শ্রীময়ী কথা

আগামী ১০ জুন থেকে টেলিভিশনের পর্দায় আসছে নতুন ধারাবাহিক শ্রীময়ী’ ‘শ্রীময়ী’ কোনও একজন নারীর গল্প নয়। আর গল্প তো নয়ই। শ্রীময়ী’ হল সমগ্র নারীজাতির জীবনগাথা- এমনটাই বলছেন ধারাবাহিকের কাহিনীকার লীনা গঙ্গোপাধ্যায়।

যেসব মেয়েরা বাড়িতে শুধুই ঘরকন্নার কাজ করেন তাঁদের আমরা বলি ‘হাউজ ওয়াইফ’ কিংবা পরিচয়টিকে একটু স্টেটাসধারী করতে আমরা বলে থাকি ‘হোমমেকার’। আচ্ছা, পৃথিবীর কোন বিবাহিত মহিলাটি হোমমেকার নয় বলুন তো? যে যত বড় চাকরিই করুন না কেন ঘরের সামান্যতম কাজটুকু সেরে না বেরোলে তাঁর দিকে অভিযোগের আঙুল ওঠে না এমন মহিলা নেই বললেই চলে। শ্রীময়ী তাঁদেরই একটি রূপ, একটি উদাহরণ মাত্র।

আজ একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে এই কথাগুলো বলার খুব দরকার তাই এমন একটি কাহিনীকে সামনে আনতে চেয়েছেন বলে জানিয়েছেন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়। বলাবাহুল্য, লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রত্যেকটি গল্পই জীবনের গল্প। অলীক কল্পনায় ভাসে না তাঁর গল্প। নিজের সঙ্গে, পাশের বাড়ির কারো সঙ্গে বা কোনও আত্মীয়র সঙ্গে তার মিল খুঁজে পাওয়া যাবে তা নিশ্চিত করে বলা যায়।

ধারাবাহিকের ঘোষণা পর্বটি একেবারে অন্য ঢঙে এবার সাজিয়েছে চ্যানেল। সাংবাদিক সম্মলনে হাজির হন এক ঝাঁক বিবাহিত মহিলা। তাঁরা নিজেদের ভাল থাকা, খারাপ থাকার কথা শেয়ার করেন ‘শ্রীময়ী’কে। হাজির ছিলেন প্রখ্যাত সায়কিয়াট্রিস্ট ডাঃ শর্মিষ্ঠা চক্রবর্তী। তিনি প্রতিদিন বহু মহিলার সাক্ষাৎ পান, যাঁদের মধ্যে কেউ হাউজ ওয়াইফ, কেউ চাকুরিজীবী কেউ বা ব্যবসায়ী। এদের এক এক জনের ইচ্ছা এক এক রকম, এক একজনের স্বপ্ন এক এক রকম। কেউ না পাওয়া নিয়েই জীবন কাটাচ্ছে, কেউ বা যেমন আছে ভালই আছে বলে মনে করছে, কেউ বা তার উপর অত্যাচারের সব দায় নিজের কাঁধেই তুলে নিচ্ছে। এঁদের মধ্যে বেশিরভাগই নিজের পরিচয় খুঁজতে চায় না। বাবা কিংবা স্বামীর পরিচয়ে পরিচিত হতেই বেশি ভালবাসে। কেউ বা সংসারের সব ঝক্কি সামলেও একদম নিজের একটা পরিচয় বানাতে চায়। কেউ বা বলে- “আমার অসম্পূর্ণ কাজ, না পাওয়া, বিলীন হওয়া স্বপ্ন আমার সন্তানকে দিয়ে বাস্তবায়িত করব।”

