কলেজ স্ট্রিট থেকে শিয়ালদহমুখো হয়ে এগোতে থাকলে রাস্তার দু’পাশে পসরার সার। সেসব পার হতে হতে চোখ টেনে নেবে বোর্ডিং হাউস আর লজ। আরও একটু এগিয়ে সুরেন্দ্রনাথ কলেজের মুখ। কলেজের গা ঘেঁষে রাস্তা। ডান হাতের এই রাস্তা পৌঁছে দেয় বৈঠকখানা বাজার। সে বাজার এক বিস্ময়। সকাল হোক বা দুপুর, সন্ধে হোক বা রাত মেলার খেলা চলছেই।
কিন্তু সেই বিস্ময়ের আগেও অপেক্ষা করে আছে আরও এক বিস্ময়। মাঝখানের রাস্তাটুকু। এ পথে যারা নতুন তাদের জন্য তো বটেই, বিস্ময় নিত্য পথিকদের জন্যও। পুরনো টিনের সাইনবোর্ড। ওজন দাঁড়ি পাল্লা। গুমটি দোকানে বস্তার ভিড় আর গন্ধ। প্রথম ধাক্কায় তার তীব্রতাই বলে দেবে আপনি ঠিক পথেই এগোচ্ছেন। এ হল কলকাতার বিখ্যাত শুঁটকি বাজার। আপনি শুঁটকির স্বাদ পছন্দ করতে পারেন নাও করতে পারেন, কিন্তু তা বলে এই বাজার আকর্ষণ হারায় না।
চিংড়ি, ইলিশ থেকে শুরু করে শুঁটকির আয়োজন বহু। শোল রুপচাঁদা, লইট্টা, ছুরি, ছোট চিংড়ি, পুঁটি, কাঁচকি ইত্যাদি মাছ আছে। বাদ নয় রুই, কাতলাও। তবে সবচেয়ে জনপ্রিয় লইট্যা শুঁটকি। উপমহাদেশে বিশেষ করে বাঙালির হেঁশেলে শুঁটকির চল নতুন না। বরং তার ইতিহাস বেশ প্রাচীন।আর্য সভ্যতার মানুষরা অবশ্য শুঁটকি ঘোর অপছন্দ করত। তবে সেই অপছন্দ বিশেষ তোয়াক্কা পায়নি খাইয়ে বাঙালির কাছে।
শুকনো মাছের গন্ধটুকু অবজ্ঞা করতে পারলে শুঁটকির স্বাদ জগৎ মাতানো। এপার বাংলা-ওপার বাংলা দুই বাংলাই কাবু সেই স্বাদে। হাল আমলে বিশেষ বিশেষ বাঙালি উৎসব শুঁটকির পদ আকর্ষণ বাড়িয়ে দিয়েছে। গরম ভাত হোক বা পান্তা ভাত।
শুঁটকির আর এক টান সিদল। বাঙালি হেঁশেলের পুরনো ম্যাজিক বলতে পারেন সিদলকে। সম্প্রতি তার জনপ্রিয়তা আরও কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে। ছোট মাছের শুঁটকি ও কচুর ডাটা দিয়ে তৈরি পদ ‘সিদল’। মূলত ওপার বাংলার রান্না। সিদল তৈরি হয় বিভিন্ন ধরনের ছোট মাছ, যেমন- মলা, ডারকা বা পুঁটির মতো বিভিন্ন ছোট জাতের মাছ দিয়ে।
শুকনো মাছ হামানদিস্তাতে গুঁড়িয়ে নেওয়া হত। সাদা মানকচু ও কচু ডাঁটা ধুয়ে ওই মাছের সঙ্গে বাটতে হয়। সঙ্গে শুকনো লঙ্কা, নুন, রসুন, আদা বাটা। তারপর হাতের মধ্যে মণ্ড করে গোল বা চ্যাপ্টা আকার দিতে হয়। কয়েকদিন রোদে শুকিয়ে শক্ত করে নিতে হয়। এভাবেই তৈরি হয় সিদল। তবে সিদল তৈরির একাধিক পদ্ধতি আছে।
শুঁটকি মাছ এখন এপার বাংলা-ওপার বাংলা ছাড়িয়ে অন্যান্য দেশেও রফতানির ভাবনা হচ্ছে। পূর্ব মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা দীঘা, শঙ্করপুর, জুনপুট, কাকদ্বীপ, ডায়মন্ড হারবার, হাওড়া থেকে পৌঁছে যাবে বিদেশে। এখন পাওয়া যাচ্ছে অনলাইনেও।