রাজ্যের প্রতিটি পরিবারকে সদস্যদের স্বাস্থ্যের তথ্য এবং সাম্প্রতিক বিদেশ সফরের ইতিহাস বাধ্যতামূলক ভাবে জানাতে হবে রাজ্য সরকারকে। এবং হাঁচি-কাশি-জ্বর-শ্বাসকষ্ট হলেই গণ হারে পরীক্ষা। এই দুই অস্ত্রই সফলভাবে করোনা ভাইরাস মোকাবিলার হাতিয়ার হয়ে উঠেছে ছত্তিশগড় রাজ্যে।
মাত্র ২০ দিনের মধ্যে চমকে দেওয়ার মতো সাফল্য। করোনা মোকাবিলায় সফলতম রাজ্য হিসেবে তালিকার উপরের দিকে জায়গা করে নিয়েছে।
ছত্তিশগড়ের স্বাস্থ্য, জনকল্যাণ, পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী টি এস সিং জানিয়েছেন, প্রতিটি পরিবারকে বলা হয়েছিল তাদের সদস্যকে সাম্প্রতিক বিদেশ সফরের এবং জ্বর, সর্দি কাশির মতো ঘটনা ঘটলে জানাতে। এভাবে প্রায় ৭৭,০০০ মানুষকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছিল। কড়া নজর রাখা হয়েছিল মানুষ যাতে কোয়ারেন্টাইন মেনে চলে।
কিন্তু কী করে সম্ভব হল এই প্রতিরোধ? সেই প্রশ্নের উত্তরে রাজ্যের স্বাস্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, গোটা দেশে যখন করোনার প্রকোপ নিয়ে কোনও ভাবনাচিন্তাই শুরু করেনি তখন থেকেই ছত্তিশগড় নিজেদের রাজ্যে সামলাবার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিল। ২৬ জানুয়ারির অনুষ্ঠানের পর রায়পুরে একটি ওয়ার রুম চালু করে সরকার। ক্যালেক্টরের নির্দেশে গঠন করা হয় টাস্ক ফোর্স। প্রতিদিন আলোচনা চলত করোনা প্রতিরোধের কৌশল নির্ধারণ নিয়ে। সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার কাজ শুরু হওয়ার পর ৭৭,৮৪৭ জনকে খুঁজে পাওয়া যায়। তাদের সকলেরই বিদেশ সফরের অতীত আছে। সকলেই বাধ্যতামূলক ভাবে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। ১৪৬ জন সরকারী কর্মচারী সেইসব মানুষদের রিলিফের কাজে নিযুক্ত হন।
রাজ্যের ২৬ টা জেলায় ১০০ বেডের কোয়ারেন্টাইন সেন্টার গড়ে তোলা হয়। ৫ টি মেডিকেল কলেজে ৫০০ বেড। সিভিল হসপিটালে ১০০ টি বেড। এভাবে ৪৭০০ টি বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছিল গোটা রাজ্য জুড়ে। ৫০০ বেডের প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ স্ট্যান্ডবাই হিসেবে রাখা হয়েছিল। এছাড়া হোম কোয়ারেন্টাইন, মেডিকেল ইকুইপমেন্ট সেন্টার, ফেসিলিটি কোয়ারেন্টাইন, মোবাইলটি এবং লজিস্টিক সাপোর্ট, মিডিয়া, ডেটা ম্যানেজমেন্ট- এই সব দিকগুলোতেও নজর রাখা হয়েছিল। যা আইএএস অফিসারদের সামলাবার ভার দেওয়া হয়। একটি app-o তৈরি করেছে সরকার। যার মাধ্যমে 'পরিযায়ী শ্রমিক'দের গতিবিধি ট্র্যাক করা হত।
তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয় , লকডাউনকে যে বাড়াবার কথা বলা হচ্ছে তার কারণে মানুষের অর্থ সংকট আরও বাড়বে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যাবে কীভাবে?
তিনি জানিয়েছেন, ছত্তিশগড় রাজ্যের স্বনির্ভর গোষ্ঠী প্রায় এক কোটি মাস্ক বিক্রি করেছে। বাড়িতে বসে হ্যান্ড স্যানেটাইজার, সাবান ইত্যাদি তৈরির জন্য উৎসাহ দিচ্ছে সরকার। এছাড়া অর্গানিক পণ্যও তৈরি করছেন তাঁরা।
লকডাউন সফল করে তুলতে গ্রামের মানুষই সাহায্য করছে সরকারকে। তাঁরা নিজেরাই খেয়াল রাখছেন যাতে বাড়ির বাইরে কেউ পা রাখে না। ছত্তিশগড় রাজ্যে ছবিটা এরকমই আশাব্যঞ্জক।চাষের ক্ষেত্রকে লকডাউনের বাইরে রাখা হয়েছে। সোশ্যাল ডিস্টেনসিং বজায় রেখে ক্ষেতের কাজ চালাচ্ছেন কৃষকরা।