মিডিয়া কভারেজে কে থাকবে?
হোডিং জুড়ে কে থাকবে?
শুক্রবারের পর্দায় কে থাকবে?
এই তিনটে প্রশ্ন আর লাইটস, ক্যামেরা, লাভ, ভাগ্যিস হয়েছিল। ১৯৭৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আর ২০২২-এর ২৩ সেপ্টেম্বর ভারতে সিনেমা দিবস। এক সমাপতনে মিলে গেল দুটি তারিখ। বাংলা চলচ্চিত্রের ফার্স্ট বয় এক দশক পেরিয়ে গিয়েছেন, অটোগ্রাফ থেকে সাবাশ মিঠু; অক্ষয় অমর হোক এই যাত্রা।
অর্থনীতি নিয়ে পড়া এক ছেলে, প্রেসিডেন্সি, জে এন ইউ হয়ে পৌঁছলো ব্যাঙ্গালোর যদিও অধুনা বেঙ্গালুরু। তারপর অঞ্জন দত্তের সঙ্গে সাক্ষাৎ, তার সহকারী হয়ে কাজ শেখা। ফেলুদা ফেরৎ নাটক নামানো, অসাধারণ কিছু লিরিক লেখা। একটু একটু করে সে শিকড়ে ফিরতেই চাইছিল। একদিন ফেরা শেষ হল। অপর্ণা সেনের ইতি মৃণালিনী, ঋতুপর্ণ ঘোষের গানের ওপারে-তে সে ক্যামেরার সামনেও এল। তারপর ২০১০ সিনেমার ঘুরে দাঁড়ানোর পালা। পুজোর সময় অটোগ্রাফ বানালেন সৃজিত। এ ছবি গুরুদক্ষিণার, সত্যজিতের নায়ককে ট্রিবিউটি দিলেন। বাংলার ছবি আর বাংলা ছবির গানের পুনর্গাজরণ হল। প্রসেনজিৎ চট্টপাধ্যায় ধরা দিলেন এক অসামান্য মন্তাজে। আর ফিরে দেখতে হয়নি সৃজিতকে। বাংলা ছবির দর্শক বুঝল ঋতুপর্ণের পর হাল ধরার লোক এসে গিয়েছে। তারপর ২০১১তে ২২ শে শ্রাবণ এমন সিরিয়াল কিলিং নিয়ে ছবি আগে খুব একটা দেখেনি বাঙালি। যদিও থ্রিলার বানানোর ক্ষেত্রে সৃজিতের জুড়িমেলা সত্যিই ভার। চতুষ্কোণ থেকে শুরু করে ২২ শে শ্রাবণের সিক্যুয়েল দ্বিতীয় পুরুষ অবধি। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছবি মানেই এক একটা করে গল্প বলে যাওয়া। এমন গল্প বলার যাদুকর সিনেমা জগতে খুব কম এসেছে। এক একটা ছবি এক একটি জার্নি যেন,
ইভান লুইসের ক্রিমাস দেখার গল্প নিয়ে বানানো হল উমা। আবার ইতিহাসকে নবরূপে উপস্থাপিত করতেও তিনি সিদ্ধহস্ত, দেশভাগ নিয়ে রাজকাহিনী, হিন্দিতে বেগমজান। ভাওয়াল রাজার গল্প নিয়ে তৈরি করলেন এক যে ছিল রাজা। এই দীর্ঘ জার্নিতে আরও এক ছবি এসেছিল গুমনামি, ছবিতে মুখার্জী বাবু স্রষ্টার রাজ ধর্ম পালন করেছেন, একটা বদ্ধ ইতিহাসকে মুক্ত করেছেন। প্রশ্ন তাড়া করে বেড়িয়েছে দর্শকদের। ছবিটি সময়ের দলিল হয়ে থাকবেই। আদপে প্রশ্নটাকে সজীব রাখাই হল স্রষ্টার কাজ। দেশনায়কের সঙ্গে শেষ অবধি কী হল তা জানবো না আমরা? এই প্রশ্ন আবার তাড়া করতে শুরু করল সার্থক হল তার ছবি নির্মাণ।
নেটফ্লিক্সে "রে" এসেছে, অধীর আগ্রহে গোটা দেশ তা দেখেছে। বহুরুপীর নতুন রূপ দেখে অনেকেই খুশ। মহম্মদ নাজিম উদ্দিনের রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেননি; সিরিজ আরও উত্তেজনার পারদ বাড়িয়ে দিয়েছে। তারপর সাবাশ মিঠু, আবার বেগমজানের পরে বলিউড যাত্রা। মিতালী রাজের জীবনী, তাপসি পান্নু আর সৃজিত মুখোপাধ্যায় ... মারাত্মক এক কম্বিনেশন হয়ে রইল বলাবাহুল্য। রুপোলি পর্দায় দেখল সেই সৃজিতীয় ম্যাজিক। ধাপে ধাপে পর্দার জন্যে কাকাবাবু এসেছে আর অন্যদিকে সিরিজে একে একে ফেলুদা ফিরছেন। মিশর রহস্য, ইয়েতি অভিযান, কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তন, ফেলুদা ফেরত, দার্জিলিং জমজমাটের পর ভূস্বর্গ ভয়ঙ্কর, সাহিত্য প্রেমী, সুনীল-সত্যজিৎ প্রেমীদের জন্যে লা জবাব ব্যবস্থা। সঞ্চালনাতেও হাত পাকিয়েছেন তিনি। অন্য ধারার ছবি হেমলক সোসাইটি বানিয়েছেন, শেরদিলও আলাদা স্বাদের, তালিকা যত দীর্ঘ হচ্ছে আমাদের গর্বও তত বাড়ছে।
অভিনেতার চেয়ে ছবি পরিচালকের কৃতিত্ব বেশি, কারণ তিনিই তো আসল পাচক। মানুষ নায়কের নাম দিয়ে ছবি চিনতে শুরু করে ফেলেছে, তখনই পরিচালকের ছবিতে ফিরিয়ে আনলেন সৃজিত। আমাদের বড্ড লোভ... ফার্স্ট বয়। আমাদের গর্ব করার মতো লোকের খুব অভাব তো, তাই আমাদের গর্ব করার খুব লোভ। ওটা যেন জারি রাখতে পারি। এভারেস্ট ডিঙানো অনেক সহজ! মুখার্জী বাবু তো আস্ত একখানা এভারেস্টই জয় করে, নিজের নামে করে ফেলেছেন। এইভাবেই থাকুন, লর্ডসে জামা ঘোরানোর মতো ক্ল্যাপস্টিকে ম্যাজিক করে যান। এক্কেবারে রাজার মতো, মহাসমারোহে। গর্ব বাড়তে থাক আমাদের। শুভ জন্মদিন সৃজিত মুখার্জী।