বড় ও ছোট পরদায় বারবারই ঘুরে ফিরে এসেছে কখনও ক্রিকেট, কখনও ফুটবল, কখনও ব্যাডমিন্টন, কখনও বা সাঁতার। মোদ্দাকথা, সিনেমা-সিরিয়ালে খেলাধুলোর একটা বড় জায়গা রয়েছে বরাবরই। কারণ খেলা ভালবাসেন না এমন মানুষের সংখ্যা বিরল। তাই সেই সব মানুষদের মন ছুঁতে অনেক পরিচালকই তাঁদের নানা কাজের ভিতরে খেলাকেও জায়গা দেন। এক লহমায় যে সব ছবিগুলির নাম মনে পড়ে সেগুলির মধ্যে—বাংলাতে রয়েছে মোহনবাগানের মেয়ে, ভোলা, ধন্যি মেয়ে, প্রথম প্রেম, স্ট্রাইকার, কোনি, সপ্তপদী, সাহেব। ‘প্রথম প্রেম’ ছবিতে অভিনয়ও করেছিলে্ন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ফুটবলার চূণী গোস্বামী। ‘সপ্তপদী’ আর ‘ধন্যি মেয়ে’ ছবি দুটিতে দর্শক মহানায়ককে দেখেছেন খাঁটি ফুটবলপ্রেমী হিসেবে। ‘ধন্যি মেয়ে’ ছবিতে তিনি স্বপ্নেও দেখেছেন যে স্বয়ং মহাদেবের সঙ্গে তিনি ফুটবল খেলছেন। আর তারপর যা ঘটেছিল তা বলাই বাহুল্য। স্ত্রী সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়কে তিনি লাথি মেরে ফেলে দিয়েছিলেন খাট থেকে। সেই ছবি তারিয়ে তারিয়ে এক বার নয় বারবার উপভোগ করেছেন দর্শক। সাম্প্রতিককালে ‘ছ-এ ছক্কা’তেও ছিল খেলার রসদ।
সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলা ছবি ‘কুসুমিতার গপ্পো’তেও মহিলা ফুটবলার কুসুমিতার ব্যক্তিগত এবং খেলোয়াড়জীবনের কথা তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে রীতিমতো ফুটবল খেলতে দেখা গিয়েছে ঊষশী রায়কে।
হিন্দি ছবির সংখ্যাও কম নয় খেলাকে কেন্দ্র করে। বেশ কয়েক বছর আগে জয়সীমাকে নিয়ে তৈরি হয়েছিল ‘ইশারা’। এ ছারাও মেরি কম, সচিন তেন্দুলকর, এম এস ধোনি, ভাগ মিলখা ভাগ, চক দে ইন্ডিয়া। এমনকী লগান ছবিতেও ছিল ইংরেজ বনাম ভারতীয়দের মধ্যে টানটান উত্তেজনার ক্রিকেট ম্যাচ। ‘কভি খুশি কভি গম’ ছবির শুরুয়াতে হৃত্বিক রোশনকে ক্রিকেট খেলতে দেখেছেন দর্শক। যেখানে ভুবন অর্থাৎ আমির খান নজর কেড়েছেন তাঁর ব্যাটিং ও বোলিং-এ। তৈরি হচ্ছে আরও দুটি হিন্দি ছবি। বাঙালি পরিচালক সুশান্ত দাস বানাচ্ছেন ক্যুইন অফ ইন্ডিয়ান ক্রিকেট ঝুলন গোস্বামীর বায়োপিক। ছবির নাম ‘চাকদা এক্সপ্রেস’। ঝুলনের ছোটবেলা থেকে বড় বেলা, আজকের ক্যুইন অফ ইন্ডিয়ান ক্রিকেট হয়ে ওঠার গল্প বলা হবে এই ছবিতে। আবার সৈয়দ আব্দুল করিমের বায়োপিকে সৈয়দ আব্দুল করিমের চরিত্রে অভিনয় করছেন অজয় দেবগন। বাংলাতেও ফুটবল নিয়ে ছবি বানাচ্ছেন পরিচালক- অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। নাম ‘খেলেছি আজগুবি’। ইতিমধ্যেই শুটিঙয়ের কাজ অনেক খানি এগিয়ে ফেলেছেন তিনি। এরকমই আনাচা কানাচে লুকিয়ে রয়েছে খেলাকে কেন্দ্র করে আরও কত ছবি।
