পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নানা গল্পকথা। তা সে লৌকিক হোক কিংবা ভৌতিক। আর ভৌতিক কোনো জিনিসের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বরাবরই একটু বেশি। যে জিনিষকে চোখে দেখা যায় না, যার অস্তিত্ব নিয়ে আজও সংকটে রয়েছেন গবেষকগণ তাদের ব্যাপারে কোনো আলোচনা হলে সকলেই চান কমবেশি অংশগ্রহণ করতে। আমাদের কলকাতার নানাপ্রান্তেও রয়েছে নানা হন্টেড হাউস। যার খোঁজ মোটামুটি সকলেই জানেন। কিন্তু এরকমই রহস্যে মোড়া এক ভৌতিক অরণ্যের খোঁজ নিয়ে এসেছি আজ আপনাদের জন্য। না, সেটা কলকাতায় অবস্থিত নয়। তার অবস্থান রয়েছে রোমানিয়ার ট্রানসিলভানিয়ার ক্লাজ নাপোকা শহরে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কি রয়েছে এই অরণ্যে.....................
শহরের বুকে ২৫০ হেক্টর জায়গা জুড়ে অবস্থিত এই অরণ্যটি নানা ভৌতিক, রহস্য, অতিপ্রাকৃতিক কার্যকলাপ প্রভৃতির জন্য হন্টেড জঙ্গলের তকমা অর্জন করেছে। অরণ্যটির নাম 'হোয়া বাচু'। প্রচলিত লোককথা অনুযায়ী, এই জঙ্গলে কেউ প্রবেশ করলে তার ফিরে আসার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। এই জায়গায় ছড়িয়ে রয়েছে এই জঙ্গল সংক্রান্ত নানা গল্প। জানা যায়, বেশ অনেক বছর আগে এই জঙ্গলে প্রায় ২০০টি ভেড়া চরাতে এসেছিলেন একজন মেষপালক। কিন্তু জঙ্গলে প্রবেশের পর অস্বাভাবিকভাবে হারিয়ে যান তিনি। তার কোনো খোঁজ শেষ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। কথায় বলে, জঙ্গলের গোলকধাঁধায় সকলে কিভাবে এবং কোথায় হারিয়ে যায় তা কেউই জানতে পারে না। এই জঙ্গলটি মানবচক্ষুর সামনে আসে ১৯৬০ সালে। জীববিজ্ঞানী আলেকজান্দ্রু সিফট এই জঙ্গলের উপর দিয়ে একটি ডিম্বাকৃতি বস্তুকে উড়ে যেতে দেখেন। তিনি সেই বস্তুর ছবিও তুলে রেখে দেন। এর পরে ১৯৬৮ সালে একজন সেনাবাহিনীর সদস্য এই জঙ্গলের উপর দিয়ে যাওয়া একটি উড়ন্ত বস্তু লক্ষ্য করেন। একই ঘটনা বারবার ঘটতে শুরু করলে সেখানকার বাসিন্দারা জানান, প্রায়শই তারা আকাশের মাঝে গোলাকার এবং অত্যন্ত তীব্র একটি আলোর বলয়কে ঘুরপাক খেতে দেখেন। ধীরে ধীরে সময় যত এগিয়েছে এই জঙ্গল নিয়ে মানুষের মনে উৎসাহ তৈরী হয়েছে। জানা গেছে, এই জঙ্গলে এরপর যারাই প্রবেশ করেছে তারা জীবিত অবস্থায় ফিরলেও দেখা গেছে, তাদের কারোর শরীরে ফোস্কা পড়েছে তো কারোর শরীর পুড়ে গেছে।
বিজ্ঞানীরা নানা পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে জানিয়েছেন, এই জঙ্গলটিতে তেজস্ক্রিয় বিকিরণের মাত্রা অত্যন্ত বেশি। তাই জন্যই বিনা আবরণে কেউ যদি সেই অরণ্যে প্রবেশ করে তাদের শরীরে ফোস্কা পড়তে থাকে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই জঙ্গলে বিকিরণের মাত্রা তীব্র হওয়া ছাড়াও এই জঙ্গলে চুম্বকীয় এবং তড়িৎচুম্বকীয় ক্ষেত্রেও যথেষ্ট বিচ্যুতি রয়েছে। জানা গেছে, এই জঙ্গলের মধ্যেই এমন একটি জায়গা রয়েছে যেখানে কখনো কোনো লতা বা গুল্ম জন্মাতে দেখা যায়নি। গাছ তো দূরের কথা। সেই জায়গার মাটি পরীক্ষা করেছেন বিজ্ঞানীরা কিন্তু সেখানে কোনো অস্বাভাবিকতা চোখে পড়েনি। স্থানীয়দের কথা অনুযায়ী, এই জায়গাটি হলো ভুতুড়ে ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু। তাদের ধারণা, অতৃপ্ত অশরীরী আত্মারা এইস্থানেই বসবাস করে থাকে। প্রচলিত কথা অনুযায়ী, এই জঙ্গলে বহু বছর আগে কিছু চাষিকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছিল। তাদের অতৃপ্ত আত্মাই ঘুরে বেড়ায় এই জঙ্গলে। মাঝে মাঝেই নাকি হাসির শব্দ, কান্নার আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায় এই জঙ্গলের ভিতর থেকে।
সত্যিই কি জঙ্গলটি হন্টেড? এর উত্তর খোঁজার জন্য গবেষণা চলছে বহুদিন ধরে। কারোর মতে এটি সাধারণ মানুষের মনে ভিড় করে থাকা কিছু ভ্রান্ত ধারণা আবার কারোর মতে জায়গাটি সত্যিই ভুতুড়ে। বিজ্ঞান এবং কুসংস্কারের মাঝখানে পড়ে আজও ভুতুড়ে হয়েই রয়ে গেছে এই জঙ্গলটি।