চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে জন্ম নিয়েছিলেন শ্রীরামের পরমভক্ত হনুমান। কিন্তু, নানান পুরাণে তাঁর জন্মদিন ও জন্মকথা নিয়ে আছে নানান গল্প, নানান কাহিনি। সে-সব কাহিনিই আজ বলব :
'ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ'-এর কাহিনি থেকে জানা যায় যে, সেকালে কেশরী নামে এক অসুর ছিলেন। তাঁর কন্যার নাম ছিল অঞ্জনা।
কেশরী একদিন বানর জাতির এক রাজার সঙ্গে কন্যার বিয়ে দিলেন। সেই বানররাজের নামও ছিল, কেশরী।
বিয়ের অনেকদিন পরেও কেশরী-অঞ্জনার কোন সন্তান হল না। সেই নিয়ে দু'জনের মনেই দারুণ কষ্ট। তাঁদের কষ্ট দেখে ধর্মরাজের দয়া হল। একদিন যখন অঞ্জনা অরণ্যে ভ্রমণ করছিলেন, তখন অরণ্যবাসী নারীর রূপ ধরে ধর্মরাজ এসে তাঁকে পবনদেবের তপস্যা করতে বললেন।
শেষমেশ সাত হাজার বছর তপস্যা করে পবনদেবের বরে অঞ্জনার গর্ভে জন্ম নিলেন হনুমান। জন্মের ক্ষণটিতে আকাশে ছিল শ্রাবণী নক্ষত্র, দিনটি ছিল একাদশীর দিন আর মাসটি ছিল শ্রাবণ মাস।
'শিব পুরাণ'-এই আখ্যানে রয়েছে আবার এক অন্য কাহিনি :
সমুদ্রমন্থনের পর ভগবান বিষ্ণু দেবতা আর অসুরদের মধ্যে অমৃত ভাগ করে দেবার জন্য অসাধারণ সুন্দরী এক রমণীর রূপ ধারণ করেছিলেন। নাম নিয়েছিলেন, মোহিনী।
শিব সেই অপূর্ব মোহিনীরূপের কথা শুনে, বৈকুণ্ঠে গিয়ে বিষ্ণুকে অনুরোধ করেন সেই মোহিনীরূপ তাঁকেও দেখানোর জন্য। শিবের একান্ত অনুরোধে বিষ্ণু ধারণ করলেন মোহিনীমূর্তি। মোহিনীর সেই জগত বিমোহিনী রূপ দেখেই শিবের রেতঃপাত হল।
সেই রেতঃ সপ্তর্ষি একটি পাতার দোনায় সঞ্চয় করে রাখলেন জগতের কল্যাণে কাজে লাগাবেন বলে। অঞ্জনা যখন পুত্র কামনায় তপস্যা করছিলেন, তখন তাঁর কান দিয়ে প্রবেশ করানো হল সেই রেতঃ। এতেই গর্ভবতী হলেন অঞ্জনা, জন্ম হল মহাবীর হনুমানের।
'রামায়ণ'-এর উপাখ্যানে আছে হনুমানের জন্ম সম্পর্কে আর এক অলৌকিক কাহিনি :
রাজা দশরথ পুত্রেষ্টি যজ্ঞ করে অগ্নি দেবতার কাছ থেকে পেয়েছিলেন পুত্রদায়ী পায়েস। এই পায়েস রানি কৈকেয়ী যখন খেতে যাচ্ছিলেন, তখন একটা শকুন এসে সেই পায়েস ছিনিয়ে নিয়ে আকাশে উড়ে গেল।
অন্যদিকে সেই সময় অঞ্জনাও পুত্র কামনায় শিবের তপস্যা করছিলেন। শিব তপস্যায় তুষ্ট হয়ে তাঁর কাছে এসে বললেন যে, একাদশ রুদ্রের এক রুদ্র হয়ে অঞ্জনার সন্তান হয়ে তিনি জন্ম নেবেন। তবে তাঁকে পুত্র হিসেবে পেতে অঞ্জনাকে তপস্যা করতে হবে পবনদেবের। শিব তাঁকে শিখিয়ে দিলেন পবনদেবকে তুষ্ট করার মন্ত্র। সেই মন্ত্র কানে নিয়ে অঞ্জনা আবার শুরু করলেন তপস্যা।
তপস্যায় একদিন তুষ্ট হলেন পবনদেব। ঠিক তখনই সেই শকুন সেখান দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল কৈকেয়ীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া পায়েস নিয়ে। হঠাৎ তার ঠোঁট থেকে ফসকে গেল পায়েস। সেই পায়েস গ্রহণ করলেন পবনদেব এবং সেটা অঞ্জনাকে খেতে বললেন। এই পায়েস খেয়েই গর্ভবতী হলেন অঞ্জনা। জন্ম হল হনুমানের।
ফলে, একইসঙ্গে শিবের অংশজাত হনুমান পরিচিত হতে লাগলেন পবনপুত্র আর কেশরীনন্দন নামে। পূজা পেতে লাগলেন একাদশ রুদ্ররূপে।