আমেরিকার এক সামরিক হাসপাতাল। চিকিৎসা চলছে অনেক আহত সৈন্যের। ওই হাসপাতালের প্রাণী-চিকিৎসা বিভাগে আনা হয়েছে এক পায়রাকে। পাখিটির বাঁ চোখ ক্ষত বিক্ষত। করোটির একটা অংশ থেকে রক্ত ঝরছে।
কিন্তু পাখিটার চোখে এক ফোঁটা জল নেই। বারবার ডানা ঝাপটাচ্ছে।
ওড়ার চেষ্টা করছে। ব্যর্থ হচ্ছে ।
ডাক্তার যখন তার চিকিৎসা শুরু করলেন, বোবা পাখিটার চোখে কিসের যেন আকুতি। যন্ত্রণার ছাপ স্পষ্ট। তবে সে যন্ত্রণা শারীরিক নয়।
সে উড়ে যেতে চাইছে। তার যে এখনও অনেক কাজ বাকি। যুদ্ধে মানুষ বাঁচানোর বার্তা নিয়ে পৌঁছতেই হবে তাকে। সৈন্যরা কোথায় খাবার পাবে, জল পাবে, নিরাপত্তা পাবে, সব উত্তর আছে তার ডানায় বাঁধা বার্তায়। সেইসব টুকরো টুকরো জীবন পৌঁছে দিতে চাইছে সে। শারীরিক অপারগতা কষ্ট দিচ্ছে তাকে।
এক সাহসী প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যোদ্ধা পায়রা। নাম 'দি মোকার'।
একান্নটি মিশনে সাফল্যের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছিল সে। একবারও ব্যর্থ হয়নি। এমনই তার সাহস। অদম্য জেদ ছিল তার সঙ্গী।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যোদ্ধা পায়রাদের মধ্যে সর্বাধিক মিশনে অংশগ্রহণ করার রেকর্ড ছিল তার।
নিজের বাহান্নতম যুদ্ধের মিশনে গুরুতর আহত হয় 'দি মোকার'। বাঁ চোখ হারিয়েছিল সে। মস্তিষ্কের ক্রেনিয়ামের একটা অংশ ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
ডাক্তাররা অনেক চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কোনভাবেই সারাতে পারেনি সেই ক্ষত।
তবে জীবনের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে ফেলেছিল এই সাহসী পায়রা। তাই ক্ষত সহ্য করেও দিব্যি খোশমেজাজে থাকত সে। বেঁচেছিল অনেকদিন।
শোনা যায়, যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য ছটফট করতো নাকি সে। নানা অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে ইচ্ছে প্রকাশ করত।
আহত হয়েও নিজের কাজের প্রতি ভালবাসা একটুও কমেনি তার। কোনো ভীতি কাবু করতে পারেনি তাকে।
তবে অঙ্গহানি হওয়ার পরেও নিজের শেষ মিশনে সফল হয়েছিল 'দি মোকার'। মোকার আমেরিকার একদল সৈন্যকে শত্রুপক্ষের গোপন আস্তানার কথা জানিয়ে দিয়েছিল। সেখান থেকেই আহত হয় সে।
মোকারের পাঠানো বার্তায় বিপদ বুঝতে পেরেছিল আমেরিকার সৈন্যরা। কুড়ি মিনিটের মধ্যে তারা ফ্রান্সের বিউমন্টে অবস্থানরত শত্রুপক্ষের উপর হামলা করে। অনেক আমেরিকাবাসীর প্রাণ বাঁচে তাতে।
১৯১৭ সালে জন্ম এই পায়রাটির। ১৯৩৫ সালে মারা যায়।
দি মোকারের মৃত্যুর পর তার মৃতদেহ নিউ জার্সির একটি মিউজিয়ামে রাখা রয়েছে। মার্কিন যুদ্ধবাহিনীকে দি মোকারের এই লড়াই আজও উদ্বুদ্ধ করে।
চিয়ার এমির পরে মোকারের এই জীবন-গাথা যোদ্ধা পাখিদের সাহসিকতার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।