'ভোট কেন্দ্রের ভিতর গিয়ে, প্রিসাইডিংকে নাও শুধিয়ে
ইভিএমের সুইচ টিপে, ভোট দেওয়া ঠিক চাই
নীল বোতামের পাশে পাবে ঠিক, পছন্দের প্রার্থী ছবি ও প্রতীক।'
আসন্ন ভোটার সচেতনতা তৈরিতে, এমন কথায় সুর তুলছেন বীরভূমের বাউলেরা। বীরভূম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ভোটের প্রচারে গান রচনা করেছেন লোকসংগীত শিল্পীরা। বীরভূম জুড়ে চলছে এমন গানের পথ আসর। বাউল গান শুনতে রাস্তায় জমছে ভিড়, আর তারই সাথে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে সেখানেই বসছে ভোট সংক্রান্ত জরুরি কিছু তথ্য। বাউল গানের লোকপ্রিয়তা এবং এর অভিনব প্রয়োগ নজর করছে শ্রোতাদের।
'আমরা গণতন্ত্রীক রাষ্ট্রের ভোটার, ভোট দেব সবাই
ভোট দেওয়া তা অধিকার শুনুন ভোটার ভাই '
বীরভূম লাভপুরের প্রত্যন্ত গ্রাম ষষ্টিনগরের পথে গাইছিলেন এক বাউল। একে একে গান শুনতে জড়ো হল স্থানীয়রা। গান শোনা যখন অনেকটাই জমে উঠেছে সেই অবসরে জেলা প্রশাসকের কর্মীরা টাঙিয়ে দিচ্ছে ভোট সংক্রান্ত নানা প্রয়োজনীয় তথ্য। গান শোনার ফাঁকে শ্রোতাদের চোখ যে সেদিকে নিশ্চই চেয়ে দেখবে একটিবার সেই কথা মাথায় রেখেই এমন উদ্যোগ কর্তৃপক্ষের। জানা গেল, বোলপুর এবং রামপুরহাট মহকুমার বিস্তর এলাকা জুড়ে বাউলরা ছড়িয়ে গেছেন সুরে সুরে ইভিএম সুইচ টিপে ভোট দেওয়ার তথ্য জানাতে। গানের কথায় যেমনটা উঠে এসেছে -
'ভোটকেন্দ্রের ভিতর গিয়ে, প্রিসাইডিংকে নাও শুধিয়ে
ইভিএমের সুইচ টিপে ভোট দেওয়া ঠিক চাই '
ইভিএমের সাথে জেলার সব কটি ভোট কেন্দ্রে এবারের নির্বাচনে ব্যবহৃত হবে ভিভি প্যাট। সেটি নিয়েও গান রচনা করে ফেলেছেন বাউলেরা। ভিভি প্যাটে ভোট দেবার সময়, যাকে ভোট দেওয়া হচ্ছে তার ছবি ভেসে উঠবে মেশিনটিতে। গান শুনে নতুন তথ্য পেয়ে একজন শ্রোতা জানালেন, এবারে ভোট গ্রহণে যে অত্যাধুনিক মেশিন ব্যবহৃত হবে সে বিষয়ে তার ধারণা ছিলোনা, বাউল গানে সে সম্পর্কে জানতে পারলেন তিনি। গানটি ছিল -
'যে প্রার্থীকে ভোটটা দিলে, লাল আলো তার উঠবে জ্বলে
সঠিক কিনা দেখে নিলে, বুঝবে তুমি ভাই
ভিভি প্যাট কে সামনে রেখে, সেকেন্ডের ডিসপ্লে দেখে
নিশ্চিত হও এখন থেকে, আমরা তা জানাই'
এমন সুন্দর ভাষায় যিনি ভোট সংক্রান্ত সচেতনতার কথা রচনা করেছেন তিনি বাউল কৃষ্ণগোপাল পাল। জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের তালিকাভুক্ত শিল্পী। জানুয়ারি মাসে ভোটার দিবসে বোলপুর মহকুমা শাসকের দপ্তরে তিনি প্রথম ভিভি প্যাট দেখেছিলেন। সেখান থেকেই ভিভি প্যাট নিয়ে গান লেখার কথা মাথায় আসে তাঁর। তাঁর গানের কথা অনুমোদন পেয়েছে জেলা নির্বাচন দপ্তর থেকে কেন্দ্রীয় দপ্তরেও। বাউল কৃষ্ণগোপালের কথাতেই অন্য বাউলরা ভোট সচেতনতা বাড়াতে গেয়ে চলেছেন বীরভূমের পথে। গানের সুর যে অন্যান্য প্রচার মাধ্যম কে ছাপিয়ে যাবে সে কথা ভেবেই বাউল শিল্পীদের ভোট দেবার প্রয়জনীয় তথ্য প্রচারে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন, বোলপুর মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক অরিত্র চক্ৰবর্তী। এটাই হল, গীত-বাদ্যে বীরভূমের ভোট আয়োজন।