তিনশো বছরের পুরনো এই পুজোয় রবীন্দ্রনাথ ও মহাত্মা গান্ধী এসেছিলেন

শহরের জাঁকজমক থেকে অনেকটা দূরে একটা গ্রাম। বীরভূমের সুরুল। ৩০০ বছরের ইতিহাস এই গ্রামের সাক্ষী। সুরুলের রাজবাড়ি পরিচিত ভ্রমণপিপাসুদের কাছে। ইতিহাসের গন্ধ মাখা এই রাজবাড়ির দুর্গাপুজো যথেষ্ট পুরনো এবং সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী। 

সুরুলে সরকার বাড়ির পুজো নামে খ্যাত এই রাজবাড়ীর দুর্গাপুজো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাত্মা গান্ধীর মত গুণীজনেরা  এসেছেন একটা সময়ে। অষ্টাদশ শতকের প্রথম দিকে বর্ধমানের নীলপুর থেকে ভরতচন্দ্র সরকার এই গ্রামে এসেছিলেন। এই গ্রামের বাসিন্দা বাসুদেব ভট্টাচার্যের বাড়িতে তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন। তারপর গড়ে তোলেন নিজের বসতবাড়ি। এটি পরবর্তীকালে সুরুল রাজবাড়ী হিসেবে পরিচিত। ভরত যন্ত্রের আমল থেকেই এই বাড়িতে দুর্গাপূজা শুরু হয়েছিল। এই পরিবারের এক উত্তরসূরী শ্রীনিবাস ইংরেজদের সঙ্গে নানা ব্যবসার কাজে যুক্ত ছিলেন। সেই সূত্রে সাহেব মহলে তিনি যথেষ্ট সমাদ্রিত ছিলেন। জাহাজের পাল তৈরির কাপড় এবং নীল চাষের ব্যবসায় তিনি যুক্ত ছিলেন। অনেকে বলেন এই পরিবারের সরকার পদবীয় নাকি ইংরেজদের দেওয়া। তাদের আসল পদবী ছিল ঘোষ। একসময় জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সঙ্গেও খুব ভালো সম্পর্ক ছিল এই সরকার বাড়ির। শোনা যায় সেই সূত্রে মহাত্মা গান্ধীকে নিয়েও নাকি এই রাজবাড়িতে এসেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। 

এই রাজ বাড়ির দুর্গাপুজো তার অনন্য রীতির জন্য যথেষ্ট জনপ্রিয়। রথের দিন থেকে শুরু হয় প্রতিমা করা। দুর্গাকে এখানে দেখা যায় ডাকের সাজে। প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো অস্ত্র তুলে দেওয়া হয় প্রতিমার হাতে। পুজোর দিনগুলো সাজানো হয় পারিবারিক সোনার গয়নায়। শারদীয়ার শুরু থেকেই সুদূর বেলজিয়াম থেকে আনা নজর কারা ঝাড়বাতির আলোয় সেজে ওঠে রাজবাড়ী। 

এই পূজোয়ে কোনরকম বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবহার হয় না। রাজবাড়ী আলোকিত হয়ে থাকে মোমবাতির নরম আলোয়। সপ্তমী থেকে নবমী প্রত্যেক দিনই বলি দেওয়া হয় এই পুজোয়। দুর্গা ছাড়াও একসঙ্গে পুজো পান নারায়ণ। বলির সময় নারায়ণকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। বলি সম্পূর্ণ হয়ে গেলে তিনি ফিরে আসেন মূল গর্ব গৃহে। বিরাট থামে ঘেরা নাথ মন্দির ও দালান ঘিরে সন্ধ্যেবেলায় বসে যাত্রার আসর। ঐতিহ্য আর ভালোবাসার মিশ্রনে এই রাজবাড়ী গ্রামবাসীর একেবারে কাছের আপনজন।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...