শুধু কি ছবি? ধারাবাহিকেও খেলার ভূমিকা কম নয়। ‘এই ঘর এই সংসার’ ধারাবাহিকে খেলোয়াড় হতে চেয়েছিল মারাদোনা। একইভাবে এই মুহূর্তে জি বাংলায় রমরমিয়ে চলছে ধারাবাহিক ‘জয়ী’। জয়ীও ফুটবলার। মামার অনুপ্রেরণায় সে গ্রামের মাঠে একের পর এক ফুটবল ম্যাচ খেলেছে ছেলে সেজে। গোঁফ লাগিয়ে, মাথায় উইগ পরে সে হয়ে ওঠে জয়। আর এই নামেই সে ধারাবাহিকের শুরুতে মামার দলকে জিতিয়েছে একাধিকবার। এরপর কলকাতা শহরে বিয়ে হয়ে এসে সে যোগ দেয় মহিলা ফুটবল দলে। বাকিটা জানেন দর্শক। একইভাবে সান বাংলা চ্যানেলে চলছে ধারাবাহিক ‘সাগরিকা’। সেখানে এক সাধারণ মেয়ের নামি সাঁতারু হয়ে ওঠার জার্নি শুরু হয়ে গিয়েছে। কালারস চ্যানেলে আসছে ‘কণক কাঁকন’। সেখানেও এক মহিলা অ্যাথলেটিকের গল্প বলা হবে বলে জানা গিয়েছে।
এ ভাবেই বড় ও ছোট পরদায় বারবার উঠে এসেছে খেলাধুলোর কথা, যা প্রতিবারই নজর কেড়েছে দর্শকের।
মহানায়ক উত্তমকুমার একটা কথা বলতেন—“আমরা আসলে সকলেই খেলোয়াড়। যে যার নিজের ক্ষেত্রে আমরা প্রতিনিয়ত খেলি। কেউ মাঠে, কেউ ক্যামেরার সামনে কেউ বা সংসারে। আসলে আমরা প্রত্যেকেই স্পোর্টস ম্যান। আর স্পোর্টস ম্যান মানেই জেন্টলম্যান।” খাঁটি মোহনবাগানি ছিলেন তিনি। নিয়মিত মাঠে গিয়ে খেলা দেখতেন।
অভিনেতাদের মধ্যে খেলাধুলো ঘিরে উন্মাদনা কম নয়। ভানু বন্দোপাধ্যায় থেকে শুরু করে বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়, প্রসেনজিত চট্টোপাধ্যায়, চিরঞ্জিত চক্রবর্তী, জয়জিত বন্দ্যোপাধ্যায়, শুভাশিস মুখোপাধ্যায়, জগন্নাথ বসু, বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়, পল্লবী চট্টোপাধ্যায় সকলের মধ্যেই রয়েছে খেলা ঘিরে দারুণ উন্মাদনা। ক্রিকেট বা ফুটবল বিশ্বকাপ এলে এঁদের মধ্যে অনেকেই কাজ থেকে ছুটিও নিয়ে নিতেন বা আজও নেন। খেলা দেখার পাশাপাশি অনেকে মেতেও ওঠেন পাড়া ফুটবল বা পাড়া ক্রিকেটে। তাই মহানায়কের বক্তব্যের রেশ টেনেই বলতে হয় আমরা আসলে সকলেই খেলোয়াড়। যে যার নিজের ক্ষেত্রে আমরা নিজেরাই সেরা।
খেলা ছাড়া কি জীবন চলে?
আট থেকে আশির মনে খেলা যে জায়গায় আগে ছিল, আজও আছে, থাকবে আগামী দিনেও। আর তাই এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে আগামী দিনেও বানানো হবে একের পর এক ছবি এবং ধারাবাহিক।