৩৫ বছরের সুমনা ধর। ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের কর্মচারী। ঠিক করলেন মা হবেন। একাই।
তখন দেশে একক-মাতৃত্ব-আইন জটিল। ‘একা নারী’র মা হওয়াটা প্রায় দুর্বার বিষয় বলা যায়।
সালটা ২০০১।
সুমনা ধরের ‘সিঙ্গল মাদার’ হওয়ার সিদ্ধান্ত স্বাভাবিক ভাবেই সহজে মেনে নিল না সমাজ। শিক্ষিত স্বনির্ভর নারী। কিন্তু তাঁর স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাটা সমাজ মেনে নেয়নি।
পরিবার হোক বা কাজের জায়গা বাধা এলই। আইন- আদালতের রাস্তাটাও খুব সহজ ছিল না। সুমনা’র লড়াই টা একান্ত ভাবেই তাঁর একার ছিল। পিছিয়ে এলেন না। একটার পর একটা যুদ্ধ চলতেই লাগল।
শেষপর্যন্ত জানতে পারলেন, মুর্শিদাবাদের কোনও এক প্রত্যন্ত গ্রামে জন্মানো এক শিশুকে দত্তক নিতে পারেন তিনি।
কিন্তু দত্তকের নেওয়ার অধিকার পেলেও কোনও শিশুকে নিজের কাছে পেতে আইনি জটিলতা শেষ হল না। আরও বেশ কিছুটা সময় লেগে গেল। এক বছর পর পেলেন ধ্রুবকে। এক মাসের ছোট্ট শিশু।
কর্মসূত্রে নাইরোবি পাড়ি দিয়েছিলেন সুমনা। চার বছরের জন্য সেখানেই।
বছর চারেক পর সুমনা মনে করলেন ধ্রুব’র একজন সঙ্গীর প্রয়োজন। বিদেশে বড় একা একা বেড়ে উঠছে তার শৈশব। একটা ভাই বা বোন।
মাথায় এল আরও এক সন্তানের ভাবনা। ঠিক করলেন নাইরোবি’র কোনও শিশুকে দত্তক নেবেন। নিজের দেশে সন্তান দত্তক নিতে নিয়ে যে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছিল সেই পরিস্থিতিকে জীবনে দ্বিতীয়বার আর ফেরাতে চাইছিলেন না তিনি।
দুই বন্ধুর পরামর্শে, সে দেশেই দ্বিতীয় সন্তানকে দত্তক নেবেন বলে ঠিক করলেন। এবং সে দেশের দত্তক আইন অনেক বেশি শিথিল।
৬ মাস সময় লেগেছিল সন্তানকে কাছে পেতে। চেয়েছিলেন এবার ‘মেয়ে’ আসুক।
সুমনা মেয়ের নাম রেখেছেন ‘দুর্গা’।
নাইরোবির এক আশ্রমে দুর্গাকে দেখে এসেছিলেন। আড়াই মাস বয়স তখন তার।
২০১০ সালে দেশে ফেরেন সুমনা।
আবার শুরু হয় নতুন লড়াই। দুর্গা এই দেশকে, এই মাটিকে নিজের মনে করলেও ‘ভিনদেশি’ বা চামড়ার রং নিয়ে ওঠা প্রশ্নগুলো তার পিছু ছাড়ে না। নানা ধরনের কৌতূহলী চোখ। রাস্তা, স্কুল কিংবা অন্য কোথাও।
তাঁদের প্রশ্ন দুর্গার গায়ের রং নিয়ে, মাথার চুল, দেশ নিয়ে। ধ্রুব’র ক্ষেত্রে সমস্যাগুলো অন্য।
দুই সন্তানকেই তাদের নিজের মাটি চিনিয়েছেন সুমনা। দুর্গাকে নিয়ে আবার গিয়েছিলেন নাইরোবি। তার পুরনো আশ্রমে। যেখান থেকে সুমনা পেয়েছিলেন তাঁকে।
ধ্রুবকেও মুর্শিদাবাদ নিয়ে গিয়েছেন।
কিন্তু তারা সুমনা’তেই স্বচ্ছন্দ।
দুর্গার কেনিয়ার সিটিজেনশিপ এখনও আছে। ১৫ বছর বয়স হলে সে নিজেই ঠিক করবে ভারত না নাইরোবি কোথায় থাকবে সে।
সন্তানদের ওপর কোনও কিছুই জোর করে চাপিয়ে দিতে চান না সুমনা।