গ্রাম ছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ। শহরের গলি রাজপথ ছেড়ে, শহুরে ব্যস্ত জীবন ছেড়ে প্রকৃতির কোলে এক-দু’দিন কাটাতে আমরা চলে যাই রবির দেশে। বোলপুর, শান্তিনিকেতনের কথা আলাদা করে বলার কিছুই নেই।
বিশ্বভারতী ক্যাম্পাস, আম্রকুঞ্জ, ছাতিমতলা, রবি ঠাকুরের বাড়ি, পৌষ মেলার মাঠ, বাতাসে কান পাতলেই রবি ঠাকুরের গান, আর আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা প্রকৃতি-শামিয়ানা। প্রতি শনিবারে খোয়াইয়ের হাট, পূর্ণিমা রাতের সোনাঝুরি, গাছের পাতা জড়ানো ভাললাগা, সন্ধ্যাবেলার কোপাই নদীর ধার, বাতাসে ভেসে থাকা বাউলের সুর -সব মিলিয়ে মনের ঠাকুরের দেশে এক পলকেই হারিয়ে যাওয়া ছুটির দিনে। হ্যাঁ, ব্যস্ত শহরের রাতের অন্ধাকারে চোখ বুজলেই হারিয়ে যাওয়া যায় সোনাঝুরির জঙ্গলে। কান পাতলে শুনতে পাওয়া যায় ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক । এসব ছাড়াও ঘুরতে গিয়ে বেশ ভাল লাগবে সৃজনী শিল্পগ্রাম।
২০০৮ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে তৈরি হয়েছিল এই গ্রাম। বাংলার শিল্প শুধু নয়, দেখা মিলবে ওড়িশা, বিহার, সিকিম, অসম সহ সাত রাজ্যের শিল্প নিদর্শন। দেখা মিলবে আন্দমান নিকবর দীপপুঞ্জেরও। এখানে রয়েছে প্রত্যেক রাজ্যের এক একটি করে কুটীর।
আর সেখানে প্রবেশ করলেই দেখা মিলবে অভূতপূর্ব সব শিল্প-নিদর্শন। এক একটা কুটীর এক এক রাজের প্রতীক। এসব দেখতে দেখতেই সব শেষে হঠাৎ দেখা মিলবে এক বাঁশের তৈরি লাইট হাউসের। সিঁড়ি দিয়ে উঠে গেলে আপনার মনে হবে, এই বুঝি সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে পড়ছে আপনার পায়ে। না, তা অবিশ্যি সত্যি নয়। তবে সেই লাইট হাউসের ‘টপ ভিউ’ থেকে গোটা গ্রাম দেখার মজাই আলাদা। নেমে আসলেই কানে ভাসবে আনাচে কানাচে বাউলিয়া সুর, কোনও একা বাউল তার একতারা নিয়ে দরাজ গলায় গেয়ে চলছে গান।
চোখে পড়বে হ্যান্ডলুম শাড়ি , জামাকাপড়ের পসরা, রঙবেরঙের সাজগোজের জিনিস। মাঠ জুড়ে নানান মূর্তি-ভাস্কর্য। কোথাও পেটুক গণেশ, কোথাও বা ধ্যানমগ্ন বুদ্ধ। কোথাও বা দেবী বীণাপাণি, আবার কোথাও শুধুই শৈল্পিক কারুকার্য। গোটা গ্রাম তৈরি হয়েছে ভিন্ন রাজ্যের শিল্পকলা দিয়ে। নানান সৃজনী শিল্পকে এক মালাতে গেঁথে এই গ্রামের পত্তন।
এই গ্রামে যাওয়ার জন্য একটা টোটো নিলেই চলবে। গোটা গ্রাম ঘুরে দেখতে ঘণ্টা খানেক সময় লাগবে। বাইরে মিলবে কুলফি-মালাই, চাট-চুরমুর। গ্রামে ঢুকতে লাগবে টিকিট। যা যৎ সামান্য। বিকেলের শান্ত হাওয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে লাল মাটির রাস্তা-হেঁটে ঘুরে আসতেই পারেন এই গ্রামে। তারপর সন্ধ্যা নামলেই সোজা কোপাইয়ের কোলে।