কেউ ব্যাটম্যানের পোশাকে। কেউ সেজেছে কাক। কেউ গ্ল্যাডিয়েডর। কারুর মাথা আবার হেলমেটে ঢাকা।
এ কোনও ফ্যান্সি ড্রেস পার্টির ছবি নয়, পরীক্ষাহলের দৃশ্য। এতক্ষণ যাদের কথা বলা হচ্ছিল, তারা সকলেই এসেছে পরীক্ষা দিতে। কিন্তু এমন অদ্ভুত বেশে কেন?
পরীক্ষার্থীদের এমন সাজের কারণ একটি নির্দেশিকা।
ফিলিপাইনের লেগাজপি শহরের বিকোল ইউনিভার্সিটি কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মেক্যানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ম্যারি জয় মানদেনে। পরীক্ষার হলে ছাত্রছাত্রীদের টুকলি বন্ধের উপায় খুঁজছিলেন তিনি। সেই ভাবনা থেকেই ছাত্রছাত্রীদের এক অভিনব নির্দেশ দেন। টুপি পরে পরীক্ষা দিতে আসতে হবে। কিন্তু মার্কেট থেকে কেনা যেমন-তেমন টুপি হলে হবে না। যাতে সম্পূর্ণ মাথা, মুখ এবং চোখের দু’পাশ ঢাকা পড়বে। এমন টুপি পরে হলে বসে অন্যের খাতায় নজর দেওয়া প্রায় অসম্ভব!
ছাত্রছাত্রীরা অবশ্য এমন নির্দেশে ক্ষিপ্ত-বিরক্ত তো নয়ই, বরং বোঝা যাচ্ছে যে তারা বেশ মজা পেয়েছে। এই টুপিকে তারা নাম দিয়েছে ‘অ্যান্টি-চিটিং হ্যাট’। টুপিতে নিজেদের সৃজনশীলতার তুখোড় নমুনা রেখেছে ছাত্রছাত্রীরা। ডিম রাখার পেপার ট্রে, শোলা, আইস ট্রে কে নয় টুপির উপাদান! আর যারা টুপি তৈরীতে সময় নষ্ট বাতুলতা ভেবেছে তারা রুমাল বা স্কার্ফকে ‘অ্যান্টি-চিটিং হ্যাট’ করে মাথা ঢেকে চলে এসেছে পরীক্ষার হলে মিড-টার্ম পেপারের পরীক্ষায়। একশোর ওপর পরীক্ষার্থী, সকলের মাথাই ঢাকা।
পরীক্ষার্থীদের এমন অভিনব টুপি পরে পরীক্ষা দেওয়ার কিছু ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে সম্প্রতি।অধ্যাপক ম্যারি জয় মানদেনে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, কয়েকবছর আগে থাইল্যান্ডের এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের নকল ঠেকাতে এমন টুপি পরে পরীক্ষা দিতে আসার নিদান দিয়েছিল। সেই দেখেই অনুপ্রাণিত হন তিনি। ‘সততা ও একাগ্রতা’ রক্ষার উপায় বের করেন।
তবে ছাত্রছাত্রীরা যে এমন কান্ড ঘটাবে তা আন্দাজ করতে পারেননি শিক্ষকরা। ২০১৩ সালে ব্যাংককে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা এপাশে–ওপাশে যেন তাকাতে না পারেন, সে জন্য চোখের দুদিকে দুই পাতা কাগজ লাগিয়ে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। অধ্যাপক মানদেনে বলেন, শিক্ষার্থীরা যে যাঁর মতো হাতে যা–ই পেয়েছেন, তা–ই দিয়ে টুপি বানিয়ে পরীক্ষা দিতে এসেছে।
গত অক্টোবরের শেষ দিকে মিড–টার্ম পরীক্ষা থেকে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ বিশেষ টুপি পরে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দেওয়া শুরু হয়। কয়েক শ শিক্ষার্থী এভাবে পরীক্ষার হলে হাজির হন, দেন পরীক্ষা। নকল ঠেকানোর জন্য পরীক্ষার্থীদের এমন টুপি পরার বিষয়টি খুব কাজে দিয়েছে বলে দাবি করেছেন অধ্যাপক মানদেনে।
অধ্যাপক মানদেনে বলেন, ওই বিচিত্র কৌশলে পরীক্ষা নেওয়ায় এ বছর তাঁর শিক্ষার্থীরা ভালো করেছেন। হলে কড়াকড়ি থাকায় শিক্ষার্থীরাও ভালোভাবে পড়াশোনা করেছেন। সময় শেষ হওয়ার আগেই অনেকে পেপার শেষ করে জমা দিয়েছে। নকল করতে গিয়ে কেউ ধরাও পড়ার ঘটনাও নেই।