মহিলাদের যজ্ঞের অধিকার বিষয়ে মন্ত্রের রচয়িতা এই বৈদিক নারী

প্রাচীন যুগ থেকেই ভারতবর্ষ বিদ্যার স্বর্ণভূমি। বৈদিক যুগ থেকেই ভারতে সাহিত্যচর্চা একটি বিশেষ স্থান দখল করে রেখেছে। এই ক্ষেত্রে বেদের নাম নিষ্ঠার সঙ্গে উল্লেখ করা যায়। সাহিত্য চর্চার প্রসঙ্গ এলেই নারী পুরুষের বিভেদের কথাও চলে আসে। বেদ এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম।

ভারতের অপৌরুষেয় বেদ সকল শাস্ত্রের আধার। সমস্ত বিদ্যার মূল আধার এই বেদ। বেদচর্চার ক্ষেত্রে পুরুষ ঋষিদের যেমন ভূমিকা থেকেছে, তেমনই মহিলা ঋষিরাও বেদ চর্চার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছেন।

তবে বৈদিক সাহিত্যের একদম শুরুর সময়টাতে মহিলাদের বেদ চর্চার অধিকার ছিল না। সেখান থেকে মেয়েদের এগিয়ে আসার বিষয়ে পৌঁছতে খানিকটা সময় লেগেছে। তবে মেয়েরা যখন একবার এই চর্চায় অংশ নিতে শুরু করেছিলেন থেমে থাকেননি কেউই।

বেদের সুক্তসমূহ শাস্ত্রদ্রষ্টা ঋষিরা ছাড়াও বিদূষী রমণীরাও রচনা করতেন। এই বিদূষীদের রচিত সূক্ত এখনো বেদে দেখতে পাওয়া যায়।

একটি কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে প্রাচীনকালে যখন অন্যান্য দেশের অধিবাসীরা বন্য জন্তুর মত জীবন-যাপন করত তাদের স্ত্রীরা অগ্রগতি তো দূরের কথা জীবনের সামান্য প্রয়োজনগুলোর ব্যাপারেও ওয়াকিবহাল ছিল না, এমনকী সেই সময় অন্যান্য দেশের পুরুষরাও বিভিন্ন ধাতুর ব্যবহার জানতো না, এই সময় ভারতের ঋষি এবং ঋষিকারা বেদের সূক্ত রচনার ব্যাপারেও নিজেদের কৃতিত্ব প্রমাণ করেছেন।

বিশ্ববারা অত্যন্ত বিদুষী নারী ছিলেন। বৈদিক সমাজে যে সমস্ত মহিলারা ভারতবর্ষের নাম উজ্জ্বল রেখেছেন বিশ্ববারা তাদের মধ্যেই একজন ছিলেন।

বিশ্ববারা অত্রি মুনির গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঋক বেদ সংহিতার পঞ্চম মন্ডলের দ্বিতীয় অনুবাকের অষ্টাবিংশ সূক্ত রচনা করেছিলেন। তিনি যে সূক্তগুলি রচনা করেছিলেন তাতে ছটি ঋক রয়েছে। ভাব ও ভাষার ক্ষেত্রে এই ছয়টি ঋক অতুলনীয়।

বেদচর্চার ক্ষেত্রে বিশ্ববারার আগমন ঘটেছিল অনেক ছোটবেলা থেকে। বিশ্ববারার বার বার মনে হতো যেসব অধিকার পুরুষদের রয়েছে সমাজে সেই সকল অধিকার নারীরও পাওয়া উচিত। এই ভাবনা থেকে বেদচর্চা শুরু করেছিলেন তিনি।

তবে পরবর্তীকালে মেয়েদের যজ্ঞের অধিকার নিয়ে প্রশ্ন করেছেন বিশ্ববারা। মেয়েদের যজ্ঞের অধিকার সংক্রান্ত মন্ত্রও রচনা করেছেন। তার রচিত মন্ত্রগুলির মধ্যে বেশিরভাগই নারীদের যজ্ঞের আহুতি দেবার মন্ত্র। নারীরা যজ্ঞ করলে আহুতি দেওয়ার সময় যে মন্ত্র উচ্চারণ করে তা বিশ্ববারা রচিত। ছোটবেলা থেকেই বিশ্ববারা নারীদের অধিকার নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন বৈদিক সমাজকে।

পরবর্তীকালে সেই ছোট্ট মেয়েটাই নারীদের যজ্ঞে আহুতি দেবার মন্ত্র রচনা করেন। নারী পুরুষের অধিকারের ক্ষেত্রে নানা বিষয়ে সাম্যের অভাব রয়েছে এখনো। মেয়েরা যজ্ঞে অংশগ্রহণ করে বটে কিন্তু তাকে বলা হয় অংশগ্রহণকারী হিসেবে। যজ্ঞে পৌরহিত্য করার ক্ষেত্রে বর্তমানেও মেয়েদের নিয়ে নানা বিতর্ক হয়। এই পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে বদলাচ্ছে। তবুও এইসব বৈদিক নারীরা সমাজের নানা ক্ষেত্রে পথপ্রদর্শক ছিল তা বলা যায়।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...