‘ফণী’ নামকরণ যেভাবে

তার আসার খবরে জনজীবন রীতিমত তঠস্থ ছিল, এমনই তার মহিমা। ভুয়ো নয়, তিনি এসেছিলেন হিসেবমতোই। কিছুটা অঞ্চল পরিক্রমা করে, মেজাজ  পরিবর্তন করে মুখ ফিরিয়ে প্রভূত ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচিয়ে দিয়ে অন্যদিকে অগ্রসর হয়েছে সে। হ্যাঁ, কিছু কিছু অঞ্চলে ফণা তুললেও কলকাতা-দক্ষিণবঙ্গে কোনওভাবেই তার বিষ দাঁত বসাতে পারেনি ‘ফণী’। কিন্তু রাতের ঘুম উড়িয়ে দেওয়া এই ‘ফণি’র নামকরণ হল কোথা থেকে? ঝড়ের সঙ্গে সঙ্গে নামটাও নিশ্চয়ই উড়ে এসে জুড়ে বসেনি! কে রাখল তার এই গালভরা নাম?

আবহাওয়া দপ্তর থেকে সংগৃহীত ঝড়ের তথ্য সবাইকে জানানো, সমুদ্র উপকূলে সবাইকে সতর্ক করা, বিভিন্ন সংকেত এবং জলযানগুলোর সুবিধার্থে ঝড়ের খবর খুব সহজভাবে আদান-প্রদান করার জন্যই মূলত ঝড়ের নামকরণ প্রক্রিয়া চালু হয়। নামকরণের দায়িত্ব পালন করে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার অধীনে বিভিন্ন আঞ্চলিক কমিটি। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (world Meteorological Organisation)- ই আঞ্চলিক কমিটিগুলো তৈরী করে সমুদ্রের ওপরে ভিত্তি করে। যেমন, উত্তর ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট সব ঝড়ের নামকরণ করে থাকে WMO-এর ৮ টি সদস্য রাষ্ট্র বাংলাদেশ, মায়ানমার, ভারত, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড এবং ওমান। এদেরকে একসঙ্গে ‘স্কেপ’ বলা হয়

জানা যায়, আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৮৫ সাল থেকে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে ঝড়ের নামকরণ শুরু হয়। তবে একেবারে প্রথম, প্রায় ৩০০ বছর আগে ঘূর্ণীঝড়ের নামকরণ করা হয় শ্রীলংকার মহাপরাক্রমশালী রাজা মহাসেনের নামে। এমনটা করা হয়েছিল কারণ, অবস্থান, ঋতুবৈচিত্র্য এবং বৈশিষ্ট্যের জন্য যেসব এলাকা মাঝে মধ্যেই ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপে পড়ে তার মধ্যে অন্যতম- শ্রীলংকা

বিভিন্ন সময়ে অবস্থাভেদে ঘূর্ণীঝড়ের নামকরণে সংযোজিত হয়েছে মহিলা-পুরুষ-বস্তু-বিষয়ের নাম। মহাসেনের পরবর্তী ঘূর্ণিঝড়গুলোর নির্বাচিত নাম- কাইফাইলিন, হেলেন, কোমেন, লহর, চপলা, মাদী, হুদহুদ, নিলুফার, মেঘ, অক্ষি, সাগর, বাজু, দায়ে, লুবান, বায়ু, হিকা, বুলবুল, সিডর, সাগর, অনিল, অগ্নি, বায়ু, গিরি, ফণী। ‘ফণী’ নামটি দেওয়া বাংলাদেশের। আগে থেকেই ঠিক করা ছিল এই নাম, যেমন ভারতের আবহাওয়া দপ্তরের প্রস্তাবনা অনুযায়ী ফণী’র পরের ঝড়’টির নাম হবে- বায়ু

পূর্বনির্ধারিত নাম আর গতিবেগ নিয়ে সদ্যজাত অথচ ভয়ংকর শক্তি নিয়ে পশ্চিমবাংলার পাশ কাটিয়ে ‘ফণি’ এখন ক্রমশ পূর্ববাংলা মুখী।

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...