প্রতিটি রান্নাঘরের একটি মূল উপাদান হলো গ্যাস সিলিন্ডার। সকাল, দুপর, বিকেল, সন্ধ্যে এবং রাতে গ্যাস সিলিন্ডার ছাড়া এক মুহূর্তও চলে না। কোনো একদিন গ্যাস শেষ হয়ে গেলে বিপদের মুখে পড়তে হয় সকলকেই। সারাদিন গ্যাস সিলিন্ডারের উপর দিয়ে নানা ঝড়ঝাপ্টা চলতেই থাকে। রান্না করার এই গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী থেকে অনেকসময়ই আমাদের নানা বিপদের সম্ভাবনা থেকে যায়।
আজ আমরা সেরকম কিছু বিপদ এবং তার থেকে বাঁচার কিছু উপায় সম্পর্কে জানবো।
১)সবসময় বিআইএস ভ্যালিডেটেড সামগ্রী ব্যবহার করুন|
২)গ্যাস সিলিন্ডারের সাথে যে নলটি গ্যাস ওভেনের সাথে যুক্ত থাকে সেটিও বিআইএস ভ্যালিডেটেড হওয়া উচিত|
বাড়িতে সিলিন্ডার এসে পৌছানোর পর আমাদের যা করা উচিত-
১)গ্যাস আসার পর ভালো করে চেক করে নিন সিলিন্ডারের উপর কোম্পানির সীল আর সেফটি ক্যাপ যেন ঠিকঠাক থাকে|
২) গ্যাস সিলিন্ডার লাগানোর পদ্ধতি যদি ঠিকঠাক জানা না থাকে তাহলে যে বাড়িতে গ্যাস ডেলিভারি করতে আসেন তার কাছ থেকে একটা ডেমো দেখে নিতে পারেন|
৩) গ্যাস সিলিন্ডার সবসময় একটি সমান্তরাল সারফেসে আর সমতল ভূমির উপরেই বসানো উচিত|
৪) আমাদের সকলেরই একটা অভ্যেস থাকে সিলিন্ডারকে আমরা ঠেলে নাহয় গড়িয়ে একজায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাই| সবসময় খেয়াল রাখা উচিত এইরকমভাবে ঠেলে, টেনে বা গড়িয়ে সিলিন্ডারের জায়গা বদল করা উচিত নয়|
সিলিন্ডার ব্যবহারের কিছু নিয়মাবলী-
১) সবসময় খেয়াল রাখা উচিত সিলিন্ডারের উপরের দিকে থাকা ‘O’ রিংটি যেন সিলিন্ডারের ভালভের মুখে ঠিকঠাক আটকে থাকে|
২) কখনো যদি মনে হয় গ্যাস লিক করছে, ভুলেও দেশলাই বা মোমবাতি দিয়ে সেটি পরীক্ষা করতে যাবেন না|
৩) সিলিন্ডার সবসময় উল্লম্ব অবস্থায় অর্থাৎ সোজা করে দাঁড় করিয়ে রাখা উচিত|
৪) বদ্ধ ঘরের ভিতর কখনো সিলিন্ডার রাখা উচিত নয়| সবসময় আলোবাতাস চলাচল করে এরকম জায়গায় সিলিন্ডার রাখা উচিত|
কখনো যদি গ্যাস লিক হচ্ছে বুঝতে পারেন, তখন কি করবেন?
