পূর্ব বাংলার পাবনার এক সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে কৃষ্ণা দাশগুপ্ত। গায়ের রঙ শ্যামলা ছিল বলেই নাম রাখা হয়েছিল কৃষ্ণা। লেখা পড়া, বেড়ে ওঠা সবটাই সেখানে।
১৯৪৭ সালে শিল্পপতি আদিনাথ সেনের ছেলে দিবানাথ সেনের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন কৃষ্ণা। বিয়ের পর কৃষ্ণা দাশগুপ্ত থেকে তাঁর নাম বদলে হয় রমা সেন।
১৯৫২ সালে দিবানাথের সঙ্গেই ওপার বাংলা থেকে এপার বাংলায় চলে আসেন তিনি। এখানেও গুছিয়ে সংসার করতে পাতেন রমা। সারাক্ষণ মেতে থাকেন একমাত্র মেয়ে, ছোট্ট মুনমুনের সাথে।
১৯৫২ সালে অভিনয় জগতে পা রাখেন রমা, প্রথম সিনেমা 'শেষ কোথায়', ছবিটি মুক্তি পায়নি। তাঁর প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি 'সাত নম্বর কয়েদি', 'রমা সেন' নামে তখন অল্প অল্প পরিচিতি হয়েছে তাঁর।
১৯৫৪ সালে উত্তম কুমারের সঙ্গে 'সাড়ে চুয়াত্তর'ই তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
'অগ্নিপরীক্ষা’, ‘সবার উপরে’, ‘শাপমোচন’, ‘শিল্পী’, ‘সাগরিকা’, ‘পথে হলো দেরি’, ‘হারানো সুর’, ‘গৃহদাহ’, ‘প্রিয় বান্ধবী’ 'দীপ জ্বেলে যাই',- একের পর এক সুপার-ডুপার হিট ছবিতে অভিনয় করে 'রমা সেন' থেকে তিনি তখন হয়ে উঠেছেন বাংলার জনপ্রিয় রোমান্ট্যিক নায়িকা 'সুচিত্রা সেন'।
জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছায় 'উত্তম সুচিত্রা' জুটি।
ব্যক্তিগত জীবনে খুব ভাল বন্ধু ছিলেন উত্তম কুমার ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
সমসাময়িক সময়ের নিরিখে তিনি ছিলেন অত্যন্ত আধুনিক চিন্তাধারার মানুষ। পছন্দ করতেন পশ্চিমি ফ্যাশন।
পোষ্য প্রেমীও ছিলেন তিনি।
পরের দিকে 'আঁধি' 'মুসাফির', 'মমতা', 'বোম্বাই কা বাবু'র মতো বেশ কিছু হিন্দি ছবিতেও প্রশংসিত হয়েছিলেন তিনি।
১৯৭৮ সালে অভিনয় জীবনের ইতি টানেন 'প্রণয়পাশা' সিনেমা মধ্য দিয়ে।
তারপর থেকেই বাইরের জগতের থেকে ক্রমশ অন্তরালে সরে যান তিনি। তাঁকে দেখতে পাওয়ার হাজারও গুজব, তাঁকে একটি বারের জন্য দেখতে পাওয়ার শত আকুতির মধ্যেও আমৃত্যু অন্তরালবাসিনী হয়েই থেকে যান সুচিত্রা সেন।
কৃষ্ণা দাশগুপ্ত থেকে রমা সেন, রমা সেন থেকে সুচিত্রা সেন এবং সুচিত্রা সেনের জনপ্রিয়তাকে সরিয়ে রেখে এক 'পর্দানসিন' হয়ে ওঠার বর্ণময় জীবনই তাঁকে করে তুলেছে বাংলা চলচ্চিত্রে 'মহানায়িকা'। আজ ৬ এপ্রিল, সময়কে এক জায়গায় থামিয়ে দিতে পারা নস্টালজিক মোহময়ী মহানায়িকার ৮৮ তম জন্মদিন।