বৃষ্টির জলে বাঁচল মরা নদী

তীব্র দাবদাহে দেশের বেশিরভাগ রাজ্য খরা পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। চাষবাস তো দূরের কথা, তৈরি হয়েছে পানীয় জলের সঙ্কট। এই পরিস্থিতির হাত থেকে বাঁচতে বেশ কিছু শহরে বাসিন্দারা নিজেরাই দায়িত্ব নিয়েছে জল বাঁচাবার।

খরা পরিস্থিতি সবচেয়ে  প্রকট দক্ষিণের রাজ্যগুলোতে। তামিলনাড়ুর ২৪ টি জেলা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ। কর্নাটকের আশি শতাংশ রাজ্য খরাদুর্গত।

এই পরিস্থিতির একেবারে অন্য ছবি তামিলনাড়ুর ভেলরে।  অন্যত্র চরম জলকষ্ট থাকলেও ভেলরে জলের অভাব মিটেছে। আগে খরার তীব্রতায় পুড়তে হত এই জেলাকেও। এক সময় বন্ধ হয়ে যায় চাষবাস। গ্রামগুলির বাসিন্দারা অনেকেই জমি বিক্রি করে শহরে গিয়ে অন্য পেশা বেছে নিচ্ছিলেন। কিন্তু এখন ছবিটা রাতারাতি পালটে গিয়েছে।

কয়েক দশক আগে ভেলরে জলের প্রধান উৎস ছিল নাগানাথি নদী। গত ১৫ বছর ধরে সেই নদী মৃত। তার জেরে বেশ কিছু গ্রাম ভয়ঙ্কর ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। চাষবাস একপ্রকার বন্ধ হয়ে যায়। ধানজমি শুকিয়ে বন্ধ্যা। এমনকি পানীয় জলেরও আকাল তৈরি হয়।  

সেই দুঃসহ অভিজ্ঞতা থেকেই নদীর গুরুত্বের কথা বুঝতে পারে মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দারা জল শুকিয়ে মরে যাওয়া নাগানাথি নদীকে আবার জলের ধারায় ভরিয়ে তোলার দায়িত্ব কাঁধে নেয়। যারা এই গুরুদায়িত্ব সবেচ্ছায় কাঁধে নিয়েছিলেন তাঁরা সকলেই মহিলা।

এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে প্রায় ২০,০০০ মহিলা নদী বাঁচানোর কাজে সামিল হয়েছিলেন। চার বছর ধরে কাজ চলে। গোটা এলাকা জুড়ে খনন করা হয় ৩৫,০০০ টি কুয়ো । সেখানে জমা হতে থাকে বৃষ্টির জল। বৃষ্টির জল থেকেই আস্তে আস্তে আবার শুরু করে নদীর চলন।

উত্তরাখণ্ডের রাজ্যের পাউরি গারোওয়াল রাজ্যেও এভাবে বৃষ্টির জল সংরক্ষন করা হয়। বেশ কিছু গ্রামে বর্ষার জল সংরক্ষন করা হয়। উত্তর-ভারতের এই গ্রামগুলি সারা দেশের কাছে উদাহরণ।  

নীতি আয়োগ থেকে সম্প্রতি প্রকাশিত এক রিপোর্টেও উদ্বেগ প্রকাশ করে হয়েছে দেশের খরা পরিস্থিতি নিয়ে। এখন থেকে ব্যবস্থা না নিলে যে ভয়ঙ্কর আগামী অপেক্ষা করা আছে সতর্ক করা হয়েছে সে ব্যাপারেও। রিপোর্টে জানানো হয়েছে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের  মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ পানীয় জল পাবেন না।   

সম্প্রতি বৃষ্টির জল সংরক্ষন করার জন্য গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে সক্রিয় হবার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র সরকার। উত্তরপ্রদেশের সোনভদ্রতে ৬৩৭ গ্রাম প্রধানকে প্ৰধানমন্ত্রীর চিঠি লিখেছেন। চিঠিতে অনুরোধ করা হয়েছে বর্ষার জল সঞ্চয়ের জন্য পদক্ষেপ নিতে। একই সঙ্গে গ্রামের মানুজনকে বর্ষার জল সঞ্চয় করতে উৎসাহ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ২০২০ সালে ভূগর্ভস্থ জলস্তর শেষ হয়ে যাবে যে দেশের ২১টি শহরে। চেন্নাই, দিল্লি, বেঙ্গালুরু, হায়দ্রাবাদের মত মেট্রোসিটিগুলোও সেই তালিকায় আছে।  

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...