কাঁথি মহকুমার কৃষ্ণনগর। রয়েছে ৩০০ বছরের পুরনো একটি রাজবাড়ী। এই রাজবাড়ীকে ঘিরে প্রচলিত রয়েছে অনেক অলৌকিক কাহিনী। এই রাজবাড়ীর দুর্গাপুজো সব সময় গ্রামবাসীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তার কারণ এখানে মা পূজিত হন পশ্চিমমুখী ঘটে। কাঁথি মহকুমার প্রাচীন বনেদী বাড়ির দুর্গাপুজো কিশোর নগর গড় রাজবাড়ির দুর্গাপুজো। প্রায় তিন শতাব্দীর ইতিহাস রয়েছে এই রাজবাড়ীর সঙ্গে। দীর্ঘদিন আগে শুরু হওয়া এই দুর্গা পুজোর জৌলুষ আজও ম্লান হয়নি। আজও কিশোরনগর গড় রাজবাড়ির দুর্গাপুজো দেখতে ভিড় জমান এলাকাবাসীরা।
পুজোর বয়স ৩০০ বছরেরও বেশি। প্রাচীন এই পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এখানে মায়ের ঘট পশ্চিমমুখী। শোনা যায় এই রাজবাড়ীর পূর্বপুরুষ রাজা যাদব রামরায় দেবী মায়ের স্বপ্নাদেশে দুর্গাপূজার প্রচলন শুরু করেছিলেন। ১৭২০ সালে শুরু হয়েছিল পুজো। শোনা যায় স্বাভাবিক নিয়মে ঘটকে পূর্ব দিকে রেখে দুর্গাপূজো শুরু হয়েছিল। পুজো চলার সময় হঠাৎ করে দেখা যায় দেবী মায়ের চোখ থেকে একটা অদ্ভুত জ্যোতি বেরোচ্ছে। আর ততক্ষণে পূজোর ঘট সরে গেছে পশ্চিম দিকে। সেই থেকে দেবী দুর্গার ঘটকে পশ্চিম দিকে রেখেই পুজো হয়।
এক সময় এই পুজোয় বলি প্রথা চালু ছিল। প্রতিবছর মোষ বলি দেওয়া হতো। প্রায় ২৬৫ বছর ধরে এই মহিষ বলি চালু ছিল। ১৯৮৫ সালের বন্যায় রাজবাড়ির গোশালা ভেঙে পড়ে। এই গোশালায় দেবীর উৎসর্গীকৃত মহিষ দেওয়াল চাপা পড়ে মারা যায়। সে বছর থেকেই বন্ধ হয়ে যায় বলিপ্রথা। পশু বলির বদলে আঁখ ও চালকুমড়ো বলি দেওয়া শুরু হয়। এখনো এই প্রথাই চলে। কাঁথি শহরের কিশোরনগর গড় রাজবাড়ির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল মা এখানে পুজিত হন পশ্চিমমুখী ঘটে। পশ্চিমবঙ্গে এই রাজবাড়ী ছাড়া আর কোথাও পশ্চিমমুখী ঘটে দেবী দুর্গার আরাধনা করা হয় না।
কিশোরনগর গড় রাজবাড়ি দুর্গাপূজা শুরু হয় ষষ্ঠীর দিন ঘটপুজোর মাধ্যমে। নিয়ম মেনে মহা সপ্তমী, মহা অষ্টমী, সন্ধিপূজো, মহানবমী এবং দশমীর দিন পুজো ও বিসর্জন হয়। নিয়ম মেনে সন্ধিপুজো হয় ১০০টি প্রদীপ জ্বালিয়ে। প্রদীপের সলতে তৈরীর কাজে হাত লাগান রাজ পরিবারের মহিলারা। আগে ঘট পুজো শুরু হতো কামান দাগার শব্দে। পুজোয় কাজুবাদাম দিয়ে তৈরি এক বিশেষ প্রকার সন্দেশ ভোগ হিসেবে দেওয়া হয়। কাঁথির অন্য কোন পুজোয় এই ভোগ দেওয়া হয় না। এই পূজোর ভোগের জন্য ওই কটি দিন রাজবাড়ীতে ভিড় হয়।
রাজবাড়ীর বেশিরভাগ পরিবারের সদস্যই বাইরে থাকেন। তবে দুর্গাপুজোর কটা দিন সকলেই চলে আসেন পুজোর জন্য। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই পুজোর জৌলুসখানিকটা কমলেও নিয়ম-নিষ্ঠা ও আচারের ক্ষেত্রে কোনো রকম ঘাটতি হতে দেন না পরিবারের সদস্যরা।