মুড়ি মেলার সাতকাহন

মুড়িকে খাবার হিসেবে বাঁকুড়া জেলা শুধু অন্তর দিয়েই ভালোবাসেনি, নিছক তাকে নিয়েই গড়ে তুলেছে বেশ কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী মেলাও। মুড়ি মেলা। তবে প্রীতিতেই বলুন বা মেলাতেই বলুন, বাঁকুড়া একক ও অদ্বিতীয় নয়; পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলা সেই ঐতিহ্যের ধারক। গৌরবের অধিকারী। সারা বাংলায় আমরা ন'টি প্রাচীন মুড়ি মেলার সন্ধান পেয়েছি। আজ শুনুন তারই সাতকাহন:

এক

উত্তর চব্বিশ-পরগণার সরদারহাটি গ্রামের মুড়ির চাকের মেলা

 

বসিরহাটের সরদারহাটি গ্রামে পুরনো একটি বটগাছের নীচে রয়েছে বনবিবির থান। অঘ্রান মাসের শেষ বুধবারে দেবীর পুজো উপলক্ষে থান ঘিরে বেশ জমজমাট মেলা বসে। মেলা চলে তিন দিন। মেলায় মনিহারির দোকান বসে, নানান খাবারের দোকান বসে। সেই সঙ্গে বসে রাশি রাশি মুড়ির চাকের দোকান। 

গুড় গরম করে মুড়ির ওপর যথেষ্ট পরিমাণে ছড়িয়ে এবং জমিয়ে, তার ওপর চাপান দিয়ে, আলতো-কঠিন গোল গোল পেল্লায় সাইজের চাকতি বানানো হয়; একেই বলে ‘মুড়ির চাক’। কামড় দিয়ে কুড়ুর-মুড়ুর চিবোলেই জিভ পায় গুড় আর মুড়ির অপূর্ব সোয়াদ। সেই সোয়াদের টানেই মেলায় আসেন হাজার হাজার মানুষ। বনবিবির পাশাপাশি মুড়ির চাকই হল এই মেলার বিশেষ আকর্ষণ, বিশিষ্ট বিপণন। তাই এই মেলা সাধারণের কাছে ‘মুড়ির চাকের মেলা’ নামেই সুপরিচিত ও বিখ্যাত। 

স্থানীয় মানুষের মতে, এই মেলা শতবর্ষ প্রাচীন। কারণ, পূর্বপুরুষের আমল থেকেই কেউ কেউ এই মেলা হয়ে আসতে দেখেছেন, কেউ বা হয়ে আসছে বলে শুনেছেন। বহুকাল আগে থেকেই সরদারহাটি এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকার অনেক মানুষেরই রুজি-রুটির একমাত্র উপায় ছিল মুড়ির চাক তৈরি এবং বিক্রি। বাড়িতেই মুড়ি তৈরি করে স্থানীয় শিউলির কাছ থেকে গুড় কিনে তাঁরা তৈরি করতেন মুড়ির চাক। গ্রামে গ্রামে এবং গঞ্জ-শহরেও ফেরি করতেন। ফলে, সরদারহাটিতে যখন বনবিবির মেলা শুরু হল, সেখানেও তাঁরা ভিড় জমালেন। লোভনীয় মুড়ির চাকের জন্যই মেলাটি বিশিষ্ট হয়ে উঠল। সেই ট্র্যাডিশনই এখনও চলছে।

muri-mela-1

দুই

বাঁকুড়ার বৈতলে মুলো-মুড়ি মেলা


বৈতল গ্রামে একটি ধর্মঠাকুরের মন্দির আছে। বিগ্রহ কচ্ছপ আকৃতির। নাম, বাঁকুড়া রায়। শোনা যায়, নারায়ণ পণ্ডিত নামের এক ভিখারি নাকি প্রায় দে্ড়শ বছর আগে মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু, ভিখারি হয়েও কীভাবে তিনি মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন, তা আর জানা যায় না। 

