ওড়িশার সিমলিপালের জঙ্গল। পাশ দিয়ে বয়ে যায় খৈরি নদী। একদিন সেই নদীর কাছ দিয়ে হাঁটছিলেন সিমলিপাল ফরেস্ট রিজার্ভ ডিরেক্টর সরোজ চৌধুরী। হঠাৎ চোখে পড়ল সোনালী রঙের এক বিড়াল ছানা। নদীর ধারে খেলা করছে একা একাই। কি মনে হল ডিরেক্টর সাহেব তাকে নিয়ে সোজা চলে এলেন নিজেরপ বাংলোতে। সাত সপ্তাহের এক পুঁচকে বাঘিনী। নাম দিলেনল 'খৈরি'। সালটা ১৯৭৪। অক্টোবর মাস। শীতের টান লেগেছে হাওয়ায়।
তার পর থেকে খৈরি সেখানেই। ঠিক পোষ্য নয়, সরোজ রাজ চৌধুরীর মেয়ে হয়ে উঠেছিল সে।
কোনদিন শিকলে বাঁধা সে থাকেনি। ঘুরে বেড়াত এ ঘর- ও ঘর। তার দুই বন্ধুও ছিল। হরিণ আর কুকুর। দিব্যি খেলা করত তাদের সঙ্গে।
তার খাওয়াটি ছিল ভারি অদ্ভুত। সরোজ চৌধুরীর স্ত্রী তার মা। নিজের হাতে খাইয়ে দিতেন। ১০ কেজি করে পাঁঠার মাংস। মিল্ক পাউডার দিয়ে মাখিয়ে খাইয়ে দিতে হত।
দেশ বিদেশ থেকে অনেক সাংবাদিক সিমলিপাল জঙ্গলে এসেছেন খৈরির টানে। কাউকে কিচ্ছু বলত না সে। একেবারে লক্ষ্মী মেয়ের মতো হাবভাব।
ঘরে থাকতে থাকতে এক সময় জঙ্গল ভুলেছিল খৈরি। তাই বারবার ফিরে আসত ঘরের টানে। শরীর থেকে হারিয়ে যেতে বসেছিল জঙ্গলের গন্ধ। তাই জঙ্গলও হয়ত আর মেনে নিতে চায়নি তাকে।
খৈরির মৃত্যু হয় বুনো কুকুরের কামড়ে। বনের বিষ বিষিয়ে দিয়েছিল তার শরীর। ভিন্ন মতে, তার স্বজাতির কেউ বিক্ষত করেছিল তাকে। মানুষের ছোঁয়ায় বদলে যাওয়া গন্ধের খৈরিকে সহ্য করতে পারেনি তারা...