চৈত্র মাসে শুক্লপক্ষে ষষ্ঠী তিথিতে মহিলারা অশোকষষ্ঠী ব্রত পালন করেন। অশোক ফুলের নামে ‘অশোক ষষ্ঠী’। দিনটির সঙ্গে ওতঃপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে চৈত্রে ফোটা অশোক ফুল।
ছ’টি মুগ কড়াই ও ছটি অশোক ফুলের কুঁড়ি দই মাখিয়ে খাওয়া হয়। কোনওভাবেই জিভে ঠেকানো যায় না। ষষ্ঠী পুজোর পর দই বা কাঁঠালি কলার মধ্যে ফুলের কুঁড়িগুলি রেখে দাঁতে না লাগিয়ে গিলে খাওয়া হয়। হিন্দুঘরের সন্তানবতী মহিলারা সন্তান এবং পরিবারের মঙ্গলকামনায় এই ব্রত পালন করে।
অশোক ষষ্ঠীর ব্রত কথা
একদা অশোক বনে বাস করতেন এক ঋষি। তিনি একদিন এক অশোক গাছের তলায় একটি শিশু কন্যাকে কাঁদতে দেখলেন। আহেপাশে কাউকে না দেখতে পেয়ে তিনি সেই অনাথ শিশুটিকে কুটিরে নিয়ে এলেন। ধ্যান বসে জানতে পারলেন, শিশুটি এক হরিণীর সন্তান।
ঋষির কুটিরেই শিশুটি বড় হতে থাকে। অশোক গাছের নীচে তাকে পাওয়া গিয়েছিল বলে মুনি তার নাম দেন অশোকা। মেয়েটি ছিল অপূর্ব সুন্দরী। মুনি এক সময়ে চিন্তা করেন এই কন্যাকে আর বেশি দিন তাঁর কুটিরে রাখা ঠিক হবে না। ভালো পাত্র দেখে বিয়ে দিতে হবে। কিন্তু বহু চেষ্টা করেও উপযুক্ত পাত্র না পেয়ে মুনি বড়ই বিরক্ত হয়ে পড়েন। ঠিক করেন পর দিন ঘুম থেকে উঠে, যার মুখ আগে দেখবেন, তার সঙ্গেই কন্যার বিবাহ দিবেন।পর দিন ঘুম ভেঙেই তিনি দেখেন, কুটিরের সামনে এক সুদর্শন যুবক দাঁড়িয়ে। সে একজন রাজপুত্র। মৃগয়া করতে বনে এসেছিল। পথ ভুলে এখানে এসেছে। মুনির তাকে খুবই পছন্দ হয়। সঙ্গে সঙ্গে অশোকাকে বিবাহের প্রস্তাব দেন। রাজপুত্রও অশোকার রূপে মুগ্ধ হয়ে বিবাহ করতে সম্মত হয়।
বিয়ে দিয়ে মুনি চিন্তা মুক্ত হন। অশোকাকে শ্বশুরবাড়ি পাঠানোর সময় মুনি তার আঁচলে কিছু অশোক ফুল আর অশোক গাছের বীজ বেঁধে দেন। বলেন, চৈত্র মাসের শুক্ল ষষ্ঠীর দিন ওই শুকনো অশোক ফুলগুলি জল দিয়ে খেতে। ওই দিন অন্ন না খাওয়ার আদেশ দেন। আর শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার সময় রাস্তার দু’ধারে অশোক বীজগুলি ছড়িয়ে দিতে বলেন।
অশোকা কুটির থেকে পথের দুই ধারে অশোক বীজ ছড়াতে ছড়াতে শ্বশুরবাড়ি পৌঁছোয়। রাজমাতা তাকে বরণ করে ঘরে তোলে। দেখতে দেখতে কেটে যায় বহু বছর। অশোকার সাত পুত্র ও এক কন্যা হয়। তাদের বিবাহও হয়। এদিকে শ্বশুর, শাশুড়িও মারা যান। এক চৈত্র মাসের শুক্ল পক্ষে অশোকার শ্বশুরের শ্রাদ্ধ। অশোকা সন্ধেবেলা পুত্রবধূদের ডেকে বলে, আজ অশোক ষষ্ঠী। আজ আমি অন্ন মুখে দেব না।
শাশুড়ির আদেশ মতো, বৌমারা অশোকার জন্য মুগকলাই রাঁধতে থাকে। কিন্তু ঘুটেতে একটা ধান ছিল। তা কীভাবে মুগকলাইয়ে পড়ে ফুটে খই হয়ে যায়। নিজের অজান্তেই সেই খাবার খেতেই অশোকার জীবনে নেমে আসে ঘোর সর্বনাশ!
তার স্বামী, পুত্র, পুত্রবধূরা মারা যায়। অশোকা মনের দুঃখে কাঁদতে কাঁদতে মুনির আশ্রমে ফিরে যায়। সেই অশোক গাছগুলি দেখে রাস্তা খুঁজে পায় সে। ততদিনে গাছগুলিও বিশাল হয়ে গিয়েছে।
মুনি মেয়ের থেকে তার কষ্টের কথা শুনে ধ্যানযোগে জানতে পারেন, ওই মুগকলাইয়ে খই থাকায় এই বিপত্তি। তিনি সঙ্গে সঙ্গে ঘটি থেকে মন্ত্রপুত জল দিয়ে বলেন, এই জল মৃতদের গায়ে ছিটিয়ে দিতে। তাহলে তারা প্রাণ ফিরে পাবে। আর চৈত্র মাসের ষষ্ঠীর দিন মা ষষ্ঠীর পুজো দিয়ে মুগকলাই, আর দই সহযোগে অশোক ফুল খেতে বলেন। ওই দিন অন্ন খেতে বারণ করেন। তাহলেই সংসারে সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধি বজায় থাকবে।অশোকা সেই কথা মতো জল নিয়ে রাজবাড়ি এসে মৃতদের গায়ে ছিটিয়ে দেয়। যেন ঘুম থেকে জেগে ওঠে তারা। অশোকা তাদের সব কথা জানায়। তারা অবাক হয়ে যায়। তারপর দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে এই চৈত্র মাসে শুক্লপক্ষে ষষ্ঠী তিথিতে অশোক ষষ্ঠীর কথা।