শ্রীময়ী’ ধারাবাহিকের শ্রীময়ী হল খাঁটি গৃহবধূ। ঘরকন্নার কাজটুকুই তার সম্বল। সেই জায়গায় সে সুপার। সে ইংরেজি বুলি ছাড়তে পারে না, আদবকায়দায় পটু নয়, নিজেকে আজকের মতো করে গ্রুম করতে শেখেনি সে। আর তাই তো তার মেয়ে দিথি স্কুলের অনুষ্ঠানে মাকে নিয়ে যেতে কুণ্ঠা বোধ করে। ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে গিয়ে মা কী ভাবে সকলের সঙ্গে কথা বলবে সেটা ভেবেই সে মাকে সঙ্গে না নিয়ে বাবার সহকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে স্কুলে যায়। শ্রীময়ীর বড় ছেলে অঙ্কুশ পেশায় ডাক্তার, ছোট ছেলে প্রত্যুষ গ্র্যাজুয়েট। সে এখন চাকরি খুঁজছে। শ্রীময়ীর স্বামী থেকে শুরু করে শ্বশুর, শাশুড়ি, স্বামীর সহকর্মী সকলেই তাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে সবসময়। একমাত্র ছোট ছেলে প্রত্যুষ মাকে বোঝে। সংসারে শ্রীময়ী সকলের কথা নিঃস্বার্থে ভাবে। তার রান্না চেটেপুটে খায় সকলে। ওদিকে চা দিতে সময়ের থেকে এক মিনিট এদিক ওদিক হলেই শ্বশুরের কাছে কথা শুনতে হয় তাকে। পাটভাঙা কাপড় পরলেও শাশুড়ির বাঁকা নজরের শিকার হতে হয় শ্রীময়ীকে। শ্রীময়ী কোনওদিন ভাবেনি নিজের রান্নার গুণটিকে কাজে লাগিয়েও সে তার নিজের একটা পরিচয় গড়তে পারে। এরকম কত না শ্রীময়ী ছড়িয়ে আছে চারদিকে। তাঁদের উদ্দেশ্যে চ্যানেল এবং লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের বার্তা নিজে পাল্টালেই সব পাল্টাবে’। শ্রীময়ী কি পাল্টাবে কখনও? সে কি স্বামীর পরিচয় ছেড়ে বেরোতে পারবে কখনও? সময় বলবে। ধারাবাহিকের প্রতি পর্বে থাকবে সেই প্রশ্নেরই উত্তর।

সাংবাদিক সম্মেলনে এসে শ্রীময়ী অর্থাৎ ইন্দ্রাণী হালদার জানান- “সব শ্রীময়ীদের বলব, আপনাদের জায়গায় আপনারাই সেরা। ঘরকন্নার কাজ করা অত সহজ নয়। গুছিয়ে সব কাজ করে অন্যের মন জয় করার মতো কঠিন কাজ আর কী হতে পারে। পাশাপাশি যারা ঘরের কাজ ও বাইরের কাজ দুদিকই সমান তালে চালান তাঁদের তো স্যালুট জানাতে হয়। চাকুরিক্ষেত্রে তবু প্রশংসা কিংবা মাসের শেষে বেতনটুকু মেলে কাজের সম্মান বা পারিশ্রমিক যাই বলি না কেন। কিন্তু শুধুমাত্র ঘরের কাজে না মিলবে প্রশংসা না মিলবে বেতন। এই সব কিছু জেনেও আমরা আমাদের ছন্দে নিজেদের কাজ করে চলি। আসলে আমরা শ্রীময়ী, আমরা সব পারি।

শ্রীময়ীর স্বামীর চরিত্রে দেখা যাবে সুদীপ মুখোপাধ্যায়কে। এ ছাড়াও রয়েছেন চিত্রা সেন, সপ্তর্ষি মৌলিক, অরাত্রিকা, ঊষসী চক্রবর্তী সহ আরও অনেকে।

ম্যাজিক মোমেন্টস মোশন পিকচার্স প্রাইভেট লিমিটেড’-এর ব্যানারে আসছে এই ধারাবাহিক। ১০ জুন থেকে প্রতিদিন সন্ধে ৭ টায় সম্প্রচারিত হবে শ্রীময়ী’।  

 

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...