPL)। অভিযোগ ছিল, যতগুলো হল পাওয়ার কথা ছিল তার থেকে কম সংখ্যক হল পেয়েছিল ‘ভবিষ্যতের ভূত’। কিন্তু তারপরেও বন্ধ করে দেওয়া হয় ছবির প্রদর্শন। এছাড়াও Eastern India Motion Pictures Association (EIMPA)-এর কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে ICPL জানতে চায়, কোনও যুক্তিসংগত কারণ ছাড়াই কীভাবে বন্ধ করা হলো ছবির প্রদর্শন? প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের নিয়ম অনুযায়ী কোনও ছবির প্রদর্শন বন্ধ করার অধিকার একমাত্র সেন্সর বোর্ডের। বাকি কোনও সংস্থা তা করতে পারে না। এ ভাবে ছবির প্রদর্শন বন্ধ করে দেওয়ার মাধ্যমে সেন্সর বোর্ড ও আদালতের অবমাননা করা হয়েছে।
তারপর ‘ভবিষ্যতের ভূত’-কে সিনেমা হলে ফেরাতে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে ছবির প্রযোজনা সংস্থা 'Indibility Creative Private Limited (ICPL)'। সেই মামলার ভিত্তিতেই এ দিন রায় ঘোষণা করেছে দেশের শীর্ষ আদালত। কবে থেকে ফের সিনেমা হলে দেখা যাবে ‘ভবিষ্যতের ভূত’ এখন শুধু তারই অপেক্ষা।