কৃত্রিম হৃদয় নিয়ে দশ বছর

আমাদের ঘরে ঘরে আজকাল অসুখ বিসুখ লেগেই রয়েছে। সুস্থ থাকাটাই যেন চ্যালেঞ্জ। সুগার, প্রেশার নিত্যদিনের হাঁচি, কাশির মতো হয়ে গেছে আজকাল। কোলেস্টেরল, ইউরিক অ্যাসিড -এর সঙ্গে সঙ্গে হার্টের অসুখ ও এখন ঘরের সদস্য হয়ে গেছে। পরিবেশের পরিবর্তন, আমাদের অভ্যাসের পরিবর্তন, খাবারে ভেজাল, ছুটন্ত গতি এসবের মিলিত ফলই হল এই সমস্ত রোগের ঘিরে থাকার কারন। আমাদের কিছু বুঝে ওঠার আগে রোগ বাসা বাঁধে আমাদের শরীরে।

              এমনই স্বাভাবিক জীবন চলতে চলতে হঠাৎ ছন্দপতন হয় কলকাতার সন্তোষ দুগারের২০০৯ সালে কলকাতার হাসপাতালেই বুকে কৃত্রিম হৃদযন্ত্র বসে সন্তোষবাবুর। গোটা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছিলেন কলকাতার ইন্টার ভেনসোনাল কার্ডিওলজিস্ট প্রকাশ কুমার হাজরা। তারপর কেটে গেছে ১০ বছর। কৃত্রিম হৃদযন্ত্র নিয়ে টানা ১০ বছর সুস্থভাবে বেঁচে থেকে রেকর্ড করলেন সন্তোষবাবু। হৃদযন্ত্রও বিকল হয়নি, সন্তোষবাবুর শরীরেও কোনোরকম অসামঞ্জস্য নজরে পড়েনি। সাধারণত হার্ট অ্যাটাক হলে হৃৎপিন্ড প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে পড়ে। কার্ডিওলজিস্টরা বলেন, এই ট্রান্সপ্লান্টের জন্য প্রথমে এমন রোগী খুঁজে বের করতে হয়, যার ব্রেন ডেথ-এ মৃত্যু হয়েছে, কিন্তু হার্ট একেবারে সুস্থ এবং স্বাভাবিক রয়েছে। এর পর রক্তের গ্রূপ ম্যাচ করার প্রয়োজন থাকে। তারপর হার্ট ট্রান্সপ্লান্টেশন সম্ভব হয়। বিকল্প পদ্ধতি হল কৃত্রিম হৃদযন্ত্র বসানো। সন্তোষবাবুর ক্ষেত্রে দ্বিতীয় পদ্ধতিই অবলম্বন করা হয়েছিল।

             কার্ডিওলজিস্ট প্রকাশ কুমার হাজরা জানান, সন্তোষবাবুর হৃৎপিণ্ডের বাম প্রকোষ্ঠের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল এই কৃত্রিম বৈদ্যুতিক যন্ত্র। এই যন্ত্রের কাজ হল বিকল হয়ে যাওয়া হৃৎপিণ্ডকে পুনরায় সচল করে তোলা। ইলেক্ট্রিক্যাল ইমপালস তৈরী করে হৃৎপেশিকে সরবরাহ করতে হয়। এটা কৃত্রিম উপায়ে তৈরী একটি ধাক্কা, যা হৃৎপিণ্ডের গতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। এর পর হৃৎপিণ্ডের প্রকোষ্ঠগুলিতে রক্ত প্রবাহ সচল করে তোলার কাজ করা হয়। যাতে সারা শরীরে রক্তের গতি নিয়ন্ত্রিত হয়। যন্ত্রটি কাজ করে রোটর পাম্পের মত। এটির সঙ্গে লিড বা তার লাগানো থাকে। যেটি জোড়া থাকে হার্টের বাম প্রকোষ্ঠের সঙ্গে। সেখানে জমা হওয়া বিশুদ্ধ রক্ত টেনে নিয়ে এই লিড তা সারা শরীরে ছড়িয়ে দেয়। যন্ত্রটি ব্যাটারির সাহায্যে চলে। একটি ব্যাটারি সাধারণত ৮-১০ বছর পর্যন্ত চলে। ব্যাটারি শেষ হলে ব্যাটারির ক্যানটি পরিবর্তন করে দিতে হয়। কিন্তু কোনোভাবে ব্যাটারিতে যদি গন্ডগোল হয়ে গিয়ে ব্যাটারি বন্ধ হয়ে যায়, তবে ৯০ সেকেন্ডের মধ্যে তা কাজ করা বন্ধ করে দেবে এবং রোগীর মৃত্যু হবে। কৃত্রিম হৃদযন্ত্র বসালে তাই রোগীকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণে থাকতে হয়। ব্যাটারির চেক-আপ করতে হয় নিয়মিত।

             ভারতে প্রথম কৃত্রিম হৃদযন্ত্রের সফল ইমপ্ল্যান্ট হয় ২০১২ সালে। একজন ৫৮ বছরের রোগীর দেহে হার্টমেট -২ এলভিএডি বসান কার্ডিওলজিস্টরা। উক্ত অপারেশনটি হয়েছিল চেন্নাইতে। বর্তমানে আমাদের শহরেই সফলভাবে এই অস্ত্রোপচার সম্ভব হচ্ছে। ভিন রাজ্যে আর ছোটার প্ৰয়োজন হয়না। শহরের কার্ডিওলজিস্টরাই এই অস্ত্রোপচার সফলভাবে করতে পারছেন,যা যথেষ্ট আশার উদ্রেক করে।

 

 

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...