নীল আকাশ সোনালী রোদ্দুর আর সবুজ পাতার ঝিলমিলে সেজে উঠেছে প্রকৃতি। শিউলি ছাতিমের গন্ধে বিভোর আকাশ-বাতাস। আর কদিন পরেই সাটিন শাড়ি আর গয়নায় সেজে উঠবেন মা দুগগা। রং, আলো আর পুজোর সাজে সেজে উঠেছে শহর। আজকাল সকালে ঘুম ভাঙলেই শরৎ আলোর রোশনাইতে জুড়িয়ে যাচ্ছে চোখ। মন জুড়ে আপনিই বেজে উঠছে উৎসবের সুর। সবাই সাজছে পুজোর সাজে, ঘরটাই বা বাদ থাকে কেন!
করে ফেলুন ঘরের মেকওভার। খরচ নিয়ে ভাববেন না। দরকার শুধু সামান্য কিছু উপকরণ আর একটা সৃজনশীল মন। ঘর সাজাতে গেলেই যে দামি জিনিস লাগবে বা বাইরে থেকে আবার এক প্রস্থ শপিং করতে হবে কে বলল!
বাগানের ঝরা ফুল, পুরনো শাড়ি, মা-ঠাকুমার আমলের বাসনপত্র, টিনের তোরঙ্গ বা সিন্দুক, এসবই হয়ে উঠতে পারে আপনার বদলের হাতিয়ার। পুরনো জিনিসকে রিসাইকেলিং করে নতুন সাজে সেজে উঠতে পারে ঘর।
দেওয়ালের মেকওভার- শুরু করা যাক দেওয়ালের মেকওভার দিয়ে। পুজো এলো বলেই গোটা বাড়ি নতুন করে রঙ্গ করতে হবে এমন মাথার দিব্যি কেউ দেয়নি। ড্রইং রুম থেকে বেডরুম চাইলে বাথরুম বা কিচেনের দেওয়ালের যে যে অংশে রং একটু চটে গেছে বা দাগ ধরে গিয়েছে আগে খুঁজে বের করুন সেই জায়গাগুলো। এই কাজটা দিনের আলোতেই করবেন। তারপর মার্ক করুন। নিজে হাতে ছবি এঁকে বা আলপনা এঁকে ফ্রেমে বাঁধিয়ে টাঙিয়ে দিন এই সব অংশে। সরা বা মাটির থালায় পেইন্টিং করতেও পারেন। এছাড়া বাড়িতে যদি আগেকার দিনের হাতে তৈরী আসন বা নকশি কাঁথা থাকে সেসবও বাঁধিয়ে রাখতে পারেন। পুরনো শিল্পকর্মের সংরক্ষণও হবে আবার হারানো দিনের স্মৃতিও বাঁচবে।
ড্রইং রুমের সাজ- পিতল বা কাঁসারের কলসি, ঘট, বড় গ্লাস, বাটি বা গামলা জাতীয় পাত্র আছে বাড়িতে? থাকলে সে সব বের করে আনুন। আপনার বাড়ির পুজোর সাজে এই পুরনো জিনিসই হয়ে উঠতে পারে অতিথিদের কাছে ঘরের মূল আকর্ষণ। পিতল কাঁসারের পাত্রের গায়ে ভালো করে তেঁতুল বা ব্রাশো মাখিয়ে রাখুন বেশ কয়েকঘণ্টা, সোনার মতো ঝকঝকে হয়ে উঠবে।
ড্রইং রুম থেকে অতিরিক্ত সমস্ত আসবাব সরিয়ে নিন। দরজার ঠিক পাশে একটা জুটের ম্যাট বা ছোট জলচৌকির ওপর বসান বড় কলস। তার মধ্যে কাশফুল রাখুন। সঙ্গে কয়েকটা শোলার ফুল। দক্ষিণাপণ মার্কেট বা নিউমার্কেটে সারাবছর পেয়ে যাবেন শোলার ফুলের স্টিক। সেন্টার টেবিলে পিতল বা কাঁসারের বড় বাটি বা পাত্র থাকলে তাকে রাখুন সেন্টার টেবিলে। তার মধ্যে কিছু শিউলি ফুল। সঙ্গে সেরামিক কিংবা টেরাকোটার কয়েকটা শোপিস। বদলে যাবে ঘরের মেজাজ।
মেঝেতে শীতলপাটি অথবা শতরঞ্জি তো বহু পুরোনো ঐতিহ্য। দেওয়ালে দুর্গার মুখ রাখতে পারেন। কুমোরটুলির ছোট ছোট দোকানে পেয়ে যাবেন। মা দুর্গার সরাও পাবেন সেখানেই।
পুরনো তসর, শিফোন বা হাল্কা ধরনের দক্ষিণী শাড়ি একটু জরিদার হলে তো কথাই নেই, সেই আপাত বাতিল শাড়ি দিয়ে তৈরি হতে পারে পর্দা। শাড়ির বডি যদি হালকা বা এক রঙের হয় তাহলে পর্দার ধারের অংশে জরির পাড় লাগিয়ে নিতে পারেন। সূতোর কাজে কোনে কবিতা বা গানের লাইন লিখতে পারেন। ব্লক প্রিন্টও করিয়ে নিতে পারেন। ‘বাতিলই’ হয়ে উঠবে নতুন।
আলোর ব্যবহারের ক্ষেত্রেও একই কথা ঘাটে। শরতের রোদ ঝলমলে দিন হয়ে উঠক আপনার মন বদলের প্রধান উপকরণ। এই সময় লাল, হলুদ, কমলার মতো উজ্জ্বল রঙ মনকে আলাদা তৃপ্তি দেয়। উৎসবের মেজাজ চাঙ্গা করে দেয়।
ঘরের মূল ইন্টেরিয়র এথেনিক হোক বা ওয়েস্টার্ণ পুজোর সাজে একটু অন্যরকমভাবে সাজিয়ে তুললে খারাপ মোটেই লাগবে না। থিমের সাজেও সাজাতে পারেন।