সম্প্রতি দেশি গাছ নিয়ে সমীক্ষায় বেরিয়ে এসেছিল চাঞ্চল্যকর তথ্য, এবার দেশি মাছ নিয়েও সে রকম তথ্য উঠে আসছে। নদীয়ার খাল, বিল, নদী, নালায় একসময় যথেষ্ট সংখ্যায় দেখা মিলত খরশোলা, টাপা, ন্যাদোসের। তিস্তা-তোর্সায় মিলত মহাশির, চেকটিপুঁটির মতো দেশি মাছ। কিন্তু এখন প্রায় বিলুপ্ত হতে বসেছে এইসব মাছের প্রজাতি, এমনটাই বলছে গবেষক মহল। বিভিন্ন সময়ে বিজ্ঞানীদের গবেষণা থেকে উঠে এসেছে এই তথ্য। উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার জলাশয় ও নদীগুলি থেকেও প্রায় উধাও দেশি ট্যাংরা, শিঙি, শোল, মাগুর, ল্যাটা।
অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে এবার গোটা রাজ্য জুড়ে দেশি মাছের উপর পুর্ণাঙ্গ সমীক্ষার কাজ শুরু করল পশ্চিমবঙ্গ জীববৈচিত্র্য পরিষদ। সাতটি জেলায় সমীক্ষার কাজ শেষ হওয়ার পর এখন নদীয়া, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলাগুলিতে চলছে সমীক্ষাপর্ব। জলাশয়গুলি সমীক্ষার পাশাপাশি মৎস্যজীবী এবং স্থানীয় দোকানিদের সাথেও কথা বলছেন সমীক্ষকেরা। জেলাভিত্তিক তালিকা তৈরীর সাথে সাথে মাছগুলি সংরক্ষণ করতেও তাঁরা বদ্ধ পরিকর।
সবং বায়োডাইভার্সিটি ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান আলোক কুমার সামাই জানিয়েছেন, স্থানীয় স্তরে ন্যাদোস, পুঁটি, শোল, শিঙি, ভেদা, বাটা, কইয়ের চাষ ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছেন তাঁরা। হলদিয়ার মৎস্যচাষ সম্প্রসারণ আধিকারিক সুমনকুমার সাহু জানিয়েছেন, এই এলাকার অন্তত ২৫ জন চাষী বাণিজ্যিকভাবে শুরু করেছেন পাবদা, শিঙি, মাগুর, পেনবা, ট্যাংরার মতো মিষ্টি জলের মাছের চাষ। পেনবা মণিপুরের স্টেট ফিশ। মণিপুর ছাড়াও মায়ানমার ও চিনে এদের দেখা মেলে।
পশ্চিমবঙ্গ জীববৈচিত্র্য পর্ষদের বিজ্ঞানী সৌমেন্দ্রনাথ ঘোষ বিষয়টি নিয়ে একটি বিবৃতিতে বলেছেন, এ ধরণের পুর্ণাঙ্গ সমীক্ষার উদ্দেশ্যই হল এ সম্পর্কে স্পষ্ট একটি ধারণায় পৌঁছনো। কোন কোন মাছ চাষের ক্ষেত্রে বেশী জোর দেওয়া দরকার তা এই তথ্য থেকে পরিষ্কার হয়ে যাবে। উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলায় এই কাজটির তত্ত্বাবধানে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যার অধ্যাপক শীলাঞ্জন ভট্টাচার্য। বিষয়টি নিয়ে তিনি জানিয়েছেন, রুই, কাতলা, মৃগেল, রূপচাঁদা (পাকু), আফ্রিকান মাগুর, তেলাপিয়া, গ্রাস কার্প, সিলভার কার্পের মতো মাছগুলি চাষের আগে জল পরিষ্কারের নামে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে দেশীয় ছোটো মাছের প্রজাতিগুলিকে।
দেশীয় মাছগুলির মূল প্রজনন স্থান হল উপচে পড়া জল এবং আশেপাশের মাঠ। আগে যে পথে জল উপচে পড়তো, এখন তার বেশিরভাগই অবরূদ্ধ হয়ে পড়ায় প্রজননের ক্ষেত্রে তা বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। শুধু তাই নয়, মাঠে দেদার কীটনাশক ও রাসায়নিক ব্যবহারের ফলেও বহু সংখ্যক ছোটো প্রজাতির মাছের মৃত্যু ঘটছে, আর এ কারণেই বিপন্ন হতে চলেছে শোল, ল্যাটা, গোল খলসে, খয়রা, শিঙি, ফলুই, কাকলেশ, পুঁটির মতো দেশীয় প্রজাতির মাছগুলি।