রবার্ট ব্রূসের একটি মাকড়সা দেখে উদ্বুদ্ধ হওয়ার গল্প বিশ্ব বিখ্যাত। কিন্তু আজ এমন একজনের কথা বলবো যার সাক্ষী ইতিহাস। শুধু তাই নয় এক উদহারণও বটে। পেয়েছে সে অনেক বীরতা, সাহসিকতার সম্মান। বলছি ‘শের আমি’র কথা, যার হাত ধরে প্রায় ২০০সৈন্য পুনর্জীবন লাভ করে। কে সে? জানাবো এবার।
সময়টা ১৯১৪ থেকে ১৯১৮— প্রথম বিশ্বযুদ্ধের। একদিকে ফ্রান্স-রাশিয়া-ব্রিটেন; অন্যদিকে জার্মানি-অস্ট্রিয়া-ইতালি। সাথে শক্তি প্রদর্শনে যুক্ত হয়েছে আমেরিকা, সার্বিয়া-সহ অন্যান্য দেশগুলিও। এই সময় আমেরিকার সৈন্যবাহিনীর সিগনাল ইউনিটের একটা ভাগ ছিল ফ্রান্সে। আর সেখানে সংবাদ ও তথ্য আদান-প্রদানের জন্য যাবতীয় সাংকেতিক পদ্ধতির সাথে যুক্ত হল প্রাচীন এক পদ্ধতি। নেওয়া হলো বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত ৬০০ কেরিয়ার পায়রাদের সাহায্য। আর এখানেই বিশ্ব পরিচিত হয় প্রথম ‘শের আমি’, এক ব্ল্যাক চেক কক পায়রার সাথে। নামের অর্থ ‘প্রিয়বন্ধু’। ১৯১৮সালের অক্টোবর মাসের এক ঘটনা তাকে স্মরণীয় করে রাখে আর তার তৎপরতায় পুনর্জীবন পায় ২০০সৈন্য।
এই সময় আমেরিকান ৭৭ ইনফ্যানট্রি ডিভিশন চরম বিপদের সম্মুখীন হয়। যুদ্ধ করতে করতে প্রায় ২০০জন সৈন্যে এমন একটা জায়গায় আটকে পড়ে যেখান থেকে বেরনোর সম্ভাবনা ছিল ক্ষীণ। যোগাযোগ মাধ্যম এক্কেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
এই অবস্থায় আমেরিকান মেজর চার্লস এস. উইলসে নিজেদের কেরিয়ার পায়রাদের সাহায্য নেওয়ার বন্দোবস্ত করেন। প্রথম ও দ্বিতীয় পায়রা শত্রুর বুলেটে মারা গেলে আনা হয় শের আমিকে। সেও বুলেটের শিকার হলো বটে, কিন্তু সংবাদ লেখা দেহ থেকে ঝুলন্ত পা নিয়ে নিজের গন্তব্যে পৌঁছে সৈন্যদের মুক্তির ব্যবস্থা করলো সে। গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে।
একটি পা বাদ গেলেও দীর্ঘ আট মাসের লড়াইও জিতে নিল পায়রাটি। আজ আমেরিকার স্মিথ সোনিয়ান ইন্সটিটিউশনের মিউজিয়ামে তার শরীর সংরক্ষিত আছে। যুদ্ধের পর একের পর এক সম্মান পেয়েছে সে। কিন্তু এক পায়ে দাঁড়িয়ে শের আমি আজও লড়াইয়ের সাহস যোগাচ্ছে।