চারদিকে পাহাড়। মাঝখানে টলটলে নীল জল। আকাশের রং যেন নেমে এসেছে জলের বুকে। হাউজ বোট হাতছানি দিয়ে ডাকে। চোখ ফেরানো যায় না রঙিন ফুল দিয়ে সাজানো শিকারাগুলোর দিক থেকে। জন্নত কাশ্মীর। ভুবন ভোলানো রূপ তার। মানুষ কাশ্মীর আসে ডাল লেকের টানে। বহু মানুষের রুটি-রুজির সংস্থান শ্রীনগরের বিখ্যাত এই লেককে নির্ভর করে।
কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে ক্রমশ দূষিত হতে শুরু করেছিল ডাল লেক। শহরের নোংরা জল সরাসরি এসে পড়ে লেকের জলে। সঙ্গে হাউস বোটের বর্জ্য। জন্নতের রূপে দাগ ধরতে শুরু করেছিল। কিন্তু তার খেয়াল কেউ রাখেনি। ২০০৯ সালে জম্মু-কাশ্মীর দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। তাতে ডাল লেকের জল এবং পরিবেশ কীভাবে দূষিত হয়ে পড়ছে তার ভয়াবহ পরিস্থিতি জানা যায়।
তবে সবাই এড়িয়ে গেলেও ডাল লেকের এমন বিপর্যস্থ অবস্থা নাড়িয়ে দিয়েছিল অন্য এক জন্নতকে। ৭ বছরের এক ছোট্ট মেয়ে। কাঁধে তুলে নিয়েছিল ডাল লেককে স্বচ্ছ রাখার ভার।
২০১৮ সাল থেকে প্রতিদিন। এই বছরের প্রথম সামনে আসে জন্নতের উদ্যোগ।
ছোট্ট ভিডিয়োটিতে দেখা যায় জন্নতকে। সঙ্গে বাবা তারিক আহমেদ। সহনাগরিকদের উদ্দেশ্যে একটি বার্তা দিয়েছিল সে। জানিয়েছিল সে আর তার বাবা ডাল লেক কে বর্জ্যমুক্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু সেই চেষ্টা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। তাই বাকিদেরও এগিয়ে আসতে হবে।জন্নতের বার্তা ছুঁয়ে গিয়েছিল বহু মানুষকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল সেই ভিডিয়ো। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে সেই ভিডিয়ো পোস্ট শেয়ার করেছিলেন।
কাশ্মীরের জন্নতের কাহিনী এবার জায়গা করে নিল স্কুলের পাঠ্য বইতে। জন্নতের বাবা তারিক আহমেদ খবরের সত্যতা মেনে জানিয়েছেন, ‘ হায়দ্রাবাদে তাঁর এক বন্ধুর প্রথম চোখে পড়ে স্কুলের পড়ার বইতে জন্নতের গল্প। তিনিই তাঁদের জানান’। গোটা বিষয়টি তাঁদের কাছে অত্যন্ত সম্মান এবং গৌরবের।
প্রসঙ্গত জন্নতের ভিডিয়ো বার্তা ভাইরাল হওয়ার পর ডাললেকের স্বাস্থ্য উদ্ধারে আরও বেশি করে নজর দেওয়া শুরু করে জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন। মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি স্বয়ং ডাল লেকের স্বচ্ছতার বিষয়টি ‘মনিটারিং’ করতে শুরু করেছিলেন।
জন্নতের ইচ্ছে আর আত্মবিশ্বাসের গল্প বারবার মনে করিয়ে দেয় গ্রেটা থুনবার্গের কথা। ওই একই বছর থেকেই পৃথিবীর অপর প্রান্তে আরও এক কিশোরী কন্যে পৃথিবী বাঁচানোর ভার তুলে নিয়েছিলেন নিজের ছোট্ট কাঁধে। থেমে নেই সে। থেমে নেই জন্নতও।