আজ, মানে ২১শে জুন আন্তর্জাতিক পিতৃদিবস হিসেবেই পালিত হচ্ছে সর্বত্র, মূলত জুন মাসের তৃতীয় রবিবার এই দিন হিসেবে আন্তজাতিকভাবেই স্বীকৃত। তবে এখন বিভিন্ন প্রযুক্তিগত কারণে এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এই দিনটি নিয়ে মানুষ অবগত হলেও তার ঐতিহাসিক ভিত্তি বা পটভূমি নিয়ে তেমন অবগত বোধহয় নয়। যারা জানেন না তাদের জন্য আজ সেই তথ্য দেব।
সত্যি বলতে পরিবারের দুই স্তম্ভ মা ও বাবাকে সম্মান জানানোর আলাদা করে কোনো দিন হয় কি! প্রত্যেকটা দিন তাদের । কেন বলছি ? নিজেদের প্রত্যেক দিনের যাপনকে মনে করুন, এই মুহূর্তটাকেই দেখুন না – ঠিক বুঝবেন।
মায়ের কথায় আসবো পরে , আজ যেহেতু বাবা’দের দিন , তাই বলি প্রতি মুহূর্তেই তিনি কিন্তু প্রমান করছেন, যে পরিবারের এক বিশাল ছাতা সে। বাবারা যেন কেমন অন্যরকম। মায়ের মতো নয়। বাবাদের কষ্ট পেতে নেই , দুঃখ হলেও বলতে নেই, স্কুল থেকে ইউনিভার্সিটি সব লাইনে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে নিজের হাতে সন্তানের জীবনের ভিত গড়ার সাক্ষী থাকতে হয় ( নির্বাকে), তার অসুখ হতে নেই, দেরি হলে ফোন করে কোথায়? কতদূর? এই সব প্রশ্ন করে প্রতি মুহূর্তে আশ্বস্ত করার নাম বাবা, বিপদে-আপদে বিশাল গাছের মতো ছায়া প্রদান করা, রাগ হলে এক্কেবারে চুপ করে থেকে অন্তরের অন্তস্থলে আঘাত করা, বাবা সুপারম্যান, তার বয়স হবে না - আর মায়ের শানিত স্নেহময় কান ঝালাপালা বকুনির বিরুদ্ধে ঢাল হয়ে আমাদের মানে সন্তানদের পক্ষ নেওয়া ( যদিও একাজে মায়েদের জুড়ি মেলা ভার) এসবের নাম বাবা। এই সবতো আমাদের প্রতি মুহূর্তের সঞ্চয় – যে মানুষটা প্রতি মুহূর্ত মুশকিল আসানের মতো তার জন্য মাত্র একটি দিন বরাদ্দ হতেই পারেনা। কিন্তু এর পেছনেও ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা আছে। এবার বলি সে কথা।
মধ্যযুগ থেকে ইউরোপের ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বী দেশগুলোতে এখনো ১৯শে মার্চ যীশুখ্রিস্টের বাবা সন্ত যোশেফের স্মৃতিতে উৎসর্গ করে পালিত হয় পিতৃদিবস। আর আমেরিকাতে প্রথমবার ১৯শে জুন ১৯১০ সালে পালিত হয় । সূচনা করেছিলেন সোনোরা স্মার্ট ডোড, যিনি ছিলেন ‘মার্কিন সিভিলওয়ার’ এর যোদ্ধা উইলিয়াম জ্যাকসন স্মার্টের কন্যা। তিনি চেয়েছিলেন তার বাবার জন্মদিন ৫ই জুন এই পিতৃদিবস হিসেবে পালন করতে, কিন্তু তৎকালীন প্রেডিডেন্ট ১৯শে জুন নির্ধারণ করেন। কিন্তু পরবর্তীকালে ১৯৬৬ সালে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন –বি-উইলিউম জুন মাসের তৃতীয় রবিবার এই দিনটি নির্ধারণ করেন। তারই প্রকাশ আজ ঘটছে সর্বত্র।
তবে শুধু খাতায় কলমে নয়, হুজুকে নয় , উৎসবে নয় – সারা বছর যাতে বাবারা ভালো থাকে সেই দায়িত্ত্ব আমাদের। বাহ্যিক প্রকাশ নয় , মন থেকে শ্রদ্ধার প্রয়োজন , সময় এসেছে তাঁর পাশেও ছাতার মতো হয়ে দাঁড়ানোর। তাহলে যদি বৃদ্ধাবাসের প্রয়োজন ফুরোয়। ভালো থাকুক সব বাবারা , ছায়া হয়ে থাকুক, সুপারম্যান হয়ে আগলে রাখুক তাদের সন্তানদের।