সারাদিনের পরিশ্রমের পর যাচ্ছেন বিশেষ কোনো সহকর্মীর সাথে সময় কাটাতে? মনের কথা বলছেন তাকে? ভাবছেন সে আপনার কথা বুঝতে পারছে। কিন্তু সত্যিই কি তাই? সত্যিই কি একজন সহকর্মী কখনো বন্ধু হয়ে উঠতে পারে? কর্মক্ষেত্রে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা কিংবা কর্মক্ষেত্রের বাইরে ঘটে যাওয়া আপনার সম্পূর্ণ নিজস্ব কোনো ঘটনাও কি আপনি শেয়ার করছেন আপনার সহকর্মীর সঙ্গে? তাহলে এখনই সাবধান হয়ে যান। কারণ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, মানসিক চাপ বাড়াতে সাহায্য করে থাকে এই জাতীয় মানসিকতা।
চিকিৎসকদের মত, সারাদিন অফিসে সহকর্মীদের সাথে থাকার পরেও যদি তাদের সংস্পর্শে থাকা হয় তাহলে ব্রেনের উপর নেগেটিভ এফেক্ট পড়তে পারে। আধুনিক গবেষণা জানাচ্ছে, বন্ধুদের সাথে থাকার থেকে সহকর্মীদের সাথে সময় ভাগ করা ক্ষতিকর এফেক্ট ফেলতে পারে জীবনেও। এই নিয়ে সহমত পোষণ করেন বিশ্বের সকল মনোবিদরাই। 'আমেরিকান হেলথ অ্যাসোসিয়েশন' এর তাবড় তাবড় গবেষকরাও এই ব্যাপারে বাকিদের সাথে সহমত। তাদের বক্তব্যও একটাই, চাপ কমাতে এড়িয়ে চলতে হবে সহকর্মীদের। সম্প্রতি নানা গবেষণা থেকে উঠে এসেছে এমন একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য। গবেষণার ফল প্রকাশের পর দেখা গেছে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মনোবিদরা পরামর্শ দিচ্ছেন সহকর্মীদের থেকে দূরে থাকার। কাজের বাইরে সহকর্মীদের সাথে বিশেষ বন্ধুত্ব রাখার প্রয়োজন নেই বলেই মনে করছেন মনোবিদরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সহকর্মীদের মধ্যে উচ্চ পদে যাওয়ার গোপন ইচ্ছা থাকে। সেই ক্ষেত্রে বিশেষ বন্ধুত্ব রাখা ক্ষতিকর হতে পারে। সেই সহকর্মীর মনে যদি পদোন্নতির গোপন বাসনা থাকে তাহলে সেই বন্ধুত্ব কখনোই নিঃস্বার্থ হয় না। সেই সহকর্মী সুযোগ পেলেই আপনাকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যাবে। আপনি হয়তো বন্ধু ভাবছেন সেই সহকর্মীকে কিন্তু সেই সহকর্মীটিও যে আপনাকে বন্ধুই ভাববে এমন কোনও কথা নেই।বন্ধুরূপী শত্রুর ভূমিকা যে সে পালন করবে না এমন গ্যারান্টি কেউ কি দিতে পারে? এমনটা যদি নাও হয়, যদি সেও আপনার দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলেও তার থেকে আপনার ক্ষতির আশঙ্কা থেকে যায়। আপনি কাজের মধ্যে হয়তো ব্যস্ত রয়েছেন সেই সময় সে চলে এলো কাজের ফাঁকে গল্প করতে। আপনিও ভাবলেন কাজের ফাঁকে একটু আড্ডা দেওয়াই যাক। কিন্তু এতে ক্ষতিটা হলো আপনারই। কারণ আপনি কাজ ছেড়ে উঠে গেলেন। আপনার বন্ধু বা সহকর্মী সে হয়তো কাজ শেষ করে তবেই এসেছে গল্প করতে। সেই ক্ষেত্রে আপনার কন্সেন্ট্রেশনে ব্যাঘাত ঘটলো। যেই মানসিকতা নিয়ে আপনি কাজ করছিলেন সেই মানসিকতা ফিরিয়ে এনে কাজ করা বেশ কঠিন, এমনটাই মত মনোবিদদের।
