“তবু মনে রেখো”, রবীন্দ্র সংগীত জগতের এক নক্ষত্র ছিলেন সুচিত্রা মিত্র। জন্ম ১৯২৪ সালের ১৯শে সেপ্টেম্বর। চলন্ত ট্রেনে বিহারের গুজন্ডি স্টেশনের কাছে তাঁর জন্ম। জানা যায় এরকারণে অনেকেই তাঁকে মজা করে ‘গজু’ বলে ডাকত। তিনি নিজে ও বলতেন “চলন্ত ট্রেনে জন্মেছি তো, তাই সব সময় চলছি। পথচলাতেই আমার আনন্দ”। রবীন্দ্র সংগীতে তাঁর ছিল নিজস্ব এক ঘরানা। তাঁর মৃত্যুর সাত বছর পরেও তাঁর গান তাঁর শ্রোতাদের কাছে এক অন্য গুরুত্ব পায়। বাবা সৌরিন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়ের তিন পুত্র ও কন্যার মধ্যে তিনি ছিলেন কনিষ্ঠ সন্তান। তাঁর বাবার সাথে রবিঠাকুরের সম্পর্ক ছিল ঘনিষ্ঠ। তাই সারা জীবন তাঁকেই জীবন দেবতা মেনে এসেছেন শিল্পী সুচিত্রা মিত্র। তবে আক্ষেপ কিছু থেকেই গিয়েছিল। শিল্পীর গলায় ছিল অসাধারন সুর। ছোট থেকেই রবীন্দ্র সংগীতের চর্চা শুরু হয়েছিল তাঁর। পঙ্কজ মল্লিকের কাছে প্রথম সংগীতে হাতে খড়ি। কবির প্রিয় শান্তিনিকেতনে তিনি যখন রবীন্দ্রসঙ্গীতের শিক্ষা গ্রহণ করতে যান তখন তিনি মাত্র সতেরো । তাঁর সেখানে যাওয়ার কিছু দিন আগেই প্রয়ান ঘটেছিল কবির। তাই কবিকে চাক্ষুষ দেখার সুযোগ আর তার হয়নি যা ছিল তার সারা জীবনের আক্ষেপ। শান্তিনিকেতনের সংগীত ভবনে ডিপ্লোমা কোর্সের শেষে কলকাতায় এসে বাংলা সাহিত্যে স্কটিশচার্চ কলেজ থেকে বি.এ পাশ করেন ও প্রায় পনেরো বছর পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁর এম.এ পাশ। বিবাহিত জীবন সাত বছর স্বামী ধ্রুব মিত্রের সাথে হলেও তাঁদের যোগাযোগ কখনোই বিচ্ছিন্ন হয়নি। একে অপরের বন্ধু হয়ে পাশে ছিলেন বরাবর। শান্তিনিকেতনের কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে শিক্ষা গ্রহণের সময় কাটিয়েছেন অনন্য ভাবে। পরবর্তীকালে নিজে অধ্যাপনা করেছেন ও শান্তিনিকেতনের সংগীত ভবনের প্রধান হিসাবে নিযুক্ত ও হয়েছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে নানা ওঠা পড়া ও ভাঙা গড়া, সারা জীবনের লড়াইয়ের মাঝে এক অনন্য শিল্পী হিসেবে রয়ে গিয়েছেন সকলের মনে| জন্মদিনে শিল্পীকে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।