ভারতবর্ষ সত্যিই বিচিত্র। সর্বধর্ম সমন্বয়ের এই দেশে রয়েছে অসংখ্য মন্দির, মসজিদ, গির্জা সহ আরও নানাবিধ উপাসনা গৃহ। নানা ধর্মের নানা মত, নানা রীতি। হিন্দু রীতি অনুযায়ী মন্দিরে ফুল, বেলপাতা, ফল-মিষ্টি, দক্ষিনা উৎসর্গ করা হয় বিগ্রহের প্রতি। কিন্তু এই ভূ-ভারতেই রয়েছে এমন এক মন্দির যেখানে পুজোতে ডালায় সাজিয়ে দেওয়া হয় বইপত্র, খাতা-কলম। ভাবছেন তো এমন 'অবাস্তব' মন্দির ভারতের কোন জায়গায় আছে?
কেরলের ত্রিশূর জেলার এক মন্দিরে রীতি রয়েছে এমন রীতি। বইপত্র, খাতা-কলম দিয়ে পুজো সারা হয় সেখানে। কারণ, জ্ঞান আহরণকেই তারা পুজোর আসল 'প্রসাদ' বলে মনে করেন। সেইকারনেই পুজোর ডালায় ফুল-প্রসাদের জায়গায় তাদের কাছে প্রাধান্য পায় বইপত্র। কেরালা শিক্ষা-রুচি-ভাষা-সংস্কৃতি সম্বন্ধে একটু বেশীই ওয়াকিবহল তা সকলেরই জানা। জ্ঞান আহরণ করাটা যে কতটা জরুরি সেই সারমর্মই বোধহয় বুঝে ফেলেছেন কেরলের ত্রিশূর জেলার ওই মন্দির কমিটির ও সেখানকার বাসিন্দারা।
ত্রিশূরের ওই মন্দিরে মূলত মহাদেবকেই আধারনা করা হয়। সাধারণভাবে যেখানে মন্দিরে পুজো দিলে প্রসাদে কখনও খিচুড়ি ভোগ কিংবা কখনও ফল প্রসাদ খাওয়ানো হয় সেখানে কেরলের ত্রিশূরের সেই মন্দিরে প্রসাদে দেওয়া হয় বই, খাতা, পেন এবং বিভিন্ন জ্ঞান আহরণমূলক ভিডিওর ডিভিডি। এই শিব মন্দিরের নিয়মেই পুজো দিতে আসা ভক্তদের হাতে প্রসাদ হিসেবে হাতে তুলে নেন পড়াশোনার বিভিন্ন সামগ্রী। মন্দিরের এক পুরোহিত জানান, প্রসাদ হিসেবে তাঁরা মানুষকে বিভিন্ন বিষয়ের বই, ডিভিডি দিয়ে থাকেন। কারণ, জ্ঞানই আসল প্রসাদ।
এই মন্দিরের রয়েছে আরও একটি বিশেষত্ব। এই মন্দিরের গায়ে ঠাকুর-দেবতার ছবির বদলে খোদাই করা রয়েছে বিভিন্ন মনীষীদের ছবি। এর মধ্যে রয়েছেন আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু, সিভি রমণ, এপিজে আবদুল কালাম, গণিতজ্ঞ শ্রীনিবাস রামানুজান-সহ আরও অনেকে। অক্ষর জ্ঞান হওয়া শুরু হলেই মা-বাবারা তাঁদের সন্তানদের নিয়ে এই মন্দিরে যান, এমন রীতিই প্রচলিত রয়েছে সেখানে।