অঘ্রান মাসে সন্তানকামী মহিলারা এখানে ধর্মঠাকুরের ব্রত করেন। প্রথম তিনটি শনিবার ব্রত পালন করে চতুর্থ শনিবারে সেই ব্রত উদযাপন করেন। সেদিনই মেলা বসে মন্দিরের প্রাঙ্গণ ও সংলগ্ন এলাকায়। মেলা চলে দু’দিন ধরে। তবে, শেষ শনিবারে ব্রত উদযাপনের পর সন্তানকামী নারীরা মন্দির প্রাঙ্গণে বসে মুলো সহযোগে মুড়ি খান। খেতে হয়। এটাই নিয়ম। সেই নিয়ম কবে থেকে হল, কীভাবে হল, তাও জানা যায় না। 

সম্ভবত, পুজো-আচ্চা চলতে চলতে কোন এক সময় এক বা একাধিক সন্তানকামী নারী মানত করে সন্তান পাওয়ার পরই এখানে সন্তানকামনায় ব্রতের ঐতিহ্য শুরু হয়। তাতে মুড়ি খেয়ে না-হয় ব্রতভঙ্গ হল, কিন্তু সঙ্গে মুলো আবশ্যিক কেন? সহজলভ্য বলে? নাকি, সন্তানকামী নারীর পুরুষলিঙ্গ গ্রহণের প্রতীক হিসেবে? কে জানে! মন্দিরের বয়স জানা গেলেও, মেলার বা ঐতিহ্যের বয়স জানা যায় না। 

যাই হোক, এখানে মুড়ি খাবার জন্য অনেকেই মুড়ি এবং মুলো বাড়ি থেকে আনেন। মেলায় বিভিন্ন সামগ্রীর মাঝে মুড়ি-মুলো কিনতেও পাওয়া যায়, অনেকে আবার সেখান থেকে কিনে খান। ফলে, শত বিপণির মাঝেও মুলো-মুড়ির বিপণন এ-দিন প্রধান হয়ে ওঠে। তাই এই মেলাকে বলা হয়, ‘মুলো-মুড়ি মেলা’।  

তিন

বাঁকুড়ার পুখুরিয়া গ্রামের মুড়ি মেলা


বাঁকুড়া জেলার অধিকাংশ গ্রামেই মাটির ছোট ছোট হাতিঘোড়ার প্রতীকে গ্রামদেবী বিরাজ করেন। এবং, তাঁদের নামের সঙ্গে ‘আসিনী’ শব্দ যুক্ত থাকে। ‘বিরাজমানা’ অর্থে। বিক্রমপুর বাজারের কাছেই পুখুরিয়া গ্রামে তেমনই এক দেবী আছেন, ‘মড়গড়াসিনী’। এখ্যানযাত্রার দিন দেবীর পুজো হয়। তবে মেলা শুরু হয় তার আগেই, মকর সংক্রান্তির দিন থেকে। চলে চার দিন। 

লোক মুখে মেলার নাম, 'মুড়ি মেলা'। এই মেলায় দোকানদানির ভিড় একেবারেই নেই। শুধু মানুষের ভিড়। চার দিন ধরে প্রতিদিন সকালে সপরিবারে মেলা লোকের ভিড় হয় এখানে। বাড়ি থেকে মুড়ি ও মুড়ি মাখার সামগ্রী নিয়ে এসে এখানে বসে জাতিবর্ণ নির্বিশেষে মুড়ি খান গ্রামের এবং এলাকার তামাম মানুষ।

