বহুবছর ধরেই আমরা দেখে আসছি যে, কালীঘাট মন্দিরে কখনও বরকনে নিজেরা গিয়ে, কখনও বা বাড়ির লোকেরাই তাদের নিয়ে গিয়ে বিয়ে দেন। এখান থেকেই মনে প্রশ্ন আসে-- কলকাতায় এত এত মন্দির থাকতে শুধু কালীঘাটেই বিয়ে হয় কেন? খরচ বাঁচাতে? নাকি এর পিছনে অন্য কোন কারণ আছে?
উত্তর খুঁজতে হলে আমাদের যেতে হবে মিথ ও লোকবিশ্বাসের কাছে।
শিবপুরাণে বলা হয়েছে, এখানে দেবী সতীর পায়ের আঙুল পড়েছিল, তাই এটি সতীপীঠ। কালীঘাটের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বুড়িগঙ্গা আজ কলকাতার নর্দমা হয়ে উঠলেও চারশো বছর আগে এর বুক দিয়ে ছোট ছোট জাহাজ চলত। ভক্তেরা পুণ্যস্নান করে মা কালীর থানে পুজো দিতেন। মন্দিরের সামিনেই ছিল স্নানের ঘাট। ঘাটের পাশে চিনু শাঁখারি নামের এক গরীব মানুষ শাঁখা বিক্রি করত। মেয়েরা স্নান করতে এসে, পুজো দিতে এসে তার কাছ থেকে শাঁখা কিনে নিয়ে যেত। কিন্তু একদিন তার একটিও শাঁখা বিক্রি হল না। কিন্তু একটাও বিক্রি না হলে তো পরিবারশুদ্ধু তার পুরো উপোষ। ছেলেমেয়ের কথা ভেবে সে কেঁদে ফেলল। তখন তার ওপর মা কালীর দয়া হল, তিনি একটি বিবাহিত মেয়ের রূপ ধরে তার কাছ থেকে শাঁখা কিনে পরলেন। তাকে অনেক রত্ন দিলেন আর বর দিলেন অভাব ঘোচার। দেখতে দেখতে মায়ের কৃপার কথা রটে গেল মুখে মুখে সবখানে। পূজারীও মন্দিরে এসে দেখলেন, মা তাঁর দুই হাতে পরে আছেন নতুন কেনা শাঁখা। সেই থেকে পুজো দিতে গিয়ে মায়ের হাতে যেমন নতুন শাঁখা পরানোর চল হল, তেমনি নতুন লোকবিশ্বাস সৃষ্টি হল, এখানে বিয়ে হলে মায়ের আশীর্বাদে মায়ের মতোই সারাজীবন শাঁখাসিঁদুর অক্ষয় থাকবে।