গরমের কারিগর

গরমে অনেক কষ্টের পর বাড়ি এসে আমরা ফ্রিজ খুলে ঢকঢক করে জল খেয়ে নিই বা রাস্তায় ঠান্ডা লেবুর জল খেয়ে শান্তির নিঃশাস নিই। কিন্তু তাদের গল্পগুলো যা আমাদের চোখে পড়ে না, যারা এক মুহূর্ত নড়তে পারেনা নিজের কাজ থেকে, যারা গরমের তাপে সোজা মেরুদন্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, ঘামতে থাকে তরতর করে, প্রচন্ড কষ্টে কিছু মুহূর্ত বিশ্রাম পেলেই জল খোঁজে যাদের চোখ, তাদের গল্পগুলো কিন্তু শোনা হয় না। দিনের শেষে প্রচন্ড খাটনিতে চোখে ঘুম নেমে যায় আর তাদের কথাগুলিও হারিয়ে যায় তাদের ঘুমের মধ্যে।   

summer-2

আমার শহরের রাস্তার মোড়ে মোড়ে থাকে তারা, সাদা পোশাকে আমাদের ট্রাফিক পুলিশ। রাস্তা পার করে যখন চলে যাই, হয়তো তাকানো হয় না, বোঝা হয় না তাদের কষ্টটা। যখন বাড়ি ফিরে বৃষ্টির আশা করি আর বৃষ্টি এসেও যায়, আহ্লাদে লাফিয়ে উঠি, স্বস্তির নিঃশাস নিই। কিন্তু তারা নিতে পারে না। সারাদিন গরমে ঘামার পর পুরোটা সন্ধ্যা হয়তো আবার বৃষ্টিতে ভিজতে হয়। তাদের গল্প আজ মনে করি, আজ যখন ওদের থেকে অনেক সুখের জায়গায় বসে থেকেও আমি নালিশ করে যাই, তখন তাদের কথা বলা যায়। বলা যায় সেই কাহিনী যা হারিয়ে যায় রোজ।

যখন দুপুরে ঘুম আসে না, গরমে শুধু স্বপ্নে আসে শরবত আর আইসক্রিম তখনই কিন্তু ঠুং ঠাং আওয়াজে চলতে থাকে কাজ, বাড়ি গড়ার কাজ। মাথায় গামছা আর কড়াই নিযে গড়ে যাচ্ছে ইমারত বা হয়তো আমার, আপনার বাড়ি। তাদের গল্পই বা আমরা কোথায় খুঁজে পাই?

summer-3

যেই রিক্সওয়ালাটা চাকা ঠেলে গরম থেকে বাঁচিয়ে দিল আপনাকে একবার তার চোখের দিকে সাহস করে দেখবেন, পাবেন অনেক কষ্ট আর অজস্র ক্লান্তি।  

যেই শরবত কাকু বরফ ভেঙে আপনার শরবত বানাচ্ছে সেই বরফ কাকুও ঘামছে তরতরিয়ে।  

summer-4

তাদের গল্প পাই না আমরা, শুনিনা আমরা। আসুন না, একদিন এদের নিয়ে কথা বলি। স্বপ্ন দেখি। তাদের দিন। আমরা যেদিন হেঁটে  চলে যাবো না। দাঁড়াবো আর ব্যাগ থেকে জল বার করে হাতে দেব। স্বপ্ন দেখি সেইদিনের। কাজ কম হবে না, কাজ কাজই থাকবে। কিন্তু এই আমাদের আর তাদের ক্লন্তির মাঝে যদি একটা হাত ঠান্ডা জল বাড়িয়ে দেয় তাহলেই গর্বে ভরে উঠবে আমার মন এবং সার্থক হবে আমার দেখা এই ছোট্ট স্বপ্নটা।

summer-1

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...