বিমল রায়ের হাত ধরে বলিউডে প্রবেশ করেছিলেন সুচিত্রা সেন। প্রথম ছবি দেবদাস। শরৎচন্দ্রের বিখ্যাত উপন্যাস ‘দেবদাস’কে পর্দায় রূপ দিয়েছিলেন বিমল রায়। কাহিনীর অন্যতম প্রধান নারী চরিত্র ‘পার্বতী’। সেই ভূমিকাতেই অভিনয় করেছিলেন বাংলা ছবির অধিশ্বরী। চন্দ্রমুখী বৈজয়ন্তীমালা। দেবদাস দিলীপকুমার। প্রথম ছবিই ব্লকব্লাস্টার হিট! বলিউড পেয়েছিল তার প্রথম পারো গোটা দেশের নজর ঢাকার মেয়ে রমার দিকে! সাল ১৯৫৫।
যেমন রূপ তেমন অভিনয়! পরের ছবি ১৯৬০-এ। ‘বোম্বাই কা বাবুতে’ও মুগ্ধতার রেশ অম্লান। সাদা কালো ছবিতে গ্রেগরি পেগ দেব আনন্দের পাশে পাহাড়ি ঝর্নার মতো সুচিত্রা। ছবির গানের দৃশ্যে অসাধারণ অভিনয়! বাংলা ছবির সুচিত্রার সঙ্গে হিন্দি ছবির এই সুচিত্রার মিল খুব সামান্যই।
ওই বছরই দেব আনন্দের সঙ্গে আরও একটি ছবি করেন তিনি। ছবির নাম ‘শরহদ’।
গুলজার মোহিত ছিলেন সুচিত্রায়। ‘আঁধি’ ছবির চিত্রনাট্য লেখা হয়েছিল তাঁর কথা ভেবেই। কীভাবে আঁধি ছবিতে এলেন সুচিত্রা?
আঁধি ছবির প্রযোজক ছিলেন ওমপ্রকাশ। শুরুতে তিনি একটি অন্য গল্প নিয়ে ছবির কথা ভেবেছিলেন। সেই মতো ক্রাইম থ্রিলার লিখেছিলেন শচীন ভৌমিক। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেলেন তিনি। ছবির কাজ গেল আটকে। তখন ডাক পড়ল গুলজারের। প্রযোজক প্রস্তাব দিলেন ছবিতে সঞ্জীব কুমার আর সুচিত্রা সেন থাকবেন। কিন্তু রাজী হলেন না গুলজার সাব। ব্ললেন, ‘এমন ‘বোম্বাইয়া গল্পের জন্য সুচিত্রা সেনকে ডাকা যাবে না’। এই সাদামাটা গল্পের জন্য তিনি আসবেন না। সুচিত্রা সেনকে বম্বে নিয়ে আসতে হলে চাই ‘স্পেশাল’ গল্প।
তাঁর জন্যই নতুন করে গল্প লিখতে শুরু করলেন। সম্পর্কের গল্প। রাজনীতির দুনিয়ায় মানবিক সম্পর্ক নিয়ে তার আগে পর্যন্ত বলিউডে কোনও সিনেমা হয়নি। গুলজার লিখলন। সেই প্রথম। এক মহিলা রাজনীতিবিদের রাজনৈতিক কেরিয়ার আর সম্পর্কের টানাপোড়েন।
গল্প থেকে চিত্রনাট্য লেখা, সুচিত্রা সেনকে রাজী করানো সব কিছু হয়েছিল মাত্র দু’মাসের মধ্যে। একটা চরিত্রের মধ্যেই তিনটে চরিত্র। প্রথমপর্বে একগুঁয়ে প্রেমিকা, দ্বিতীয় পর্বে স্ত্রী এবং তৃতীয় পর্বে রাজনীতিবিদ। তিন ভূমিকাতেই তুখোড় তাঁর পারফরম্যান্স। শুধু এলিগেন্স আর ম্যানারিজম নয় বলিষ্ঠ অভিনয়ে সমালোচক থেকে সাধারণ দর্শক সকলেই মুগ্ধ!
সুচিত্রায় শুধু গুলজার নয়, মোহিত ছিল গোটা বলিউড। এমনকি রাজকাপুরও।
তবে সুচিত্রা সুচিত্রাই! দূরতম তারকা। তিনি ‘ম্যাডাম’। কাউকে রেয়াত করেন না। রাজকাপুরকেও রেয়াত করেননি। সরাসরি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর ছবির অফার । আরকে ফিল্মস-এর ব্যানারে নিজের ছবিতে অভিনয়ের জন্য তাঁকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন রাজ। কিন্তু অত্যাধিক ‘ফিল্মি’ কায়দায় করা তাঁর সেই প্রস্তাব সুচিত্রার ভালো লাগেনি। না করে দিয়েছিলেন সোজা।
সুচিত্রা সেন। এক যুগের নাম। তাঁর দেখা না পেলে বাঙালি ঠিক কী করত আমরা কখনই ভাবতে পারিনা। দীঘল চোখের ওই ম্যাজিকের কাছে নেশার মতো ধরা দেওয়াই ছিল বাঙালির নিয়তি। এর আর অন্যথা নেই! আজও!