মালদার সিংহাবাদ তিলাসন একেবারে বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থিত একটি অঞ্চল। এই বাড়ির নবম পুরুষের হাত ধরে প্রথম দুর্গাপুজো শুরু হয়েছিল। উত্তরপ্রদেশ থেকে এসে তিনি দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন। প্রায় আড়াইশো বছরের পুরনো দুর্গাপুজো এটি। ষষ্ঠীর দিন বোধনের সঙ্গে শুরু হয় দুর্গাপুজো। তবে মূর্তি তৈরি করা শুরু হয়ে যায় রথের দিন থেকে।
রথের দিন কাঠামো পুজো দিয়েই এই জমিদার বাড়ির পুজোর কাজ শুরু হয়। মহালয়ার দিন রাতে চক্ষুদান করা হয় দেবী মায়ের। আড়াইশো বছর আগে ঠিক যেভাবে দুর্গাপূজা শুরু হয়েছিল তেমন প্রথা মেনেই আজও পুজো হচ্ছে এখানে।
এই জমিদার বাড়ির পরিবারের মানুষদের কাছে রয়েছে বন্দুক। মোট ৫ রাউন্ড গুলি চালাতে চালাতে নদীর ধার থেকে আসেন এই বাড়ির পুরুষরা। তারপর শুরু হয় পুজো। আইনি মতে লাইসেন্স বন্দুক থেকে গুলি চালানোর এই প্রথা শুরু হয়েছিল আড়াইশো বছর আগে। আজও লাইসেন্সওলা বন্দুকের গুলির শব্দেই মায়ের পুজো শুরু হয়। গ্রামবাসীকে জানানোর জন্যই এই পাঁচ রাউন্ড গুলি চালানো হয়। সপ্তমীর দিন গুলি চালিয়ে পুজো শুরু হয়। আজও যিনি এই পুজোর কাজ করেন, তিনি প্রায় চল্লিশ বছর ধরে এই প্রথা মেনেই পুজো করে আসছেন। মোট তিনটি ঘট স্থাপন করে পুজো করা হয়। এই পরিবারের কুলদেবীর ঘাট, দেবী দুর্গার ঘট এবং কলা বউয়ের ঘট।
অষ্টমী ও নবমীতে প্রায় ৪০০ লোক নিমন্ত্রিত থাকেন। এই পুজোর ভোগ ওই অঞ্চলের কাছে ঈশ্বরের প্রসাদের মত। মোট ১১ জন ভাই এই পুজো সামলান। প্রত্যেকেই কলকাতার বাইরে বা অন্য কোথাও থাকেন। পুজোর সময় মালদায় এসে জড়ো হন। মালদার তিলাসন জমিদার বাড়ির পুজো ওই অঞ্চলের গ্রামবাসীর কাছে অন্যরকম তৃপ্তির। এখানে পূজোর কাঠামো তৈরি হলে তবেই পূজোর জামা কাপড় কেনেন গ্রামবাসী। এবং সেই জামাকাপড় মাকে ছুঁইয়ে তবে পুজোর সময় পরেন। গ্রামবাসীদের কাছে তিলাসন জমিদার বাড়ির পুজো একেবারে নিজের বাড়ির পুজোর মত। অষ্টমী ও নবমীর ভোগের পর দশমীর দিন খিচুড়ি ভোগ মায়ের কাছে উৎসর্গ করার মাধ্যমে পুজো শেষ হয়। এই পুজোর অন্যতম বিশেষত্ব আদিবাসীদের নাচ ও গানের আসর। পুজোয় সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষকে নিজের পারদর্শিতা প্রদর্শন করানোর সুযোগ দেওয়ার জন্যই এই প্রথাটি শুরু হয়েছিল দীর্ঘ সময় আগে।
প্রায় চোদ্দ রকমের ভোগ রান্না হয় এই পুজোর সময়। অন্য ভোগ থেকে শুরু করে দই , চাটনি, মিষ্টি দিয়ে ভোগ শেষ হয়। এই পূজোয় স্বয়ং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আসতে চেয়েছিলেন। তিলাসন জমিদার বাড়ির নামে বাংলাদেশের শেষ প্রান্তে রয়েছে সিংহাবাদ স্টেশন। দশমীর দিন অস্ত্র পূজোর মাধ্যমে প্রতিমার বিসর্জন হয়। এভাবেই পুজোর ৩-৪ টি দিন তিলাসন জমিদার বাড়ির পুজো ওই গ্রামের সব মানুষকে একেবারে আপন করে নেয়।