রাস্তার খাবার বললে কার ভালো লাগে না? হ্যাঁ নেহাত যদি নিয়ম মানা জীবন কাটান তাহলে হয়ত রাস্তার খাবার শুনলে চোখরাঙাতে পারেন। না ভয়ে ভয়েই বললাম আমি, আমরা সবাই একটাদিন বাড়ির খাবার ভুলে গিয়ে, সমস্ত নিয়ম ভেঙে তেল, নুন, মশলা দিয়ে জমিয়ে খেতে ভালো লাগে কিন্তু। এই গরমে ভালো খাবারের গন্ধেও খাবারের ওপর মন বসে না। গরমের ওপরে রাগ ও বিশাল অভিমান করে খাবারের ওপর মুখ বেঁকিয়ে বসে থাকি। অবশেষে রাগ ভুলে, মায়ের বকা খেয়ে খেতে হয়েই।
কিন্তু যদি আজ বলি গরমের এই অস্বস্তিতেও আমার শহরে খাবার কমে না? ঠিক খাবার না।
"শরবত"
হ্যাঁ, ঠান্ডা ফ্রিজের জল ঢকঢক করে খেয়ে শান্তির নিঃশাস ফেলি বটে, কিন্তু শরবতের স্বাদটা আলাদা। শরবতের আবেগটাও বেশ। না আমি নামি দামি A.C ঘরে বসে খাওয়া শরবতের কথা বলছি না। বলছি আমাদের ফেরার রাস্তার দোকান গুলোর কথা। হ্যাঁ, এতরকম শরবত আছে তা জানতাম না।
সত্যিই জানতাম না এতো রকমের কথা। টলিগঞ্জ মেট্রোর সামনে যে লাইন ধরে খাবারের দোকান তারই একদম শুরুটা এই শরবতের দোকান। 'মকটেইল কাউন্টার' | আজ সকালবেলা অনেকক্ষণ তাঁর কাজ দেখছিলাম। কারোর লস্যি, কারোর "সোডা সিকান্জি ", অনেকক্ষণ ধরে তার কাজ লক্ষ্য করে গেলাম।
আমার অনেক কৌতূহলের জবাব দিলেন উনি।
কত কিছু প্রশ্ন ছিল আমার কেমন বিক্রি হয়? কেমন ভাবে এই কাজের শুরু অনেক কিছু।
আমাদের রোজকারের জীবনে এই মানুষদের সাথে কথা বলা হয় না। তাই তারা লজ্জাও পায়। কিন্তু কাজ করতে করতেই বলে গেলো
"হ্যাঁ বিক্রি খুব ভাল হয়"
পরপর প্রশ্ন করে যাই নি, গল্পই করেছি,
কোন সময়ে বেশি বিক্রি হয় ?
তার মতে - "গরমকালে বেশি বিক্রি হয়",এবং গরমকালে শরবত বিক্রি করে একটা সুখও পান তিনি।
সরল ভাষায় সরলভাবেই বললো - "গরমে অনেকে এসে বলে ভালো হয়েছে, তখন তো ভালো লাগেই"
মনে তো প্রশ্ন এসেই যায় কেন এই দোকান, সব ছেড়ে কেন শরবত ?
" আর কিছু উপায় ছিল না, কি করবো এটাই পারতাম ভালো "
হ্যাঁ। তিনি স্বপ্ন দেখেন নি কোনোদিনও, জীবনের পরিস্থিতি তাকে এখানে এনে ফেলেছে। কিন্তু তাও এই কাজ তার মনে সুখ দেয়। মানুষ হেসে ফাঁকা গ্লাসটা রেখে যাওয়ার সময় তৃপ্তি করে প্রশংসা করে যায়, তখন তারও গর্ব হয়। তার ভাষায় "খুব ভালো লাগে"
কোথা থেকে এই শরবত বানানো শেখা ?
এই রহস্য কিন্তু উদঘাটন করলেন না আমাদের দাদা। সরল হেসে বললেন "ইটা তো বলা যাবে না"
কিন্তু গল্প করলেন অনেক কিছু, বললেন অবাঙালিরাই এটা বেশিই পছন্দ করে, তাদের থেকেই এই শরবত এসেছে আমাদের শহরে। বাঙালিরাও ভালোবেসে মেনে নিয়েছে ও তৃপ্তি নিয়ে খেতে শুরু করেছে। বিয়েবাড়িতেও কাজ করেন এখন তারা।
কিন্তু রাস্তার ধারে আমার শহরের মাঝে এই দোকান সবার তৃপ্তির নিঃশাস।
জিজ্ঞেস করলাম তার হাতে কোন শরবতটি বিশেষ, কোনটা তার "speciallity"
বললেন “তার speciality হল mocktail”
তার নিজের ভাষায় অনেক অভিজ্ঞতা ও মতামতও দিলেন। বললেন দামি ঠান্ডা ঘরে বসে সত্যি শরবত খায়, কিন্তু সেই একই স্বাদকে রাস্তায় এনে সাধারণ মানুষের সামনে এনে ফেলেছেন তারা।
কলকাতা চলছে দ্রুত গতিতে। চলছে বাস,ট্রাম,মেট্রো তার মধ্যেও এই ছোট ছোট খুশি গুলো আমার শহরে আছে। আমার শহরে জনপ্রিয় কিছু খাবার দাবার আছে যা এক নিমেষেই পাওয়া যায়। চলতে ফিরতে এর সন্ধান মেলে। রইল তারই প্রথম ঝলক।