শোনা যায়, এ মেলাও নাকি শতবর্ষ প্রাচীন। একদা এক বৃদ্ধকে গ্রামদেবী স্বপ্নে আদেশ দেন যে, দেবীর থানে বসে মুড়ি খেলে মঙ্গল হবে। সেই শুরু। আজও চলছে।

muri-mela-2

চার

পূর্ব বর্ধমানের দামোদর-তীরের মুড়ি মেলা


গলসি এবং আশপাশের পাঁচ-দশটা গ্রামে একদা লৌকিক দেবী টুসুর ব্রত ও উৎসবের খুব রমরমা ছিল। এখনও কিছু আছে। গলসির পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে দামোদর নদী। মকর-সংক্রান্তির দিন সকালে টুসুব্রতীরা এই নদীতে গান গাইতে গাইতে আসেন টুসুর ভাসান দিতে। টুসুকে ভাসিয়ে মকর স্নানও তাঁরা সেরে ফেলেন। স্নানের পর পাড়ে আগুন জ্বেলে আগুন পোহান। এই উপলক্ষে প্রচুর মানুষের সমাগম হয় এখানে। প্রচুর দোকানদানি মিলিয়ে মেলা বসে যায়।

প্রাচীন এই মেলাটি একদিনের হলেও এর বিশিষ্টতা হচ্ছে, মকরস্নানের পর দামোদরের তীরে বসে সবাই মিলে মুড়ি খাওয়া। মুড়ি এবং তেলে ভাজা কিনতে পাওয়া যায় মেলার দোকান থেকেই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মকরস্নানের পর পিঠেপানা ছেড়ে হঠাৎ এই গণ মুড়িভোজন কেন? মুড়ি সাধারণ গেরস্থালি খাবার। তা কিনে খাবার সামর্থ্য প্রায় সকলেরই থাকে। তাই এই দিনে ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে এক স্থানে এক খাবার খেয়ে এক হয়ে যাওয়ার বাসনা থেকেই হয়তো এই ঐতিহ্যের জন্ম।

পাঁচ

পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসা গ্রামের মুড়ি মেলা

 

কাঁকসা গ্রামের গোচারণ-মাঠের নাম, মাধব মাঠ। সেই মাঠে প্রাচীনকালে (কত প্রাচীন, কেউ জানে না) রাখালেরা যেত গরু চরাতে। প্রতিদিন। খাবার হিসেবে তারা সঙ্গে নিয়ে যেত গামছা বাঁধা মুড়ি। মাঠের কাছেই জঙ্গল ঘেরা পুকুর। পুকুরের নাম, 'দেবত্ব'। সেই পুকুরের জলে মুড়ি ভিজিয়ে খেয়ে তারা দিন শেষে গরু চরিয়ে বাড়ি ফিরত। মকর সংক্রান্তির দিনও তারা ছুটি পেত না। ভালো কিছু খেতেও পেত না। তবু তারা ওই পুকুরের জলে স্নান করে ও মুড়ি খেয়েই নিজেদের মতো করে মকর সংক্রান্তি পালন করত।

ক্রমে ক্রমে পুকুরের পাড়ে মনসার থান গড়ে উঠল। গ্রামের মানুষ মকর সংক্রান্তির দিন টুসুব্রতের শেষে টুসু ভাসান দিতে আসতে শুরু করল পুকুরটিতে। তারাও রাখালদের দেখাদেখি এই পুকুরে ডুব দিয়ে মকর সংক্রান্তি পালন করতে শুরু করল। ডুব দিয়ে মনসার থানে পুজো করে রাখালদের মতো এ-দিন পুকুর পাড়ে বসে মুড়িও খেতে শুরু করল। সেটাই রীতি হয়ে উঠল ধীরে ধীরে। সেই রীতিই রীতিমতো মেলার চেহারা নিল একদিন। আর সেই মেলার নাম হল, 'মুড়ি মেলা'। 

মেলায় এখন মুড়ি এবং তেলেভাজা দুই-ই কিনতে পাওয়া যায়। প্রচুর মানুষের সমাগমে মুড়ি-তেলেভাজার ঘনিষ্ঠ সুবাসে চারিদিক একেবারে ম ম করে ওঠে। মেলা একদিনের। মকর সংক্রান্তিতে শুরু, মকর সংক্রান্তিতেই শেষ।

muri-mela-3

ছয়

মালদার মহানন্দা তীরের মুড়ি-আলুরদমের মেলা


মুড়ি-আলুরদমের মেলা। চাঁচলের আশাপুর, রতুয়া, মাগুরা ও হরিশ্চন্দ্রপুর-গোহিলা গ্রামসংলগ্ন মহানন্দা নদীর তীরে মকর সংক্রান্তির পরের দিন থেকে এই মেলা বসে। চলে টানা পনের দিন। 

