ফুৎকারে ওড়ান মানসিক চাপ

ভারতে বিশেষ করে বাংলায় আমরা কি বাড়ির সাহায্যকারী ছাড়া নিজেদের এক দিনও ভাবতে পারি? চলতে ফিরতে, উঠতে বসতে আমাদের একজন সাহায্যকারী লাগেই। সে সব কাজে সাহায্য করে বলুন কিংবা হাতে হাতে কাজ এগিয়ে দেওয়া- আমরা এক মুহূর্তও চলতে পারিনা বাড়ির সাহায্যকারীটিকে ছাড়া। আবার কেউ কেউ এমনও আছেন, নিজেরাই কিছু ভুলে গেলে বা নিজেদের কাজে কোনও ভুল হলে একজন লোক পান, যার ঘাড়ে দোষটা চাপানো যাবে-সেই 'পুরাতন ভৃত্য'র মতন। নিত্যদিনের জীবনযাত্রায় ওই ব্যক্তিটি কিন্তু আমাদের সঙ্গে মিশে থাকে। এইবারে ভাবুন একবার, যখন সপ্তাহের কাজের দিনে অফিস যাওয়ার জন্য তৈরী হতে গিয়ে আপনি খবর পেলেন যে আর তিনি আসবেন না, অথবা সারা দিনের খাটুনি শেষে বাড়ি ফিরে দেখলেন, বাড়ির রান্নাঘরের সিংকে জমে রয়েছে আগের দিন সহ সেই দিনের ফেলে রাখা বাসন, তখন আপনার মনের অবস্থা কি হবে?

  কিন্তু আপনি নিশ্চয়ই জানেন, ভারতের বাইরে কিন্তু ছবিটা একেবারে আলাদা। সেখানে বাড়ির কাজে সাহায্য করার জন্য লোক রাখতে গেলে আপনাকে প্রায় মোটা রকম ব্যয় করতে হবে। কারণ ওখানে অনেকেই এভাবে পার্ট টাইম কাজ করে পকেট মানি জোগাড় করে নেয়, বিশেষ করে পড়ুয়ারা। তাই সাধারণতঃ তেমন তেমন রোজগার না হলে ওখানে সকলে নিজেদের ঘরের কাজ নিজেরাই সামলান। আমরা যেখানে ভাবতেই পারিনা বাড়ির তুচ্ছ কাজগুলো নিজেরা করব। এই প্রসঙ্গে একটা কথা জানাই আপনাদের। যা জানলে আর কিন্তু আপনি বাসন মাজতে তেমন হেলা করবেননা। আপনি কি জানেন,  বাসন মাজলে আপনি নিজের মানসিক পরিস্থিতি অনেকটা ভাল করতে পারবেন?  আপনার মানসিক অবসাদ কেটে যাবে। ফ্লোরিডা স্টেট্ ইউনিভার্সিটির এক দল গবেষক তাঁদের নতুন এক সমীক্ষায় এমনই চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন। মোট ৫১ জন ছাত্রকে নিয়ে এই গবেষণা চালানো হয়। তবে গবেষণা শুরুর আগে তাঁদের প্রত্যেককে একটি ছোট লেখা পড়ানো হয়, যেখানে লেখা ছিল বাসন মাজার উপকারিতা কী। তাঁরা সেই উপকারিতার মধ্যে লিখেছিলেন, 'যখন কেউ বাসন মাজেন, তখন তাঁর শুধু সেই কাজেই মন দেওয়া উচিত। এতে পুরোপুরি সেই কাজে মনোনিবেশ করা যায়। এতে প্রথম প্রথম নিজেকে একটু বোকা বোকা মনে হতে পারে, কারণ যেহেতু নিম্ন মানের কাজ এটি। কিন্তু এটাই চাবিকাঠি। মনে করতে হবে, আমি আমার প্রয়োজনে আমার নিজের কাজ করছি এটাই বাস্তব। আমি তাই সম্পূর্ণভাবে আমার শরীর এবং মন দিয়ে কাজ করব।' তাই ওই গবেষক দল বলছেন বলা ভাল দাবি করছেন, যিনি মন থেকে এই কাজ করবেন, অর্থাৎ যাঁর বা যাঁদের মনে সাবানের গন্ধ এবং জলের তাপমাত্রা নিয়ে একটি চলমান ধারণা তৈরী হয়, তাঁদের সেই কাজটির প্রতি ভালোবাসা জন্মায় এবং মানসিক চাপ কমে।

   তাহলে এই গবেষণার ফলে মোদ্দা কথা যা দাঁড়ালো, তা হল, যদি অফিসের কাজ বা নিজের জীবনের কোনো পরিস্থিতিতে আপনি অবসাদের শিকার হন, তাহলে বাড়ির সাধারণ কাজগুলো মন দিয়ে করুন। ভাবুন বাড়িটা আমার, সেখানকার কাজগুলো আমার। এভাবে ভেবে কাজ করতে পারলে আপনার বাইরের থেকে জন্ম নেওয়া মানসিক চাপের হাত থেকে আপনি সহজেই পরিত্রান পেয়ে যাবেন। 

  

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...