কিছুক্ষেত্রে সহকর্মীরা আপনাকে নিজের স্বার্থের জন্যও ব্যবহার করতে পারে। সহকর্মী আপনাকে ইচ্ছে করে যেমন বিপদে ফেলতে পারে সেরকমই আপনার বসের কাছে আপনার নামে ভুল বুঝিয়ে নিজের স্বার্থসিদ্ধি করতে পারে। আপনি হয়তো তাকে বন্ধুই ভাবছেন কিন্তু সে কোনদিক দিয়ে আপনার ক্ষতি করে দিলো আপনি বুঝতেও পারলেন না। এমন ঘটনা খুব একটা আমাদের অজানা নয়। শুধু অফিসে কেন এরকম ঘটনা আমরা সকলেই কোথাও না কোথাও ফেস করে এসেছি। হয়তো স্কুলে কিংবা কলেজে। আর তা না হলেও অফিসে সব মানুষকেই এই ঘটনাটি একবার না একবার ফেস করতেই হয়। সেই ক্ষেত্রে সহকর্মীদের সাথে দূরত্ব বজায় রেখে চলাই উচিৎ। এছাড়াও মনোবিদরা জানাচ্ছেন, যে সহকর্মীর উপর আপনি ডিপেন্ড করছেন সে সবসময় যে এক অফিসেই থেকে যাবে তা নাও হতে পারে। ফলে সেই সহকর্মী কর্মক্ষেত্র পরিবর্তনের কথা ভাবলে সেটাও আপনার উপর নেগেটিভ এফেক্ট ফেলতে পারে। সে অন্য কোথাও চলে গেলে তার সাথে আগের মতোই বন্ধুত্ব বজায় না থাকতে পারে। সেই ক্ষেত্রে মানসিক দিক দিয়ে আপনি ভেঙে পড়তে পারেন।
মনোবিদদের মত, যদি প্রতিযোগিতামূলক রসায়ন আপনার সাথে আপনার কোনো সহকর্মীর হয় তাহলে সেই ক্ষেত্রে সেই রসায়ন আপনাকে আরও ডিপ্রেশনের মধ্যে নিয়ে যেতে পারে। সহকর্মী কখনো আপনার থেকে এগিয়ে গেলে বা আপনি আপনার সহকর্মীর থেকে কোনো ক্ষেত্রে কয়েকপা এগিয়ে গেলে সেটা দুইপক্ষেরই মেনে নিতে কষ্ট হয়ে থাকে। ফলে সম্পর্ক নষ্ট তো হবেই তার সাথে মনে হিংসার প্রবেশ ঘটবে। এছাড়া, অফিসের নানা সমস্যার কথা সহকর্মীদের সাথে শেয়ার করা খুব একটা লাভজনক হয় বলেও মনে করেন না মনোবিদদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, সহকর্মীরাও অফিসের নিয়মে বাঁধা। তাঁরা সেই নিয়মের বাইরে এসে আপনাকে কোনো ক্ষেত্রে সাহায্য করবে এমনটা আশা করাটাই বোকামির পরিচয়। সকলেই কর্মক্ষত্রে নিজের একটা পরিচয় তৈরী করতে চায়। অন্য একজন সহকর্মীর জন্য সে নিজের ক্ষতি কেন করবে বলুন?
অফিসের সহকর্মীদের থেকে দূরে থাকার অনেকগুলি কারণ এখানে দেওয়া হলো। কিন্তু কিছুক্ষেত্রে সহকর্মীদের সাহায্যেরও প্রয়োজন পড়ে। তাই সব সহকর্মীর বিরুদ্ধাচারণ করবেন না। সহকর্মীদের চিনে নিন। ভরসাযোগ্য সহকর্মীদের সাথেই সদ্ভাব বজায় রাখুন। আর কুচক্রী সহকর্মীর থেকে সতর্ক থাকুন। অফিসে বসে বোর হলে সহকর্মীদের সাথে আড্ডা না দিয়ে গান শুনুন কিংবা কিছুক্ষন পায়চারি করে নিন। এতে কনসেন্ট্রেশনও ব্রেক হবে না। আপনি আবারও এক মানসিকতা নিয়ে কাজে মন দিতে পারবেন।