চাঁচলের চাষিরা আগেভাগেই আলুর চাষ করেন। এবং, মকর সংক্রান্তির আগেই তাঁরা আলু ঘরে তুলে ফেলেন। ফলে, নতুন আলুরদমে মেলা একেবারে জমে ওঠে। ঠোঙাভর্তি মুড়িও কিনতে পাওয়া যায়।  তবে খেতে হয় মহানন্দার জলে প্রথম দিনটিতে অন্তত কুব কুব কুব তিনখানা ডুব দিয়ে। আর তারপরই ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে গরম গরম এবং ঝাল ঝাল আলুরদম-মুড়ির আস্বাদ, একেবারে যেন স্বর্গীয় হয়ে ওঠে! 

মেলার সঠিক বয়স জানা যায় না। তবে, স্থানীয় মানুষজনের মতে মেলার বয়স নাকি প্রায় দেড়শ বছর। তাই যদি হয়, অতদিন আগে সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত সেকেলে মানুষেরা শীতকালীন দীর্ঘ অবসর বিনোদনের জন্য ভোজন বিলাসিতা নয়, সাধারণ মুড়ি-আলুরদমকেই বেছে নিয়েছিলেন; যার ঐতিহ্য আজও প্রবহমান।

muri-mela-4

সাত

হাওড়ার সিংটির মুড়ি-আলুরদমের মেলা


হাওড়া জেলার গ্রাম সিংটি। সেখানে পয়লা মাঘ মেলা বসে। মেলাটির নাম, 'ভাই খাঁ পীরের মেলা' হলেও; আসলে তা কিন্তু মুড়ি এবং আলুরদমের জন্যই প্রসিদ্ধ।

প্রাচীন এই মেলায় সবজি থেকে ঝুড়ি-বালতি হাজারো প্রয়োজনীয় জিনিসের সমারোহ হয়। তবু, তারই মধ্যে বিশিষ্ট হয়ে ওঠে মুড়ি এবং আলুরদম। রাশি রাশি কেরোসিন স্টোভ, মাটির চুলো, গ্যাসের চুলোয় এখানে হরদম তৈরি হয় চমৎকার স্বাদের হরেক রকম আলুরদম। প্লেট হিসেবে নয়, মুড়ির সঙ্গে তা কেজি দরে বিক্রি হয়। সম্ভবত সাধারণের সহজ-প্রীতি থেকেই এ-মেলায় পণ্য হিসেবে মুড়ি-আলুরদম প্রসিদ্ধ হয়ে উঠেছে। হয়ে উঠেছে মেলার মূল আকর্ষণ।

আট

বাঁকুড়ার কেঞ্জ্যাকুড়ার মুড়ি মেলা

 

প্রায় দেড়শ বছর আগের কথা। ভাণ্ডারবেড় গ্রামের জমিদার বাড়ির সন্তান রায়কিশোর চট্টোপাধ্যায় বিষয়আশয় ও সংসারের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে সন্ন্যাস নিলেন। বাড়ি ছাড়লেন। কিন্তু, অল্পদিনের মধ্যেই বিষয়সম্পত্তি নিয়ে জ্ঞাতিদের সঙ্গে মামলামোকদ্দমায় জড়িয়ে পড়ল তাঁর পরিবার। তখন তাঁকে পরিবার থেকে অনুরোধ করা হল ক'দিনের জন্য এসে সাক্ষী দিয়ে যাবার জন্য। অনুরোধ তিনি রক্ষা করলেন একটি শর্তে। জমিদার বাড়ি নয়, তাঁর জন্য লোকালয় থেকে দূরে একটি কুঁড়ে তৈরি করে দিতে হবে, সেখানেই তিনি এসে থাকবেন। ফলে, পরিবারের লোকেরা পাশের গ্রাম কেঞ্জ্যাকুড়ার কাছে দ্বারকেশ্বর নদের তীরে নির্জন জঙ্গলে তাঁর জন্য একটি কুঁড়ে তৈরি করে দিলেন। রায়কিশোর সেখানেই এসে উঠলেন।