১) প্রথমেই অযথা প্যানিক করবেন না|
২) রান্নাঘরে যদি কোনো ইলেকট্রিক গুডস থাকে তাহলে সেগুলি বারবার অন বা অফ করবেন না|
৩) যদি মনে হয় গ্যাস কোনভাবে লিক হচ্ছে তখন সবার প্রথমে সিলিন্ডারের সেফটি ক্যাপ লাগিয়ে দেওয়া উচিত|
৪) রান্নাঘরের পাশাপাশি বাড়ির সমস্ত জানলা দরজা সেইসময় খুলে দিন কিন্তু ইলেকট্রিক ফ্যান বা একজস্ট ফ্যান সেই সময় অন করবেন না|
গ্যাস সিলিন্ডার দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে আমাদের যেসব পদক্ষেপ নেওয়া উচিত তা হলো-
১) প্রতিটি গ্যাস সিলিন্ডারের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট পরিমান গ্যাস সঞ্চয় করা থাকে। তাই কখনো কখনো ওভারলোড হয়ে যাওয়ার ফলে সেই সিলিন্ডার থেকে গ্যাস বের হতে থাকে। ফলে সেই ক্ষেত্রে গ্যাসের নব বন্ধ করার পরেও একটু একটু করে গ্যাস বেরিয়ে বাতাসে মিশতে থাকে। সেই সময় রান্নাঘরের দরজা জানলা যদি খোলা থাকে তাহলে ভালো নাহলে হঠাৎ কেউ রান্না করতে গেলে বড়োসড়ো বিপদ ঘটার আশঙ্কা থেকে যায়। এই বিপদ এড়ানোর জন্য বাড়িতে গ্যাস দিতে আশা বয়কে বলুন সিলিন্ডারটি ভালো করে চেক করে দিতে।
২) গ্যাস সিলিন্ডারের দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে রান্নাঘর ছেড়ে বেরোনোর সময় অবশ্যই চেক করে নিন যে সিলিন্ডারের নব এবং গ্যাস বার্নারের নব বন্ধ করেছেন কিনা|
৩) গ্যাস ওভেন, সিলিন্ডার এবং তার পাইপ সবসময় নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনেই রাখুন। এছাড়াও গ্যাস গরম হয়ে যেতে পারে এরকম কোনো জিনিস সিলিন্ডারের আশেপাশে রাখবেন না।
৪) গ্যাস জ্বালানোর পর লাইটার বা দেশলাই কখনোই গ্যাসের উপরে রেখে দেবেন না। এর থেকে বিপদ ঘটার সম্ভাবনা থাকে।
৫) গ্যাস পাইপকে কখনোই কাপড় বা প্লাস্টিক দিয়ে মুড়ে রাখবেন না। অনেকসময় গ্যাসের পাইপে ছিদ্র তৈরী হয় এবং সেই থেকে গ্যাস লিক করতে পারে। কিন্তু সেই পাইপের উপর যদি প্লাস্টিক বা অন্য কিছুর আবরণ থাকে তাহলে সেই লিক হয়ে যাওয়া গ্যাসের গন্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে না। ফলে আশেপাশে থাকা মানুষজনও বুঝতে পারেননা গ্যাস লিক করছে এবং যথারীতি বিপদের সম্মুখীন হন।
৬) গ্যাসের পাইপ কখনোই সাবান জল দিয়ে ধোয়ার চেষ্টাও করবেন না। বিশাল বড় বিপদ ঘটে যেতে পারে। পাইপের ধুলোময়লা পরিষ্কার করার জন্য শুকনো কাপড় ব্যবহার করুন। যদি পাইপের গায়ে খুব বেশি ধুলো জমে তাহলে একটি পরিষ্কার কাপড়কে জলে হালকা ভিজিয়ে সেই কাপড় দিয়ে পাইপ পরিষ্কার করতে পারেন।
৭) কখনো রান্নাঘরে ঢুকে গ্যাসের গন্ধ অনুভব করলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেই ঘর থেকে বেরিয়ে আসুন। এই গ্যাস বাতাসের থেকে ভারী হওয়ার কারণে সবসময়ে মেঝের কাছাকাছি ঘোরাঘুরি করে। তাই প্রথমে ঘরের জানলাদরজা খুলে হাতপাখা বা কাগজ দিয়ে সেই গন্ধ তাড়ানোর চেষ্টা করুন। তারপর যদি দেখেন পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে তখন পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার হেল্পলাইনে ফোন করে সম্পূর্ণ বিষয়টি জানান।