ভক্তের যিনি মঙ্গলসাধন করেন, তিনিই দেবী মঙ্গলচণ্ডী। প্রচলিত লোককথা অনুযায়ী, ধনপতি সওদাগরের স্ত্রী খুল্লরা প্রথম এই দেবীর পুজো শুরু করে।
দেবী মঙ্গলচণ্ডীর দুটি রূপ প্রচলিত আছে। একটি পদ্মে বিরাজিতা, অন্য রূপে দেবী সিংহবাহিনী।
সঙ্কট থেকে উদ্ধার পেতে এই দেবীর শরণে আসে ভক্তরা। অগ্রহায়ণ মাসের শুক্লপক্ষের মঙ্গলবার সঙ্কট মঙ্গলবারের ব্রত হয়।
একটি কাহিনী প্রচলিত আছে এই ব্রত নিয়ে।
সেই কাহিনী অনুযায়ী, লক্ষপতী নামে এক সওদাগর ছিল। তিনি বাণিজ্যে গিয়েছিলেন। বারো বছর পেরিয়ে গেলেও দেশে ফেরেননি লক্ষপতী। কেউই তাঁর হদিশ দিতে পারে না। কেউ বলে লক্ষপতীর তরী জলে ডুবেছে। সলিল সমাধি হয়েছে সওদাগরের।
এসব কথা শুনে তাঁর মা আর স্ত্রী কেঁদেই আকুল। একদিন পাড়ার এক গিন্নি সওদাগরের মাকে বলল, “বউকে দিয়ে সঙ্কট মঙ্গলবারের ব্রত করাও।”
শুক্লপক্ষের মঙ্গলবার সওদাগরের বউ পাড়ার এক এয়োস্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ব্রত পালন করল। আটগাছি দূর্বা, আট কণা আতপচাল রেশম কাপড়ে বেঁধে অর্ঘ্য তৈরি করল। কুটনো, বাটনা সেরে তারা খেতে বসল। হাঁটুর ভিতরে হাত রেখে কথা বন্ধ করে খাওয়া।
সেই গিন্নি তাদের বলল, “ খেতে খেতে কোনও কথা বলবে না, খাওয়া শেষ হলে দুজনে দুজনকে বলবে, সঙ্কট থেকে উঠি? দুজনেই বলবে, ‘উঠ’।”
দুই বউয়ের খাওয়া শেষ হয়ে এল। এমন সময় দামামার আওয়াজ এল কানে।
বাড়ির ঝি এসে বলল, “ ওই দাদাবাবু এসেছেন...”
শুনেই দুই বউ খাওয়া ফেলে তাড়াহুড়ো করে উঠে পড়ল। এদিকে ঝি এসে তাদের পাতের বাকি থাকা দই ভাত খেয়ে উঠে গেল।
সওদাগর বাড়িতে এসে স্ত্রীকে চিনতে পারল না। সব গহনা-ধনরত্ন সব স্ত্রীকেই দিয়ে দিল।
ছেলের বউয়ের কষ্ট দেখে শাশুড়ি অস্থির। সে কেঁদেকেটে সেই গিন্নির কাছে গিয়ে পড়ল। বলল, “যা হোক একটা ব্যবস্থা করো, বউ তো আর বাঁচে না।”
তখন সেই গিন্নি বলল, “ কী করবে বলো, বউ শেষপাতের ভাত ফেলে উঠে গেল, আর ঝি এসে সেই ভাত খেয়ে পুণ্যটুকু নিয়ে রানী হয়ে গেল...”
তা হোক। ফের ব্রত করতে বলো বউকে। পৌষমাস বাদ থাক। এ ব্রত মাঘেও করা যায়। মাঘে ফের ব্রত করে নিজেদের পাতা যেন নিজেরাই জলে ভাসিয়ে দিয়ে আসে।”
মাঘ মাসের শুক্লপক্ষ পড়তেই দুই বউ আবার ভক্তিভরে ব্রত পালন করল। অর্ঘ্য সাজিয়ে হাঁটুর ভিতর হাত রেখে কুটনো-বাটনা-রান্না খাওয়া করে শেষকালে দুজনে পাতা ভাসিয়ে এল।
এঁটো পরিষ্কার করতে করতে সওদাগরের বউ বললে,
“হাতের কঙ্কন বেচে কিনলুম দাসী
সে হল রাজমহিষী
আমি হলুম দাসীর দাসী”
সেই কথা কানে গেল সওদাগরের। তাঁর যেন হুশ ফিরে এল। হাত ধরে ঘরে নিয়ে গেল বউকে। তখন সব ঘটনা জানতে পারল।
মা মঙ্গলচণ্ডীর কৃপায় সওদাগর নিজের ভুল বুঝতে পারল। কিছুদিন পর সওদারের স্ত্রীর ছেলেও হল। সুখে শান্তিতে ঘরকন্না করতে লাগল তারা।
প্রতি অগ্রহায়ণ এবং মাঘ মাসে শুক্লপক্ষে সঙ্কট মঙ্গলবারের ব্রত পালন করেন বিবাহিত মহিলারা। গ্রামাঞ্চলে বিশেষ করে এই ব্রতের চল লক্ষ্য করা যায়।