বঙ্গভূমির শক্তিপীঠ

সতীপীঠ বা শক্তিপীঠ এই শব্দদুটি শোনেননি হিন্দুধর্মের মানুষদের মধ্যে এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না কারণ এই সতীপীঠ হিন্দুদের কাছে পরম পুণ্যস্থান। কিন্তু এই সতীপীঠ কী?  কেনই বা এই পীঠস্থানগুলিকে এত পবিত্র বলে মনে করেন হিন্দুরা তা হয়তো অনেকেরই ঠিক মতো জানা নেই। চলুন প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক সতীপীঠগুলি কীভাবে সৃষ্টি হয়েছিল।

 

sati-1

 

পুরাণ অনুসারে দেবী সতী ছিলেন দক্ষ রাজার কন্যা। পিতার অমতে তিনি বিবাহ করেছিলেন মহেশ্বর শিবকে। দক্ষরাজা এর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এক যজ্ঞের আয়োজন করেন কিন্তু সেই যজ্ঞে সতী এবং তাঁর স্বামী দেবাদিদেব মহেশ্বরকে নিমন্ত্রণ করেননি। কিন্তু এই যজ্ঞে তার কন্যা সতী বিনা নিমন্ত্রণেই উপস্থিত হলেন। তাঁকে দেখে তাঁর পিতা মহাদেবের নামে অপমানজনক বহু মন্তব্য করতে থাকেন। স্বামীর অপমান সহ্য করতে না পেরে সতী যজ্ঞের আগুনে আত্মাহুতি দেন। মহাদেব সেই কথা ধ্যানে জানতে পেরে শোকে এবং ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে পড়লেন। তিনি যজ্ঞ সভায় উপস্থিত হয়ে যজ্ঞস্থল তছনছ করে ফেলে সতীর দগ্ধ দেহ কাঁধে তুলে নিয়ে শুরু করলেন তাণ্ডব নৃত্য। সেই তাণ্ডবে স্বর্গ মর্ত্য পাতাল এই তিন ভুবন ধ্বংস হওয়ার উপক্রম হল। তখন সব দেবতারা ভগবান বিষ্ণুর কাছে এসে প্রার্থনা করলেন যেন নারায়ণ তাদের এই বিপদ থেকে উদ্ধার করেন। সব জেনে নারায়ণ তাঁর সুদর্শন চক্র দিয়ে একান্ন খণ্ডে বিভক্ত করে দিলেন দেবী সতীর দেহকে। এরপর মহাদেব শান্ত হয়ে ধ্যানে মগ্ন হয়ে পড়লেন। কিন্তু দেবীর শরীরের একান্নটি অংশ যে জায়গাগুলোতে পড়েছিল সেই একান্নটি স্থান সতীপীঠ বা শক্তিপীঠরূপে পরিচিতি লাভ করল। এই পীঠস্থানগুলো হিন্দুদের কাছে অতি পবিত্র তীর্থস্থান। ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এই একান্ন পীঠ।

sati-2

এই গেল একান্ন সতীপীঠের ছোট ইতিহাস। এই সিরিজে পশ্চিমবঙ্গের সতীপীঠগুলি নিয়ে আমরা আলোচনা করব। বাংলায় মোট তেরোটি সতীপীঠ রয়েছে, মতান্তরে চৌদ্দটি। (১) সতীপীঠ কালিঘাট, কলকাতা (২) সতীপীঠ রত্নাবলী, হুগলি (৩) সতীপীঠ ত্রিস্রোতা, জলপাইগুড়ি (৪) সতীপীঠ বর্গভীমা, তমলুক (৫) সতীপীঠ ফুল্লরা, লাভপুর, বীরভূম  (৬) সতীপীঠ যোগাদ্যা, ক্ষীরগ্ৰাম, পূর্ব বর্ধমান (৭) সতীপীঠ উজানী, কোগ্ৰাম, পূর্ব বর্ধমান (৮) সতীপীঠ কিরীটেশ্বরী, আজিমগঞ্জ, মুর্শিদাবাদ, (৯) সতীপীঠ নন্দিকেশ্বরী, সাঁইথিয়া, বীরভূম (১০) সতীপীঠ বাহুলা, কেতুগ্ৰাম, পূর্ব বর্ধমান, (১১) সতীপীঠ নলাটেশ্বরী, নলহাটি, বীরভূম (১২) সতীপীঠ জয়ন্তী, আলিপুরদুয়ার (১৩) সতীপীঠ বক্রেশ্বর, বীরভূম এবং (১৪) সতীপীঠ কঙ্কালীতলা, বীরভূম – এই চৌদ্দটি সতীপীঠে রয়েছে দেবী দুর্গার বিভিন্ন নামের, ভিন্ন ভিন্ন রূপের মূর্তি এবং মন্দির। এই শক্তিপীঠগুলি নিয়েই চলবে এই "বঙ্গভূমির শক্তিপীঠ" সিরিজ।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...