জায়গাটা রায়কিশোরের ভালো লেগে গেল। সাধনভজনের জন্য আদর্শ বলে মনে হল। কাজ শেষ হওয়ার পর তাই সেখানেই তিনি থেকে গেলেন। কুঁড়ে ঘরে গড়ে তুললেন আশ্রম। প্রতিষ্ঠা করলেন 'সঞ্জীবনী মাতা' নামের ঈশ্বরীকে। 

সময় চলতে লাগল। তারপর কোন একসময় আশ্রমে বসতে শুরু করল মাঘ মাসের পয়লা থেকে চার তারিখ অব্দি হরিনাম সংকীর্তনের জমজমাট আসর।  সেই আসরে নামগান শুনতে ভিড় করতে লাগলেন বহু দুরদুরান্তের ভক্ত। বছর বছর ভিড় বাড়তেই লাগল।

ভক্তদের মধ্যে যাঁরা দূর থেকে আসতেন, তাঁরা পাথেয় হিসেবে সঙ্গে করে আনতেন মুড়ি। চব্বিশ প্রহর নামগান শুনে শেষ দিন অর্থাৎ চার তারিখ সকালে দ্বারকেশ্বরের জলে মুড়ি ভিজিয়ে খেয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিতেন। তাঁদের সেই নিতান্ত সাধারণভাবে মুড়ি খাওয়ার মধ্যে কালে কালে পুণ্য-অর্জন ও মঙ্গল আকাঙ্ক্ষা অনুপ্রবেশ করে আজকের মেলার রূপটি নিয়েছে।

মাঘ মাসের চার তারিখ স্থানীয় ও বহু দুরদুরান্তের মানুষ এখানে আসেন। সঙ্গে প্রচুর মুড়ি এবং মুড়ি মাখার সামগ্রী নিয়ে আসেন। পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দ্বারকেশ্বরের বালিতে বসে মুড়িভোজন উৎসবে মেতে ওঠেন। এঁদের মতো অসংখ্য মানুষের সমাগমে একদিনের 'মুড়ি মেলা' হয়ে ওঠে সার্থক মিলন মেলা।

muri-mela-5

নয়

হুগলির মুণ্ডখোলা গ্রামের হুরুম অর্থাৎ মুড়ি মেলা

 

উনিশ শতকের মাঝামাঝি অর্থাৎ আজ থেকে দেড়শ বছরেরও আগে পুকুর সংস্কার করতে গিয়ে হুগলির মুণ্ডখোলা গ্রামে একটি কালো পাথর পাওয়া যায়। সেটি ধর্মঠাকুররূপে পূজিত হতে থাকে। কালক্রমে মন্দির তৈরি হয়। মেলাও বসতে থাকে। বাৎসরিক বিশেষ পুজো উপলক্ষে মেলার শুরু। মাঘ মাসের শুক্লপক্ষে। চলে তিন দিন ধরে।

মুড়িকে মুণ্ডখোলার মানুষ বলেন, 'হুরুম'। তাই মেলাটিকে তাঁরা ডাকেন 'হুরুম মেলা' নামে। এখানে বসে মুড়ি খাবার কোন বাধ্যতামূলক নিয়ম নেই। তবে, এই মেলার বিশেষত্ব হচ্ছে, এখানে শুধুমাত্র বিপণন হয় মুড়ির। আর বিক্রি হয় মুড়ি ভাজার নানান সরঞ্জাম। আগে মেলাতেই কলমা ধানের চাল থেকে টাটকা মুড়ি গরমাগরম ভেজে বিক্রি হত। কিন্তু, এখন বিক্রি হয় কেবল বাড়ি থেকে ভেজে আনা মুড়ি। সুতরাং মুড়িকেন্দ্রিক এই মেলাটি বিশিষ্ট তো বটেই, অভিনবও।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...