Sunil Chhetri last match: প্রায় ৬০ হাজার সমর্থকদের সাক্ষী রেখেই চোখের জলে বিদায় নিলেন সুনীল!

৬ জুন। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন। ভারত বনাম কুয়েত। খেলার শেষ বাঁশিটা বাজতেই ভারতীয় ফুটবলারদের মুখে ফুটে উঠল হতাশার চিহ্ন! ড্র ম্যাচ। কোনও দলই কোনও গোল করতে পারল না।

মাঠের মাঝখানটা করে একা দাঁড়িয়ে ছিল সুনীল ছেত্রী। ভারতীয় জার্সি পড়ে এদিনই ছিল তাঁর শেষ ম্যাচ! কোচ ইগর স্টিমাচ এগিয়ে এলেন সুনীলের দিকে। সান্ত্বনা দিলেন ভারতীয় ফুটবল ক্যাপ্টেনকে। তখনও সুনীল বিশ্বাস করতে পারছেন না, এটাই ছিল তাঁর শেষ ম্যাচ। চোখের জল ধরে রাখতে পারলেন না তিনি। তবে পেশাদার ফুটবলারদের আবাগে ভাসতে নেই। এটা তিনি জানেন। তাই কিছুক্ষণের মধ্যেই নিজেকে সামলে নিয়েছিলেন ছেত্রী।

এরপরেই গোটা মাঠ ঘুরতে শুরু করলেন সুনীল। মাঠে এদিন উপস্থিত ছিল প্রায় ৬০ হাজার দর্শকেরা। এই সময়টার জন্যই এদিন সবাই অপেক্ষা করছিলেন। দর্শকদের চিৎকারে গর্জে উঠছিল যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন স্টেডিয়ামটি। তাঁদের দিকে বার বার প্রণাম জানালেন তিনি।

দর্শক থেকে শুরু করে ফুটবল তারকারা, সকলেরই চোখের জল বাঁধ মানছিল না এই সময়।  

মাঠ ছেড়ে যাওয়ার আগে সুনীলের সতীর্থেরা দাঁড়িয়ে ছিলেন ভারতীয় ফুটবলের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকারকে ‘গার্ড অফ অনার’ দেওয়ার জন্য। তাঁদের কাছে হেঁটে যাওয়ার আগেই আবেগে ভেসে গেলেন তিনি। চোখের জলকে কিছুতেই থামাতে পারছিলেন না তিনি। একবার দাঁড়িয়ে চোখটা কিছুটা মুছে নিলেন। তবে, সেই জলও এদিন থামতে নারাজ, তাই চোখের জল নিয়েই সতীর্থদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মাঠ ছাড়লেন সুনীল।

ম্যাচের আগে ফিফার কিছু বাধা ছিল সুনীলকে সম্মান জানানোর ক্ষেত্রে। তাই তাঁর জন্য ছোট্ট আয়োজন করা হয়েছিল এদিন। সেখানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে স্মারক তুলে দিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু ও মেয়র ফিরহাদ হাকিমও।

ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান এবং মহমেডানের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন কর্তারা সুনীলকে সম্মান জানালেন। সর্বভারতীয় ফুটবল সংস্থার পক্ষ থেকে ছিলেন প্রেসিডেন্ট কল্যাণ চৌবে। এছাড়া সুনীলকে এআইএফএফ-এর পক্ষ থেকেও কর্তারা উত্তরীয় পরিয়ে দেন।

এদিন সকলেই সুনীলকে বিভিন্ন উপহারে সন্মান জানিয়েছেন। কেউ দিয়েছেন পুষ্পস্তবক আবার কেউ দিয়েছেন আঁকা ছবি। উপহার পর্ব মিটতে শেষে সুনীলের জন্য তৈরি করা হয় ছোট মঞ্চ। সেখানে ডেকে নেওয়া হয় তাঁর বাবা, মা এবং স্ত্রীকে। এদিন মাঠে উপস্থিত ছিলেন তাঁর শ্যালক অভিনেতা সাহেব ভট্টাচার্যও। কিন্তু এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না সুনীলের শ্বশুর সুব্রত ভট্টাচার্য।

বাইরে সুনীলের অপেক্ষায় ছিলেন সাংবাদিকেরা। কিন্তু তাঁদের সকলকে ফাঁকি দিয়ে যান সুনীল। তিন নম্বর গেট দিয়ে বেড়িয়ে যান তিনি। তবে, সাংবাদিকদের কোনওরকম ভাবেই হতাশ করেননি তিনি। তাঁদের জন্য চিঠি রেখে যান তিনি। চিঠিতে তিনি লেখেন, “গত ১৯ বছরে আপনাদের অনেকের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছে। কখনও অনেক কথা বলেছি, কখনও আবার সব কথা বলতে পারিনি। কথা বলতে গিয়ে কখনও একরাশ বিরক্তি প্রকাশ পেয়েছে। আমি সব সময় আপনাদের সামনে নিজের সঠিক মনোভাবটা তুলে ধরতে চেয়েছি। আমি সব সময় আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছি। সেখানে না চাইতেও শিরোনাম তৈরি হয়ে যাওয়ার ভয় থাকলেও কথা বলেছি।”

তিনি আরও লিখে জানিয়েছেন যে, “এই চিঠির মাধ্যমে আমি আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আপনারাই আমার কথা তুলে ধরেছেন। আমার গল্পটা বলতে সাহায্য করেছেন। আপনাদের ভালবাসার জন্য ধন্যবাদ। আপনাদের কাজটা সহজ নয়। সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ। আমি চাইব আপনারা ভারতীয় ফুটবলের গল্প মানুষকে বলতে থাকুন। সেটা ভাল হোক, বা ততটা ভাল নয়। আমাদের এটা দরকার। আপনারা মাঠে সেরা জায়গাটা পান। আশা করি এই ১৯ বছরে আপনাদের অভিজ্ঞতাটা একটু স্পেশ্যাল করতে পেরেছি। এ বার কখনও একটা, দুটো ম্যাচে আপনাদের সঙ্গে বসে দেখতে চাইব।”

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...