মোঘল রাজের গয়নার বাক্স

শাসন, রাজপাট, শিল্প, সংস্কৃতিকে ছাপিয়ে  মোঘল সম্রাটরা ইতিহাসে মিথ হয়ে আছেন বিলাস ব্যাসনের জন্য। বিশেষত মোঘল রাজপ্রাসাদের নারীরা।

আকবরের প্রিয় মহিষী ছিলেন রাজপুত কন্যা হীরা কুনওয়ারী। মোঘল মহিষী হওয়ার পর নাম হয় যোধাবাই। তাঁর গহনা প্রীতি প্রবাদের মতো। ফতেপুর সিক্রিতে আকবরের মহলে একটি ঘর ছিল শুধুমাত্র যোধা বাই এর অলঙ্কারে ভর্তি। কুন্দন, মিনাকারী খুব ভালোবাসতেন যোধা বাই।  নূরজাহান থেকে জাহানারা মোঘল রাজশাসনের মুখ হয়ে ওঠা এই সব নারীরা ব্যক্তিত্বে যেমন ক্ষুরধার তেমনি রুচি এবং সাজ পোশাকের ক্ষেত্রেও।

মেহেরুন্নেসা ওরফে নূরজাহান মেধা, বুদ্ধি, কূটনৈতিক বোধ, শাসন জ্ঞান নিয়ে ভারত সম্রাজ্ঞী হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন অসামান্য সুন্দরী। নিজের পোশাক, নিজের গয়নার ডিজাইন নিজে করতেন। ভারী গয়না পরতে ভালোবাসতেন। দামী পাথরের কাজ থাকত গয়নায়। হীরের মুকুট ভীষন প্রিয় ছিল। মাথায় টিকলি। কানের দুল কাঁধ ছুঁয়ে যেত। সাত নরী হারের সম্পূর্ণ এক অন্যরকম ডিজাইন তিনি তৈরি করেছিলেন। কোমরের ছোরাটিও এমনভাবে ডিজাইন করেছিলেন যে সেটিও যেন এক গয়না হয়ে উঠেছিল।

মিন বাজারে যেতেন আমির ওমরা, শেহজাদারা।

একবার এমনই এক মেলায় মমতাজের সঙ্গে দেখা হয়েছিল শাহজাহানের। মমতাজ তখন আরজুমন্দ বানো। ১৬১২ সালে মোঘল রাজপ্রাসাদে বেগম হয়ে পা রাখলেন তিনি। আরজুমন্দ বানো নাম বদলে হলেন মমতাজ।

শাহজাহান তাঁকে হিরে জহরতে মুড়ে দিয়েছিলেন। নয়নরী হার মমতাজের পছন্দের গয়না। নাভি পর্যন্ত লম্বা সোনা আর রত্ন খচিত। চুনির চিক, মুক্তোর কানবালা ব্যবহার করতেন। তবে তাঁর নিজের সৌন্দর্যের কাছে গয়নার চমক ম্লান হয়ে যেত।

মমতাজের মৃত্যুর পর তাঁর অলঙ্কার শাহজাহান মেয়েদের হাতে তুলে দেন।

শাহজাহান মমতাজের প্রথমা কন্যা জাহানারা অত্যন্ত বিদূষী ছিলেন। কিন্তু রাজ বৈভবের জীবনে অভ্যস্ত ছিলেন না। সুফি ভাবধারায় বিশ্বাসী চলেন। তেমনি সহজ সরল উদার জীবন যাপন করতেন। বহু সম্পদের অধিকারী হয়েও গয়নার ঝাঁক জমক থেকে দূরে থাকতেন।

মোঘল আমলে মহিলাদের পাশাপাশি পুরুষরাও গহনা ব্যবহার করতেন। আংটি, কন্ঠহার, শিরোস্তান এসবই তাঁদের ব্যবহার করতে দেখা যেত। এছাড়া তলোয়ার, ছড়ি, ছোরার মতো অস্ত্র যা তাঁরা কিছুটা পুরুষালী সৌন্দর্য হিসেবে ব্যবহার করতেন সেসব অস্ত্রেও হিরে জহরতের কাজ থাকত। হাতির হাওদারে সোনা রুপোর ব্যবহার হত।

তবে এই বৈভব চিরস্থায়ী হয়নি। একদিন সময়ের স্রোতে সবই কাল সমুদ্রে ভেসে গিয়েছে। ভিনদেশি বণিকরা লুঠ করে নিয়ে গিয়েছে এই সম্পদ। এখন সবই ইতিহাসের রূপকথা। যা বারবার পাঠককে টেনে আনে কাহিনীর উপকন্ঠে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...